ক্যান্সার ওয়ার্ডে যুক্ত হচ্ছে আরো ১০ শয্যা

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২০ মে, ২০২২ at ৭:৪৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ক্যান্সার (রেডিওথেরাপি) ওয়ার্ডে নতুন করে আরো ১০টি শয্যা যুক্ত হচ্ছে। বর্তমানে এই ওয়ার্ডে ৩৫টি শয্যা রয়েছে। এসব শয্যায় ১৮ জন পুরুষ এবং ১৭ জন মহিলা ক্যান্সার রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা সেবা গ্রহণের সুযোগ পান। নতুন ১০ শয্যা যুক্ত হলে ওয়ার্ডটির ইনডোরে (আন্তঃবিভাগে) শয্যা সংখ্যা ৪৫টিতে উন্নীত হবে।
এতে করে আরো দশ জন রোগী এই ওয়ার্ডে ভর্তি থেকে চিকিৎসার সুযোগ পাবেন। এ সব তথ্য নিশ্চিত করে ক্যান্সার বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সাজ্জাদ মো. ইউসুফ আজাদীকে বলেন, কয়েকদিনের মধ্যে এ সব শয্যা স্থাপনের কাজ শুরু হচ্ছে। আর স্থাপন কাজ শেষে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে নতুন এ সব শয্যায় রোগী ভর্তি শুরু করা যাবে বলে আমরা আশা করছি। ক্যান্সার ওয়ার্ডে নতুন করে দশটি শয্যা যুক্ত করতে পারাটাও কম কথা নয় বলে মনে করেন চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান। তিনি বলেন, শয্যা সংকটে অনেক রোগীকে ওয়ার্ড থেকে ফিরে যেতে হয়। এ জন্য দূর-দূরান্তের রোগীকে ভোগান্তিও পোহাতে হয়। রোগীদের ভোগান্তির বিষয়টি অনুধাবন করেই এই ওয়ার্ডে শয্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান হাসপাতাল পরিচালক। ক্যান্সার ওয়ার্ড সূত্রে জানা গেছে, ওয়ার্ডের প্রবেশ মুখের একটি কক্ষে এতদিন ধরে আউটডোর (বহিঃবিভাগ) সেবা দেয়া হচ্ছিল। সমপ্রতি আউটডোর সেবা ওয়ার্ড থেকে সরিয়ে এনসিলিয়ারি ভবনে স্থানান্তর করে আউটডোর হিসেবে ব্যবহৃত কক্ষটি খালি করা হয়েছে। এই কক্ষটিতেই নতুন দশটি শয্যা স্থাপন করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ক্যান্সার চিকিৎসায় দীর্ঘ ৩ বছরেরও বেশি সময় রেডিওথেরাপি সেবা বন্ধ ছিল চমেক হাসপাতালে। যার ফলে এই রেডিওথেরাপি সেবা নিতে রাজধানী ঢাকা যাওয়া ছাড়া গত্যন্তর ছিল না বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিশাল সংখ্যক ক্যান্সার রোগীর। তবে ২০১৮ সালের ১৩ নভেম্বর বহু প্রতীক্ষিত নতুন রেডিওথেরাপি মেশিনের আনুষ্ঠানিক সেবা চালু হয় চমেক হাসপাতালের ক্যান্সার ওয়ার্ডে। মেশিনটির আনুষ্ঠানিক সেবা চালুর মাধ্যমে প্রায় চার বছর পর পুনরায় রেডিওথেরাপি সেবা পেয়ে আসছে চট্টগ্রামের ক্যান্সার রোগীরা। অন্যদিকে, নারীদের জরায়ু ক্যান্সারের চিকিৎসায় প্রায় ৬ কোটি টাকা মূল্যের নতুন একটি ব্র্যাকি থেরাপি মেশিন পায় হাসপাতালের ক্যান্সার ওয়ার্ড। ২০১৫ সালের শেষ দিকে মেশিনটি ক্যান্সার (রেডিওথেরাপি) ওয়ার্ডে পৌঁছলেও নানা জটিলতায় সেটি চালু করা যায়নি। সব জটিলতা কাটিয়ে ২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল পরীক্ষামূলক ভাবে মেশিনটির সেবা চালু করা হয়। পরীক্ষামূলক সেবা চালুর কিছুদিনের মধ্যে মেশিনটির আনুষ্ঠানিক সেবা চালু হয়।
পুনরায় রেডিওথেরাপি সেবা এবং সম্পূর্ণ নতুন ব্রাকিথেরাপি সেবা চালুর পর থেকে রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে ক্যান্সার ওয়ার্ডে। বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে যেন ত্রাহি অবস্থায় ওয়ার্ডের চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টরা। ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা বলছেন, আগে ওয়ার্ডের আউটডোরে (বর্হিবিভাগে) দৈনিক ৫০/৬০ জন রোগী সেবা নিতেন। তবে নতুন রেডিওথেরাপি সেবা চালুর পর থেকে রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বেড়ে গেছে। দৈনিক কম হলেও ৮০ জন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী রেডিওথেরাপি সেবা পাচ্ছেন ওয়ার্ডে। আর মহিলাদের ব্র্যাকিথেরাপি সেবা দেয়া হয় সপ্তাহে দুদিন। এছাড়া সপ্তাহে ৬ দিন দেয়া হচ্ছে কেমোথেরাপি। ৭০ জনেরও বেশি রোগী প্রতিদিন আউটডোরে কেমোথেরাপি সেবা নেন। সবমিলিয়ে ওয়ার্ডের বর্হিবিভাগে বর্তমানে দৈনিক প্রায় দেড়শ রোগী সেবা গ্রহণ করেন বলে জানান ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা। কেবল বর্হিবিভাগেই নয়, রোগীর চাপ বেড়েছে ইনডোরেও (আন্তঃবিভাগে)। চাপ সামলাতে ওয়ার্ডের
আন্তঃবিভাগে (ইনডোরে) আরো কিছু সংখ্যক শয্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় হাসপাতাল প্রশাসন ও ওয়ার্ড সংশ্লিষ্টরা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ওয়ার্ডটিতে নতুন ১১টি শয্যা যুক্ত করা হয়। এর আগ পর্যন্ত মোট ২৪টি শয্যা ছিল ওয়ার্ডের আন্তঃবিভাগে। নতুন ১১টিসহ ওয়ার্ডের শয্যা সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৫টিতে। তবে শয্যা সংখ্যা বাড়লেও সংকট রয়েই যায়। যার কারণে শয্যা না পেয়ে প্রতিদিনই অনেক রোগীকে ওয়ার্ড থেকে ফিরে যেতে হয়। এ নিয়ে দূর-দূরান্তের রোগীদের দুর্ভোগ- ভোগান্তিতে পড়তে হয় বেশি। রোগীদের দুর্ভোগ লাগবে ওয়ার্ড থেকে আউটডোর সেবা সরিয়ে সেখানে নতুন করে দশটি শয্যা স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান।
এখন আরো দশটি যুক্ত হলে ওয়ার্ডের মোট শয্যা সংখ্যা ৪৫টিতে উন্নীত হবে। আর নতুন দশ শয্যায় পুরুষ ও মহিলা রোগীর জন্য সমান সংখ্যক (৫টি করে) শয্যা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। এতে করে ওয়ার্ডে মোট শয্যার মধ্যে ২৩ শয্যায় পুরুষ এবং ২২ শয্যায় মহিলা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হবে। নতুন দশ শয্যা যুক্ত হলে অন্তত আরো কিছু সংখ্যক ক্যান্সার রোগী ওয়ার্ডে ভর্তি থেকে কম-খরচে সরকারি চিকিৎসা সেবা গ্রহণের সুযোগ পাবেন বলে মনে করেন বিভাগের প্রধান ডা. সাজ্জাদ মো.ইউসুফ।
ক্যান্সার ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা বলছেন, মানুষের জীবন-যাপনের অভ্যাস বা লাইফস্টাইলের কারণে ক্যান্সারের ঝুঁকি দিনদিন বাড়ছে। ইনডোর তো আছেই, আউটডোরেও রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। এই ব্যাধি থেকে বাঁচতে হলে এখনই সচেতন হতে হবে। অবশ্য, আগের তুলনায় মানুষের মাঝে সচেতনতা অনেক বেড়েছে জানিয়ে ক্যান্সার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আলী আসগর চৌধুরী বলেন, মানুষ সচেতন হওয়ার কারণেই হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। আগে অনেকেই ঝাড়-ফুঁক কিংবা বৈদ্য-তাবিজ করে সময় ক্ষেপন করতেন। আর ডাক্তারের কাছে আসতেন শেষ পর্যায়ে। এখন পরিস্থিতি অনেকটা বদলেছে। আগে দৈনিক ৫০ থেকে ৬০ জন রোগী আউটডোরে চিকিৎসা সেবা নিলেও এখন প্রতিদিন প্রায় দেড়শ রোগী সেবা নেন। তবে ক্যান্সার নিয়ে মানুষকে আরো সচেতন হতে হবে বলেও মন্তব্য করেন এ চিকিৎসক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় সিসিইউ হচ্ছে মা ও শিশু হাসপাতালে
পরবর্তী নিবন্ধচবিতে ক্লাস চলাকালে খুলে পড়ল সিলিং ফ্যান