কোভিডকালের মানবিক গল্প

আ.ফ.ম.মোদাচ্ছের আলী | বুধবার , ১ মার্চ, ২০২৩ at ১০:২২ পূর্বাহ্ণ

কামরুল হাসান বাদল। কবি,সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক, শিশু সাহিত্যিক। দীর্ঘদিন ধরে দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ পত্রিকার শিশুদের পাতা সম্পাদনা করেছেন সুনিপুণভাবে। মানবিকতা, মুক্তিযুদ্ধ, দেশপ্রেমের প্রাবল্য তাঁর লেখা এবং সম্পাদনায় পরিস্ফুটিত। ২০২০সাল থেকে প্রায় দুবছর বাংলাদেশ এবং বিশ্ব পার করেছে দু:সহ মহামারি কোভিড ১৯।এই দীর্ঘ সময়ে মানুষ হারিয়েছে আপনজন,হারিয়েছে সম্পদ,হারিয়েছে বেঁচে থাকার অবলম্বন। মহামারিকালে সারা নামের একটি শিশুর সময়যাপন, কাকের সাথে সখ্যতা এবং পিতার চাকুরী চলে যাওয়ার পর কষ্ট নিয়ে গ্রামে ফিরে যাওয়ার একটি মানবিক শিশুতোষ গল্পগ্রন্থ কাকবন্ধু আর লকডাউন।পাঁচ পর্বে লিখিত একটি গল্প কাকবন্ধু আর লকডাউন।লেখক গল্পটি লিখেছেন ২০২০ সালের কোভিড ১৯ এর ভয়াবহ সময়ে।

গল্পের মূল চরিত্র সারা। মহামারি শুরুর প্রথম দিকে কিছুদিন স্কুলে না যাওয়ার বিষয়টি সারার কাছে ভালো লাগলেও ধীরে ধীরে সে বুঝতে পারে এটি এক অনাগত দু:খের।মাস্ক শব্দটি সারার জীবনে স্থান পেয়েছে।বাবামা অফিসে যায়না।বাজার থেকে ফিরে আসলে বাবার কাছে ছুটে যেতে পারেনা। এরমধ্য খবর আসে ঢাকায় সারার চাচা করোনায় মারা গেছেন। লকডাউনের কারণে গাড়ি ট্রেন বন্ধ। তাছাড়া এই মৃত্যুতে কেউ নাকি কাছে যেতে পারেনা।বাবা একলা ঘরে অঝোরে কান্না করেন।মা ও কাঁদেন। রাস্তায় লোক চলাচল নেই।মা কাকদের খাবার দিয়ে ওদের সাথে কথা বলেন। সারা মায়ের কাছে শিখে নিয়েছে খাবার দেয়ার সময় কিভাবে কাকদের সাথে কথা বলতে হয়। সারার শব্দ ভান্ডারে যুক্ত হয়েছে ভাইরাস, ভেকসিন। যা সে ইতিপূর্বে শোনেনি। স্কুল যেতে না পারার কষ্ট সারা অনুভব করে,তার ছোট্ট মন অনুভব করে বন্ধুদের সাথে খেলতে না পারার বেদনা।

ইতিমধ্যে সারার বাবার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার।বাবার চাকুরি নাকি চলে গেছে। শহরে থাকা সম্ভব না। ওরা গ্রামের বাড়িতে চলে যাবে।একদিন জিনিসপত্র গোছানো শেষ করে ট্রাক ও মাইক্রোবাসে করে বাবা মা সারাকে নিয়ে গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। এইসময় সারার স্কুল, বন্ধু এবং শিক্ষকদের কথা মনে পড়ে। ওর কান্না পায়। বাবা মা সারাকে কোলে তুলে নেয়।গাড়িতে উঠে সারা তার কাক বন্ধুদের সাথে কথা বলে, বিদায় নেয়।বাবা বুঝতে না পারলেও মা ঠিকই বুঝতে পারে সারা তার কাক বন্ধুদের সাথে কথা বলছে। মায়ের চোখে নীরব কান্না।

এই মানবিক গল্পগ্রন্থটিতে কামরুল হাসান বাদল মহামারি কালের চরম বাস্তবতা তুলে এনেছেন, পৃথিবীর অসংখ্য সারাকে, তাদের মনোজগতকে তুলে এনেছেন। গ্রন্থটি একটি ব্যতিক্রমধর্মী মানবিক গল্প যার জন্য কামরুল হাসান বাদলকে অভিবাদন। কেননা লেখালেখির ক্ষেত্রে বিষয়বস্ত চয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ২৪ পৃস্টার রঙিন এই গ্রন্থটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী মোমিন উদ্দিন খালেদ।জয়ন্ত মালোর অলংকরণে গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে ঝিলমিল। মূল্য ১৮০টাকা।শিশু কিশোর সহ সব পাঠকের এই ভিন্ন বিষয়বস্তুর গ্রন্থটি ভালো লাগবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসংবাদপত্র ও হকার পরস্পরের পরিপূরক
পরবর্তী নিবন্ধআর জেদ করব না