গুণী সাহিত্য সম্পাদক

জিন্নাহ চৌধুরী | শুক্রবার , ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৫:০৫ পূর্বাহ্ণ

দৈনিক আজাদীর সাহিত্যপ্রবাহকে নতুন আবেগে তরঙ্গায়িত করেছেন কবি অরুণ দাশগুপ্ত। আধুনিক বাংলা কবিতার নিজস্বতা চিহ্নিত কণ্ঠস্বর। নব্বই দশকে দৈনিক আজাদী এবং অরুণ দাশগুপ্তকে কেন্দ্র করে আমাদের সাহিত্যের মনন ও পরিশীলতার সূচনা। সাহিত্যের সূক্ষ্ম বিচারক, বিশ্লেষক। লেখা নির্বাচন, লেখক চেনার বহুশ্রুত অভিজ্ঞ জহুরী। লেখক নির্বাচনে নির্মোহ। তিনি আবেগকে প্রশ্রয় দেননি কখনো।
সৃজনশীল সাহিত্য চর্চার যে মেধা আবশ্যক, বাক্য গঠনে যে পরিশ্রম, অধ্যবসায় প্রয়োজন আমার মত তরুণ লেখকদের তা অরুণ দাশগুপ্তের কাছেই শেখা। এক অর্থে সাহিত্যের শিক্ষক, পথপ্রদর্শকও।
গ্রহণ-বর্জনের সংস্কারমুক্ত ক্ষমতা ছিল তাঁর। বহু প্রথিতযশা লেখকের লেখাও প্রকাশযোগ্য মনে না করলে ছাপাননি তিনি। তিনি ছিলেন অনুসন্ধানী, সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে সমবেদী ও সংবেদনশীল মানুষ। অনবদ্য গুণের জন্য সাহিত্য সম্পাদনার ইতিহাসে তাঁর তুলনা তিনি নিজেই।
অরুণ দাকে খুব কাছ থেকে দেখা ও মেশার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। তাঁকে বন্ধু, শিক্ষক, বাবা হিসেবেও দেখেছি। তিনি থাকতেন এনায়েত বাজার মহিলা কলেজের পাশে বর্তমানে ‘কল্যাণী’তে। আমার বাসা তখন হেমসেন লেন। দীর্ঘ ৩৬ বছরের বাহিত সময়ের আছে অনেক মুহূর্তের সুখস্মৃতি। রায় মোহন নামের এক দারোয়ান ছিলো ঐ বাড়িতে। সন্ধ্যার পর ডাক্তার কামাল এ খান, ড. রশীদ আল ফারুকী, ড. অনুপম সেন, কবি হোসাইন কবির, নাজিমুদ্দিন শ্যামল, আজাদ বুলবুল, মাহবুব উল হক চৌধুরী বাবর, হাবিব সাখাওয়াত, তপন বড়ুয়াসহ আমরা আড্ডা দিতে যেতাম। সাহিত্যিক রাজনৈতিক সামাজিক আড্ডা একসময় ব্যক্তি পর্যায়ে যেয়ে গড়াতো। মাঝে মাঝে টুলু দাও নামতেন আমাদের গল্পে। অনেকে ভাবছেন এই সিনিয়র অধ্যাপকদের সাথে আমাদের সম্পর্ক কী। সম্পর্ক ছিলো বাংলাদেশ সাহিত্য পরিষদ। ড. ফারুকী স্যার ছিলেন সভাপতি, ড. সেন স্যার ও অরুণদা ছিলেন সহ-সভাপতি। আমরা ছিলাম সম্পাদকীয় পোস্টে। অরুণ দাশগুপ্তের ভরাট গলায় রায়মোহন বাবুকে বলতেন মিহিদানা, পরটা আর চা নিয়ে আসতে। আমরা ছিলাম এর মেহমান। আমার সাথে প্রথম পরিচয় ১৯৮৪ সালে। রশীদ আল ফারুকী স্যার নিয়ে গিয়েছিলেন অরুণদার বাসায়। গিয়ে বললেন, আমার ছাত্র কবিতা লেখে।
আমি একটা গদ্য লেখা দিলাম শিল্পী রুনা লায়লার উপর। পরের সপ্তায় লেখাটা ছাপাও হয়েছে তবে নাম এসেছে জিন্নাত চৌধুরী নামে। আমি এর সুযোগ নিয়ে একমাসের মধ্যে একটা কবিতা ছাপাতে আবদার করলাম অরুণ দার কাছে। তিনি তা প্রকাশ করলেনও। সেই থেকে আজাদীর নিয়মিত লেখক। বানান ভুল, কবিতার শব্দ পরিবর্তন করে হলেও অরুণদা আমার মতো অনেক তরুণ লেখককে কবি বানিয়েছেন। অরুণদা মাঝে মধ্যে একমাস দেড় মাসের জন্য ভারত যেতেন। তখন পাতা দেখতেন রাশেদ ভাই (রাশেদ রউফ) নয় প্রদীপ দা (প্রদীপ দেওয়ানজী)। রাশেদ ভাই বলতেন, ‘ঈদ সংখ্যায় আপনার কবিতা দিয়েছেন অরুণ দা। বলে গেছেন একটু ঠিকঠাক করে হলেও লেখাটা যেন দেই’। এই ছিলো আমাদের অরুণ দা। কবি অরুণ দাশগুপ্ত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচিন্তাশীল মেধাবী প্রাবন্ধিক
পরবর্তী নিবন্ধআমাদের দাদামণি