ক্যান্সারজয়ী শিশুদের নিয়ে অন্যরকম আয়োজন

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৬:০২ পূর্বাহ্ণ

বিশ্ব শিশু ক্যান্সার দিবস ছিল গতকাল ১৫ ফেব্রুয়ারি। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘বেটার সারভাইভ্যাল ইজ অ্যাচিভেবল’। যার বাংলা অর্থ হচ্ছে ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশুর ভালোভাবে বেঁচে থাকাটাও অর্জনযোগ্য। ক্যান্সার আক্রান্ত শিশু রোগী ও ক্যান্সার জয়ী শিশুদের নিয়ে অন্য রকম এক আয়োজনের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করেছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শিশু ক্যান্সার বিভাগ। বর্ণাঢ্য র‌্যালি, আলোচনা সভা ও কেক কাটার পাশাপাশি ছিল শিশুদের জন্য আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতা ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার আয়োজন। আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতা ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় ক্যান্সার জয়ী ৫৬ জন শিশু অংশ নেয়। এদের মধ্য থেকে তিন ক্যাটাগরিতে মোট ৯ শিশুকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।

শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. একেএম রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে এ আয়োজনে ছিলেন চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান, চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. সাহেনা আক্তার, উপাধ্যক্ষ ডা. হাফিজুল ইসলাম, চমেক শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মনোয়ারুল হক শামীম, রেডিওথেরাপি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সাজ্জাদ মোহাম্মদ ইউসুফ, শিশু সার্জারী বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. খুরশীদ আলম সারোয়ার, শিশু নেফ্রোলজি বিভাগের প্রধান ডা. ইমরুল কায়েস, সহযোগী অধ্যাপক ডা. জেবিন চৌধুরী ও সহযোগী অধ্যাপক মারুফ উল কাদের প্রমূখ। নিবন্ধ উপস্থাপন করেন ডা. কামরুন্নাহার। শিশু ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে এ আয়োজন জানিয়ে শিশু ক্যান্সার বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. একেএম রেজাউল করিম বলেন, প্রতিবছর ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। শিশুদের সাধারণত ব্লাড ক্যান্সার বেশি হচ্ছে। তবে নসিকাগ্রন্থি, কিডনি এবং চোখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া শিশুর সংখ্যাও কম নয়। তবে বেশির ভাগ শিশুর ক্যান্সার নিরাময়যোগ্য। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলেও যথাযথ চিকিৎসা পেলে অধিকাংশ শিশু রোগীর সেরে উঠার সম্ভাবনা থাকে। সেরে উঠার এ হার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ। যদিও আমাদের দেশে খুব কম সংখ্যক শিশু রোগী উন্নত চিকিৎসার সুযোগ পান।

এ সুযোগটা বাড়াতে হবে। অর্থাৎ ক্যান্সার আক্রান্ত শিশু রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করাটা জরুরি।

চিকিৎসকরা জানান, শিশুদের যেসব ক্যান্সার হয়, তার মধ্যে রক্তের ক্যান্সার বা লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা, ব্রেন টিউমার, নিউরো ব্লাসটোমা, উইলমস টিউমার অন্যতম। নানা কারণেই শিশুদের ক্যান্সার হতে পারে। তার মধ্যে একটি হলো জেনেটিক মিউটেশন। যেমন রেটিনো ব্লাসটোমা এমন একটি চোখের ক্যান্সার, যা শিশুর জেনেটিক মিউটেশনের কারণে হয়ে থাকে। এই জেনেটিক মিউটেশন শিশু তার বাবা অথবা মায়ের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়ে থাকে।

অন্যদিকে কিডনির ক্যান্সার উইলমস টিউমারের জেনেটিক মিউটেশন গর্ভাবস্থাতেই শুরু হয়। অনেক সময় নানা ধরনের জীবাণু যেমন এপস্টিনবার ভাইরাস সংক্রমণ থেকে লিম্ফোমা হতে পারে। অন্যদিকে নানা ধরনের রেডিয়েশন বা বিকিরণের কারণেও ক্যান্সার হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুনির্দিষ্ট কোনও কারণ না থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জেনিটিক্যাল কারণ, ভাইরাস, খাবারে টঙিনের উপস্থিতি, ক্যামিকেলস, পরিবেশগত সমস্যায় শিশুদের ক্যান্সার হয়। তবে আশার কথা হচ্ছে প্রাথমিকভাবে এ রোগ শনাক্ত করা গেলে বেশিরভাগ শিশুরই ভালো হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। শিশুদের ক্যান্সার মোকাবেলায় সবার আগে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ার হার উদ্বেজনক জানিয়ে শিশু ক্যান্সার বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. একেএম রেজাউল করিম বলেন, তাই শিশুদের সঠিক চিকিৎসার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার যেমন পালং শাক, ব্রুকলি, ডিমের কুসুম, মটরশুটি, কলিজা, মুরগীর মাংস, কচুশাক, কলা, মিষ্টি আলু, কমলা, শালগম, দুধ, বাঁধাকপি, বরবটি, কাঠবাদাম মতো ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম এবং আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে।

বড়দের যেসব ক্যান্সার হয় সেসব ক্যান্সার শিশুদের হয়না জানিয়ে চিকিৎসকরা বলছেন, বাংলাদেশে এখন ক্যান্সারের পর্যাপ্ত চিকিৎসা রয়েছে। তাই শিশুদের ক্যান্সার হলে ভেঙে না পড়ে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করাতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে যথাযথ চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হলে ওই শিশুকে সারিয়ে তোলা সম্ভব। এজন্য সকলকে আরো বেশি সচতেন হতে হবে।

কিছু লক্ষণের মধ্যে শিশুর ঘন ঘন সর্দি, কাশি, জ্বর বা মূত্রনালির সংক্রমণ হলে, শরীরের যে কোনো স্থানে কোনো ধরনের মাংসপিণ্ড বেড়ে গেলে, খুব দ্রুত শিশুর ওজন কমে গেলে এবং শিশুর রক্তশূন্যতা, শ্বাসকষ্ট, রক্তপাত, চামড়ার নিচে লাল দাগ দেখা গেলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্পেসে এবার নারী মহাকাশচারী পাঠাচ্ছে সৌদি আরব
পরবর্তী নিবন্ধবাকলিয়ায় প্লাস্টিক গোডাউনে আগুন