গণপূর্তের ৪৭৭ কোটি টাকার আবাসন প্রকল্পে ধীরগতি

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২৭ নভেম্বর, ২০২১ at ৭:২৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম শহরের ১৫টি পরিত্যক্ত বাড়িতে সরকারি আবাসিক ফ্ল্যাট ও ডরমেটরি নির্মাণ প্রকল্প চলছে ঢিমেতালে। তিন বছর মেয়াদ শেষে আরও তিন বছর সময় বাড়লেও ৬ বাড়িতে এখনো কাজই শুরু করতে পারেনি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত মেনটেনেন্স বিভাগ। অবৈধ দখলসহ নানা বিপত্তিতে ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য প্রায় ৪৭৭ কোটি টাকায় নির্মাণাধীন ৫৭৬টি ফ্ল্যাট ও ডরমেটরি নির্মাণ কাজ। গণপূর্ত রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, পরিত্যক্ত বাড়িগুলোর কিছু সরকারি সংস্থা ব্যবহার করছে, কিছু অবৈধ দখলে আছে। সবগুলো বাড়ি এখনো খালি করা সম্ভব না হওয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়ন ধীরে হচ্ছে। তাছাড়া করোনাকালে পর্যাপ্ত বরাদ্দ না পাওয়ার কারণেও ঠিকাদাররা কাজ এগিয়ে নিতে অনীহা দেখিয়েছেন।
সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম শহরের পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকা, নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটি, কাতালগঞ্জ, ও আর নিজাম রোড, জাকির হোসেন রোড এবং সার্সন রোডে গণপূর্ত বিভাগের ১৫টি পরিত্যক্ত বাড়িতে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ফ্ল্যাট ও ডরমেটরি নির্মাণ করছে গণপূর্ত অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগ। বাড়িগুলোর ১৪টিতে সরকারি গেজেটেড কর্মকর্তাদের জন্য ৫৭৬টি আবাসিক ফ্ল্যাট ও একটি বাড়িতে ৬৪টি ডরমেটরি নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ৪৭৬ কোটি ৬০ লাখ ৯৫ হাজার টাকার প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ৪ এপ্রিল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন হয়। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদকাল নির্ধারিত থাকলেও বর্তমানে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বর্ধিত করা হয়েছে। প্রকল্পে ১৫শ’ বর্গফুটের ৪১৪টি, ১২৫০ বর্গফুটের ১৬২টি ফ্ল্যাট এবং ২৫০ বর্গফুটের ৬৪টি ডরমেটরি নির্মাণ করা হবে। চট্টগ্রাম গণপূর্ত রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৫টি বাড়ির মধ্যে ইতোমধ্যে পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার ১৫, ৫২, ৬৬, ৮৪, ৯৫, ১১৪, ১১৫, ১২৭নং এবং কাতালগঞ্জের ৩৮নং বাড়িতে প্রকল্পের কাজ চলমান থাকলেও ওআর নিজাম রোডের ৯৩৮নং, পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার ৩২, ৪৯, নাসিরাবাদ আবাসিক এলাকার ২২/(বি)১নং, জাকির হোসেন রোডের ১০৩৩ এবং সার্সন রোডের ৩নং বাড়িতে কাজ শুরু করা যায়নি। ৯ বাড়িতে চলমান কাজের মধ্যে ২২ থেকে ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে গণপূর্ত বিভাগ। সরেজমিনে জানা গেছে, ১৫টি বাড়ির মধ্যে ৯টি বাড়ি খালি করার পর এসব বাড়িতে ইতোমধ্যে নতুন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। অন্যদিকে অবশিষ্ট ৬ বাড়ির মধ্যে ওআর নিজাম রোডের ৯৩৮নং বাড়িটির দখলে রয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ। তবে ওই বাড়িটি বর্তমানে খালি করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে গণপূর্ত মেনটেনেন্স বিভাগ। সার্সন রোডের ৩নং বাড়িটি নিয়ে একটি কোম্পানির সাথে রিট মামলা চলমান রয়েছে। পাঁচলাইশের ৩২নং বাড়িটিতে বর্তমানে সরকারি
একটি বাহিনীর অফিস রয়েছে। বাড়িটির দখল হস্তান্তরের জন্য ২০২০ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দিয়েছে গণপূর্ত বিভাগ।
জাকির হোসেন রোডের ১০৩৩নং বাড়িটি অবৈধ দখলে রয়েছে এবং বর্তমানে খালি করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে গণপূর্ত মেনটেনেন্স বিভাগ। একইভাবে পাঁচলাইশের ৪৯নং বাড়িটি পাবলিক সার্ভিস কমিশনের আঞ্চলিক অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিকল্প কোনো বরাদ্দ না হওয়ায় বাড়িটি খালি করার দরপত্রও আহ্বান করতে পারেনি প্রকল্প বাস্তবায়নকারীরা। অন্যদিকে নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটির ২২/বি-১ বাড়িটি দখলদারকে উচ্ছেদের জন্য ২০১৯ সালের ৮ মে তারিখ নির্ধারিত করলেও পুলিশ ফোর্স না পাওয়ার অযুহাতে এখনো দখলে নিতে পারিনি গণপূর্ত বিভাগ। পরবর্তীতে কেন উচ্ছেদে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি সে বিষয়ে কোনো সদুত্তর নেই প্রকল্প গণপূর্ত মেনটেনেন্স বিভাগের।
এ বিষয়ে কথা বলতে চট্টগ্রাম গণপূর্ত রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সৌমেন মল্লিককে বেশ কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে প্রকল্প পরিচালক গণপূর্ত মেনটেনেন্স সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মনিরুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘১৫ বাড়ি প্রকল্পের মধ্যে ৯টি বাড়িতে কাজ চলমান রয়েছে। কয়েকটি বাড়ির কাজ একেবারে শেষ পর্যায়ে। শীঘ্রই এসব বাড়ি হস্তান্তর করা সম্ভব হবে।’ কাজ শুরু করতে না পারা ৬ বাড়ির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ বাড়িগুলো সরকারি বিভিন্ন দপ্তর, কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দখলে আছে। কয়েকটিতে দখলদার উচ্ছেদে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি আগামী এক বছরের মধ্যে প্রকল্পে উল্লেখ্যযোগ্য অগ্রগতি হবে।’ এ কর্মকর্তা বলেন, গত দুই বছর করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণেও প্রকল্পে কাজ বিঘ্নিত হয়েছে। তাছাড়া গত বছরগুলোতে প্রয়োজনীয় ফান্ড না পাওয়ার কারণে ঠিকাদারদের মধ্যেও অস্বস্তি ছিল। তবে এখন ফান্ডের জটিলতা নেই বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘নির্বাচনে না যাওয়ার চিন্তা করছে জাতীয় পার্টি’
পরবর্তী নিবন্ধরোহিঙ্গাদের ভেতর থেকে জঙ্গির উত্থান হতে পারে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী