রয়েছে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব, মনগড়া দলীয় কর্মকাণ্ড তৃণমূলে

সমন্বয়হীন বিএনপির ওয়ার্ড ও থানা কমিটি

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৬ মার্চ, ২০২১ at ৫:১২ পূর্বাহ্ণ

নগরে বিএনপি’র বেশিরভাগ ওয়ার্ড কমিটির সঙ্গে সমন্বয় নাই থানা কমিটির। আবার প্রায় প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ডে রয়েছে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব। কোনো কোনো ওয়ার্ডে নেতৃত্বের প্রতি আছে তৃণমূলের অনাস্থা। ওয়ার্ড ও থানা কমিটি গঠন প্রক্রিয়া নিয়েও আছে নানা অভিযোগ। এতে সাংগঠনিক শৃঙ্খলায় ঘাটতি তৈরি হয়েছে। যার প্রভাবে মনগড়াভাবে দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে তৃণমূলে।
দলের সাংগঠনিক অবস্থা জানতে গঠিত ‘পর্যালোচনা কমিটি’র প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি নগরের আহ্বায়ক, সদস্য সচিব এবং ১৩ জন যুগ্ম আহ্বায়কের সমন্বয়ে পৃথক ১৫টি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়েছিল। বেশিরভাগ কমিটি সম্প্রতি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এতে নগরের ১৫ থানা ও ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডের দুর্বল দিকগুলো তুলে ধরার পাশাপাশি নতুন কমিটি গঠনসহ নানা সুপারিশ করা হয়েছে। পর্যালোচনা কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানা গেছে। এদিকে প্রতিবেদন নিয়ে আজ শনিবার লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে পর্যালোচনা কমিটির নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল সভা হওয়ার কথা ছিল। যা গত রাতে স্থগিত করা হয়েছে।
একাধিক পর্যালোচনা কমিটির নেতার সাথে আলাপকালে তারা জানান, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর সম্মেলনের মাধ্যমে ৩৯টি ওয়ার্ডের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। একইদিন ৩১ ওয়ার্ডে নতুন আহ্বায়ক ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের আগস্ট থেকে থানা ও ওয়ার্ড কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়। যা ২৮ আগস্ট কেন্দ্রের নির্দেশে স্থগিত হয়। তবে তার আগে পাঁচটি থানা ও ২৮টি ওয়ার্ডে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়। গঠিত থানা ও ওয়ার্ড কমিটিগুলো কাউন্সিলের মাধ্যমে হয়নি। এতে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে তৃণমূলে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পর্যালোচনা কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নগর বিএনপি’র একাধিক যুগ্ম আহ্বায়ক দৈনিক আজাদীকে জানান, ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি গঠনে অনিয়ম হয়েছে। থানায়ও মনগড়াভাবে হয়েছে। গঠনতন্ত্র অনুসরণ করা হয়নি কোনো ক্ষেত্রে। কমিটি গঠনে নেয়া হয়নি তৃণমূলের মতামত। বিষয়গুলো প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ওয়ার্ডগুলোতে গ্রুপিং অন্যতম প্রধান সমস্যা। আছে সাংগঠনিক ও নেতৃত্বের দুর্বলতাও। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক মামলা ও পুলিশি হয়রানির কারণেও সাংগঠনিকভাবে কর্মীরা বিপর্যন্ত। সাংগঠনিক দুর্বলতার এটাও কারণ।
এদিকে পর্যালোচনা কমিটির দায়িত্ব পাওয়া বিএনপি নেতারা ওয়ার্ড পর্যায়ে সভা করেছেন। সেখানে গত সিটি কর্পোরেশন নির্র্বাচনে দলের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষে অনেক নেতাকর্মী কাজ করেনি বলেও অভিযোগ ওঠে। পদে থেকেও অনেকে বিগত দিনে দল ঘোষিত মিছিল, সভা-সমাবেশ সক্রিয় ছিল না। তাদের বিষয়ে সর্তক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, সাংগঠনিক দুবলর্তা দূর করতে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- থানা ও ওয়ার্ডের বিদ্যমান কমিটি বিলুপ্ত করে কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্ব বাছাই করা। থানা ও ওয়ার্ডের সঙ্গে সমন্বয় নিশ্চিত করা। বিগত সময়ে দলের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কিংবা ‘আন্দোলন-সংগ্রামে’ যারা সক্রিয় ছিলেন, মামলার শিকার হয়েছেন তাদেরকে যেন কমিটিতে মূল্যায়ন করা হয়।
এ বিষয়ে নগর বিএনপি’র সদস্য সচিব এবং পাহাড়তলী থানা ও আওতাভুক্ত ওয়ার্ডের জন্য গঠিত পর্যালোচনা কমিটির প্রধান আবুল হাশেম বক্কর আজাদীকে বলেন, বর্তমান কমিটির কি অবস্থা, ভবিষ্যতে কমিটি কীভাবে করা যায় সেগুলো তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। আন্দোলন-সংগ্রামে যারা ভূমিকা রেখেছে তাদের বিষযগুলোও আছে। কিছু কিছু থানা ও ওয়ার্ডের ত্রুটির কথাও আছে। সেগুলোর বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে। আমরা শীঘ্রই বিদ্যমান কমিটি ভেঙে দিয়ে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি করে দিব।
নগর বিএনপি’র আহ্বায়ক এবং খুলশী থানা ও আওতাভুক্ত ওয়ার্ডের জন্য গঠিত পর্যালোচনা কমিটির প্রধান ডা. শাহাদত হোসেন আজাদীকে বলেন, বেশিরভাগ পর্যালোচনা প্রতিবেদন পেয়েছি। দুয়েকটি বাকি আছে। আজকালের মধ্যে তারাও দিয়ে দিবেন। প্রতিবেদনে অনেকগুলো বিষয় রয়েছে, সেগুলো নিয়ে আমরা ফলোআপ মিটিং করবো। তবে আমাদের মূল লক্ষ্য নতুন নেতৃত্ব তৈরি করা। সেজন্য সদস্য সংগ্রহ অভিযান চলবে। তৃণমূল থেকে নেতৃত্ব তুলে আনবো। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সম্মেলন করে কমিটি গঠন করা হবে। যাতে কেউ বলতে না পারে অমুক বা তমুকের ইচ্ছেমত কমিটি হয়েছে।
পর্যালোচনা কমিটির প্রতিবেদনে ওঠে আসা সাংগঠনিক ত্রুটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু কিছু আছে। তবে এটাও সত্য স্বাভাবিক পরিবেশে কাজ করতে পারলে একরকম হতো। এখন তো সেই পরিবেশ নাই। মামলা-হামলা, নির্যাতন-হয়রানির জন্য তো স্বাভাবিকভাবে কিছু করা যাচ্ছে না। কাজেই এখানে একটু সমস্যা তো হবেই। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে দলের জন্য যাদের ত্যাগ আছে তাদের মূল্যায়ন করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত ২৩ ডিসেম্বর ডা. শাহাদত হোসেনকে আহ্বায়ক ও আবুল হাশেম বক্করকে সদস্য সচিব করে ৩৯ সদস্যের নগর কমিটি করা হয়। গত ২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর নয়াপল্টনস্থ বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নগরের আওতাধীন থানা ও সাংগঠনিক ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। একইসঙ্গে দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে সাংগঠনিক কমিটিগুলো গঠনের নির্দেশনা দেন তিনি। এর প্রেক্ষিতে পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগরমকালে যেসব কারণে বাড়তে পারে সংক্রমণ
পরবর্তী নিবন্ধনগরে ২৪ ঘণ্টায় তিনজনের আত্মহত্যা