মায়ের সঙ্গে বশির বাজারে এসেছে। সাত বছর বয়সী বশির মাকে বলল, মা, আমি আইসক্রিম খেতে চাই।
মা বললেন, না বাবা, আমাদের দেরি হবে। আমাদের এখন বাড়ি যাওয়া উচিত।
না, আমাকে এখন আইসক্রিম খেতে হবে।
এই বলে বশির জোরে জোরে কাঁদতে থাকে। আশেপাশের লোকজন বশির আর তার মায়ের দিকে তাকাল। বশিরের মা বুঝতে পারলেন কিভাবে বশিরকে শান্ত করা যায়। তিনি তাড়াহুড়ো অবস্থায় আছেন। বশির কিছুই শুনতে ও বুঝতে প্রস্তুত না।
বশির মা–বাবার একমাত্র ছেলে। বাবা–মা সবসময় তাকে সব কিছু বোঝানোর চেষ্টা করে। মা তাকে আইসক্রিম দিল। আইসক্রিম পেয়ে বশির খুব খুশি। সে খেতে লাগল। বাবা একদিন তার জন্য একটি রিমোট ড্রাইভ গাড়ি নিয়ে আসেন। বশির বলল, আমি গাড়ি চাই না, হেলিকপ্টার চাই।
বশিরকে কোলে নিয়ে বসে বাবা বললেন, লক্ষী ছেলে, গাড়িটা কত ভালো! তোমার জন্মদিনে হেলিকপ্টার নিয়ে আসবে।
না, আমি শুধু একটা হেলিকপ্টার চাই।
এই বলে বশির চলে গেল। সেদিন সে কিছুই খেল না। হেলিকপ্টারের জন্য না–খেয়ে শুয়ে পড়ল। পরদিন বাবা তার জন্য হেলিকপ্টার নিয়ে এলেন।
কিছুদিন পর মুবিন বশিরের স্কুলে ভর্তি হয়। বশির আর মুবিন ভালো বন্ধু হয়ে ওঠে। বশিরদের বাড়ির কাছেই মুবিনদের বাড়ি। দুজনে একসঙ্গে স্কুলে যায়, একই সঙ্গে খেলা করে। টিফিনে খাওয়ার সময় হলে সবাই যখন নিজ নিজ ঠিফিন বাক্স খুলে খাবার খেতে বসে, সেসময় প্রায়ই মুবিন ক্লাসের বাইরে যায়। তাকে কারণ জিজ্ঞেস করলে সে বলে তার ক্ষুধা লাগে না।
একদিন মুবিন স্কুলে আসেনি। মুবিন ভাবল ওর বাসায় গিয়ে দেখবে। তার বাড়িতে গিয়ে বশির জানতে পারল মুবিনের কাছে তার মতো এত খেলনা নেই। তার মা আর বাবা দুজনেই কাজে যায়, তাই সে দুপুরের খাবারও খেতে পারে না। বশিরের মতো সুখ–সুবিধা মুবিনের নেই। বশির কিছু না বলে নিজের বাড়িতে চলে আসে।
বশির মাকে সব কথা বলতে বলতে বলল, মা, আমার বন্ধু মুবিনের জন্যও কাল থেকে টিফিন দেবে।
মা বললেন, ঠিক আছে বাবা। এ তো খুব ভালো তুমি তোমার বন্ধুকে সাহায্য করছো।
বশির বলল, মা, আজ থেকে আমি আর কোনো জেদ করব না।
আমার লক্ষী ছেলে।
বলেই মা বশিরের কপালে চুমু খেলেন। তারপর ভাবলেন, আমরা যা বলে বোঝাতে পারিনি; অন্যের কষ্ট দেখে সেই জিনিসটা বুঝতে পেরেছে বশির।