খুরুশকুলে আধুনিক শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র

বছরে উৎপাদিত হবে ১৪ হাজার মেট্রিক টন, কর্মসংস্থান ১০ হাজার লোকের

মহেশখালী প্রতিনিধি | শনিবার , ৭ নভেম্বর, ২০২০ at ৫:২১ পূর্বাহ্ণ

আধুনিক পদ্ধতিতে শুঁটকি উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের সবচেয়ে বড় শুঁটকি জোনখ্যাত কক্সবাজার অঞ্চলে স্থাপন করতে যাচ্ছে আধুনিক শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প অঞ্চলটি। এ উপলক্ষে ‘কক্সবাজার জেলায় শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প’ শিরোনামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি সমপ্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন পেয়েছে বলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২শ কোটি টাকা।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে আধুনিক পদ্ধতিতে বছরে প্রায় ১৪ হাজার মেট্রিক টন মানসম্পন্ন শুঁটকি উৎপাদন করা সম্ভব হবে। মাছের সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ ব্যবস্থাপনার জন্য কক্সবাজারের খুরুশকুলেই প্রস্তাবিত স্বয়ংসম্পূর্ণ শুঁটকি প্রক্রিয়া কেন্দ্রটি স্থাপন করা হবে। এতে অভ্যন্তরীণ বাজারে মানসম্পন্ন শুঁটকির সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের শুঁটকির প্রবেশাধিকারও নিশ্চিত করা হবে। সর্বোপরি প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কক্সবাজার উপকূলের ৪ হাজার ৬০৯টি জেলে পরিবারের অন্তত ১০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান নিশ্চিত হবে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বঙ্গোপসাগর থেকে আহরিত মাছের অপচয় রোধ, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং জেলে পরিবারগুলোর কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে সরকার এ প্রকল্পটির উদ্যোগ নিয়েছে।
সূত্র জানায়, কক্সবাজার জেলায় শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপন প্রকল্পটি গ্রহণের ক্ষেত্রে উদ্যোগী মন্ত্রণালয় হচ্ছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন। কক্সবাজার জেলার সদর উপজেলার খুরুশকুল মৌজায় সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া ১৯৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে আধুনিক শুঁটকি প্রক্রিয়া কেন্দ্রটি স্থাপিত হবে। আগামী ২০২১ সালের জানুয়ারিতে কাজ শুরু হয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে বাস্তবায়নের কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপি-তে বরাদ্দবিহীনভাবে সংযুক্ত অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় প্রকল্পটি অন্তর্ভুক্ত নেই। তবে, আশ্রয়ণ-২ (২য় সংশোধিত) প্রকল্পের ওপর গত ১৯ জুন পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত পিইসি সভার সুপারিশ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নতুন অননুমোদিত প্রকল্পগুলোর উচ্চ অগ্রাধিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ‘ভ্যালু অ্যাডেড পণ্য শুঁটকি মাছ ও সাপ্লাই চেইন উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটির পরিবর্তে ‘কক্সবাজার জেলায় শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প কেন্দ্র স্থাপন’ প্রকল্পটি অন্তর্ভুক্ত করে একনেক অনুমোদন করেছে।
জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় ২ হাজার ৫০০ বর্গমিটার আয়তনের অবতরণ শেড নির্মাণ করা হবে। ১ হাজার ৮৬০ বর্গমিটার আয়তনের ৪ তলাবিশিষ্ট ল্যাবরেটরি, অফিস, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কাম ডরমেটরি নির্মাণ করা হবে। চার চেম্বার বিশিষ্ট ১০০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন কোল্ডস্টোরেজও বানানো হবে। মাছ অবতরণের জন্য সাগরপাড়ে ২টি ওয়ে ব্রিজ, ৩টি পন্টুন ও গ্যাংওয়ে তৈরি করা হবে। ৩৫০টি গ্রিনহাউস মেকানিক্যাল ড্রায়ার এবং ৩০টি মেকানিক্যাল ড্রায়ার স্থাপন করা হবে। প্যাকেজিং ফ্যাক্টরি স্থাপন করা হবে প্রকল্পের আওতায়। ৩৬টি শুঁটকি বিক্রয় কেন্দ্রও নির্মাণ করা হবে। ১০টি টয়লেট জোন ইটিপি, এসটিপি ও ডব্লিউটিপি, ৩টি জেনারেটরসহ ১টি বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন, ৩টি আরসিসি জেটি নির্মাণ করা হবে। এ বিষয়ে মহেশখালী-কুতুবদিয়ার আশেক উল্লাহ রফিক এমপি বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে দেশে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পাশাপাশি উদ্বৃত্ত মৎস্যজাত পণ্য রফতানি করা। এ লক্ষ্য নিয়ে সরকার দেশের অন্যতম শুঁটকি উৎপাদন অঞ্চল কক্সবাজারেই এ প্রকল্পটি স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বছরে প্রায় ১৪ হাজার মেট্রিক টন মানসম্পন্ন শুঁটকি উৎপাদন সম্ভব হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে প্রায় ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআবু ইউছুফ চৌধুরীর ইন্তেকাল
পরবর্তী নিবন্ধবাংলাদেশ সাহায্য দাতা দেশে পরিণত হয়েছে : পরিবেশ মন্ত্রী