কোরআন তেলাওয়াতের মর্যাদা ও বিশ্লেষণ

ডা. মোহাম্মদ ওমর ফারুক | শনিবার , ২৮ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৮:১৯ পূর্বাহ্ণ

পর্ব

হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সাঃ) আমাকে বললেন: আমাকে কোরআন পড়ে শুনাও। আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! কোরআন তো আপনার উপরে নাযিল হয়, আপনার সামনে কি আমি কোরআন পড়ব? তিনি বললেন, আমি অন্য কারো তেলওয়াত শুনতে চাই। তারপর আমি তাঁকে সূরা নিসা পড়ে শুনালাম। আমি যখন এই আয়াত পর্যন্ত পৌঁছালাম, ‘যখন আমি প্রত্যেক উম্মত হতে একজন সাক্ষী উপস্থিত করবো এবং তোমাকে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষীরূপে উপস্থিত করব, তখন কি অবস্থা হবে?’

আমাকে তিনি বললেন, ‘আর পড়ার দরকার নেই, যথেষ্ট হয়েছে। অতঃপর রাসূল (সাঃ) এর পবিত্র মুখপানে তাকাতেই দেখি, তাঁর আঁখিদ্বয় অঝোরে অশ্রু বিসর্জন করছে’ (বুখারী, মুসলিম)। অন্য একটি হাদিসে রয়েছে, ‘কোরআন তেলওয়াতের ক্ষেত্রে রাসূল এর আদর্শ ছিলো: তিনি যখন কোনো তাসবীহ সম্বলিত আয়াত পড়তেন, তখন তাসবীহ পাঠ করতেন। যখন কোন দু’আ বা ইস্তেগফার সম্বলিত আয়াত পড়তেন, তখন দু’আ ও ইস্তেগফার করতেন। যখন কোনো আশাপ্রদ আয়াত পাঠ করতেন তখন আল্লাহর কাছে তা প্রার্থনা করতেন।

আর যখন ভীতিপ্রদ আয়াত তেলওয়াত করতেন তখন আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। তা ভাষা ও হৃদয় দিয়ে মর্মায়িত করে নিতেন। বলতেনসুবাহানাল্লাহ, নাউজুবিল্লাহহে আল্লাহ আমাদেরকে দান করুন, হে আল্লাহ আমাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন’।

পবিত্র কুরআনুল করীমে আল্লাহতায়ালা স্পষ্ট করে বলছেন, ‘আল্লাহতায়ালা কি সব বিচারকের তুলনায় শ্রেষ্ঠ বিচারক নন?’ এই আয়াতটি পড়ার সময় বলেন, হ্যাঁ অবশ্যই আমি এই ব্যাপারে সাক্ষীদাতাদের একজন। এভাবে নবীজি কোরআনের ভাবধারার সাথে পাঠককে প্রতিবেদনশীল হওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন, যেন তেলওয়াতের মাধ্যমেই শুরু হয় তাঁর জীবনের কুরআনী শিক্ষা ও দিক নির্দেশনা বাস্তবায়নের পদযাত্রা। এভাবেই এক সময় তার জীবন হয়ে উঠবে কুরআনের বাস্তব প্রতিবিম্ব।

কোরআন পঠন ও অনুধাবনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে: কোরআনের আলোকে বাস্তবজীবনকে আলোকিত করা। জীবনের সর্বক্ষেত্রে, সর্ববিভাগে এর শিক্ষা, বিধিবিধান, শাসনঅনুশাসন বাস্তবায়ন করা। কোরআন যা হালাল বলেছে, তা হালাল জ্ঞান করা এবং যা হারাম করেছে তা হারাম হিসাবে গ্রহণ করা এবং সে অনুসারে জীবনকে গঠন ও পরিচালিত করাএটাই তো কোরআন নাযিলের মূল উদ্দেশ্য।

এর মাধ্যমেই নির্মিত হবে মানবতার প্রকৃত সাফল্য ও ব্যর্থতা। আল্লাহতায়ালা সূরা আনআম এর ১৫৫ নং আয়াতে বলছেন, ‘এই কিতাব আমি নাযিল করেছি যা কল্যাণময়। সুতরাং ইহা অনুসরণ কর এবং সাবধান হও, হয়তো তোমাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা হবে’। সূরা ত্বাহার ১২৩ নং আয়াতে আল্লাহতায়ালা আরো বলেছেন, ‘যে আমার পথ (কুরআন) অনুসরণ করবে সে বিপদগামী হবে না ও দুঃখ কষ্ট পাবে না’।

হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ‘যে ব্যক্তি কুরআন তেলওয়াত করে, দিবারাত্রি কুরআনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে, কুরআনের হালালকে হালাল মানে, কুরআনের হারামকে হারাম মানে, আল্লাহতা’আলা তার রক্তমাংসকে জাহান্নামের উপর হারাম করে দেবেন। তাকে অনুগত সম্ভ্রান্ত ফেরেশতাদের সাথে রাখবেন। কিয়ামতের দিন কুরআন তার মুক্তির জন্য প্রমাণ হয়ে যাবে’ (তাবারানী)

হযরত আলী (রা🙂 থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করবে, অতঃপর তা সুন্দরভাবে মুখস্থ করবে এবং তার হালাল ও হারাম তথা আদেশনিষেধ যথার্থভাবে মেনে চলবে, তাকে আল্লাহ তা’আলা জান্নাতে প্রবিষ্ট করাবেন এবং তার আহলপরিবারের মধ্য থেকে এমন দশজন ব্যক্তির জন্য তার শাফা’আত গ্রহণ করবেন যাদের জন্য জাহান্নাম অবধারিত হয়ে পড়বে’ (তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, আহমাদ)। হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, ‘কুরআন তো নাযিল করা হয়েছিলো বাস্তব জীবনে তা আমল করার জন্য।

কিন্তু লোকেরা আমল বাদ দিয়ে শুধু এর পঠনকেই ইবাদত হিসাবে গণ্য করে নিয়েছে। তোমাদের মধ্যে এমনও লোক আছে যে সূরা ফাতেহা থেকে শেষ পর্যন্ত কোরআন পড়ে, একটি বর্ণ ও ছুটে যায় না। অথচ কোরানের প্রতি আমলকে ছেড়ে দিয়েছে। প্রকৃত কথা হচ্ছে: যে কোরআান দ্বারা আমল করে না, সে আল্লাহর যিকর ও হেদায়াত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।

তার উপরেই নিম্নোক্ত আয়াতের প্রয়োগ যথার্থ, ‘যে আমার স্মরণ থেকে বিমুখ থাকবে তার জীবন যাপন হবে সংকুচিত এবং আমি তাকে কিয়ামতের দিন উত্থিত করবো অন্ধ অবস্থায়। সে বলবে: হে প্রতিপালক, কেন আমাকে অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করলে? আমি তো ছিলাম চক্ষুষ্মান। তিনি বলবেন, এরূপই আমার নির্দেশনাবলী তোমার নিকট এসেছিলো কিন্তু তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে এবং সেভাবে আজ তুমিও বিস্মৃত হবে’। সূরা ত্বাহা১২৪ থেকে ১২৬।

লেখক : সভাপতিরাউজান ক্লাব, সিনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি)

রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতাল

পূর্ববর্তী নিবন্ধঐতিহাসিক লালদিঘির মাঠ এবং চট্টলার প্রিয় নেতা মহিউদ্দীন চৌধুরী
পরবর্তী নিবন্ধহল্যান্ড থেকে