গরমকালে যেসব কারণে বাড়তে পারে সংক্রমণ

করোনাভাইরাস

| শনিবার , ৬ মার্চ, ২০২১ at ৫:১১ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দৈনিক শনাক্তের হার গত মাসে তিনশর ঘরে নেমে এলেও গত চার দিন ধরে তা ৬০০-এর ওপরে উঠে গেছে। আসন্ন গরমে ভাইরাসের এই প্রকোপ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৩৫ জনের মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার এই সংখ্যা ছিল ৬১৯ জন। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি শনাক্তের সংখ্যা নেমে গিয়েছিল ২৯১ জনে। ফেব্রুয়ারির শুরুতে টানা কয়েকদিন দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা তিনশজনের নিচে ছিল। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরেই সংক্রমণের হার ধীরে ধীরে বাড়তে দেখা যাচ্ছে।
কোভিড-১৯ এর টিকা চলে আসার পর স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে মানুষের শিথিলতা চলে আসায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এখনই সতর্ক না হলে টিকা আসার পরও পরিস্থিতি আবার খারাপ হতে পারে বলে তারা মনে করছেন। খবর বিবিসি বাংলার।
বাংলাদেশে প্রথম করোনার সংক্রমণ হয়েছিল গত বছরের ৮ মার্চ। এরপরের দুই মাস দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা তিন অংকের মধ্যে থাকলেও সেটা বাড়তে বাড়তে জুলাই মাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। ২ জুলাই সর্বোচ্চ ৪০১৯ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। ধারণা করা হচ্ছিল শীতকালে ভাইরাসের প্রকোপ আরও বাড়বে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় উল্টো। নভেম্বরে সংক্রমণের গ্রাফ কিছুটা উপরে উঠলেও ডিসেম্বর থেকে সেটা পড়তে থাকে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সংক্রমণের হার তিন শতাংশের নিচে নেমে আসে। দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ছিল তিনশজনেরও কম।
ভাইরাসের নতুন ধরন প্রবেশ করেছে কিনা জানতে হবে : গত এক সপ্তাহ ধরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় ভাইরাসের নতুন ইউকে ধরনটি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে কিনা সেটা পরীক্ষা করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বেনজির আহমেদ।
বিশ্বে করোনাভাইরাসের যেসব ধরন দেখা গেছে তার মধ্যে ব্রিটেন বা ইউকে ভেরিয়েন্ট বেশ দ্রুত ছড়ায়। তার ধারণা বাংলাদেশে ইউকে ভেরিয়েন্ট ঢুকে পড়েছে। যেহেতু ব্রিটেনে থাকা বহু প্রবাসী বাংলাদেশি সমপ্রতি দেশে এসেছেন। তাদের টেস্টিং বা কোয়ারেন্টাইন ঠিকমতো হয়নি। তাদের মাধ্যমে নতুন ভেরিয়েন্ট এসে পড়লে সংক্রমণ বাড়তে থাকবে বলে উদ্বেগ জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে এই ভেরিয়েন্টটা আদৌ প্রবেশ করেছে কিনা সেটা সরকারকে বের করতে হবে। তাদের দায়িত্ব হলো জিন সিকোয়েন্সিং করে সেটা নিশ্চিত হওয়া এবং সঠিক তথ্যটি চেপে না রেখে তাদের উচিত হবে মানুষকে জানানো।
গরমকালেই সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা : বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা শীতকালে নয়, বরং গরমকালেই বেশি থাকে বলে জানিয়েছেন বেনজির আহমেদ। করোনা ও ইনফ্লুয়েঞ্জার বৈশিষ্ট্য যেহেতু এক রকম তাই এবারের গরমেও ভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।
অন্যদিকে ইউরোপের দেশগুলোয় শীতকালে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার পেছনে হিটার ব্যবহারকে বড় কারণ মনে করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে শীতকালে যে তাপমাত্রা পড়ে, সেখানে হিটার ব্যবহারের তেমন প্রয়োজন হয় না। তবে গরমকালে এখানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র ও ছোট ঘরে ফ্যান চালানোর প্রবণতা রয়েছে।
এসব ক্ষেত্রে একই বাতাস সঞ্চালিত হওয়ায় বাংলাদেশে গরমকালেই সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মোস্তাক হোসেন। তিনি বলেন, গরমকালে অনেকেই বাসায় বা কর্মস্থলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র ব্যবহার করে, ছোট ঘরে বৈদ্যুতিক পাখা ব্যবহার করে। দুটি ক্ষেত্রেই একই বাতাস পুরো জায়গা জুড়ে বারবার সঞ্চালিত হওয়ায় ওই ঘরে কেউ করোনাভাইরাস পজিটিভ থাকলেও অন্যদেরও সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই আমাদের দেশে গরমকালেই সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা বেশি। কারণ আমাদের অল্প জায়গায় বেশি মানুষ থাকে, সবাই শীতলীকরণযন্ত্র ব্যবহার করে।
টিকা এলেও নিরাপদ নয় কেউ : জানুয়ারি থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে আসা, বিশেষ করে দেশব্যাপী কোভিড-১৯ এর টিকা দেয়া শুরু হওয়ায় জনমনে স্বস্তি দেখা দেয়। সেই জায়গা থেকে মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে শিথিলতা দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা।
তিনি জানান, মানুষ এবার ছুটির দিনগুলোয় বিভিন্ন পর্যটন স্থানে ভিড় করেছে। সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সভা-সমাবেশে যেতে শুরু করেছে। সেখানে সামাজিক দূরত্ব তো দূরের কথা, অনেকে মাস্ক ব্যবহার না করছেন না। এসব কারণে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে, যা সামনে আরও বাড়বে বলে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তিনি জানান, করোনাভাইরাসের টিকা এলেও দেশের বড় সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে দুটি ডোজ টিকা না দেয়া পর্যন্ত ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।
বাংলাদেশে মূলত ব্রিটেনের অঙফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেয়া হচ্ছে। যেটার প্রথম ডোজ দেয়ার চার থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ দিতে হয়। না হলে পুরো টিকা অপচয় হয়ে যায়। বাংলাদেশে এখনও কাউকেই দুই ডোজ টিকা দেয়া হয়নি। এক ডোজ টিকা কখনও নিশ্চয়তা দেয় না যে সংক্রমণ থেকে তিনি সম্পূর্ণ নিরাপদ। দুই ডোজ টিকা দেয়ার ১৪ দিন পরে প্রতিরোধ ক্ষমতা সর্বোচ্চ থাকে। তারপরও দেশের বেশি সংখ্যক মানুষকে দুই ডোজ টিকার আওতায় না আনা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এক ডোজ টিকা কাউকে করোনাভাইরাস থেকে নিরাপদ করে না।
করণীয় : এমন পরিস্থিতিতে মাস্ক পরা, ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এবং তিন ফুট সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, সেইসঙ্গে দ্রুত করোনাভাইরাস পরীক্ষা, কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশন মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হলগুলো খুলে দিলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে এখন থেকেই কড়াকড়ি না করলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনারকেলের কেন এত দাম
পরবর্তী নিবন্ধরয়েছে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব, মনগড়া দলীয় কর্মকাণ্ড তৃণমূলে