সংবাদপত্র ও হকার পরস্পরের পরিপূরক

চিটাগাং সংবাদপত্র হকার্স বহুমুখী সমবায় সমিতির অভিষেকে আজাদী সম্পাদক

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১ মার্চ, ২০২৩ at ১০:২১ পূর্বাহ্ণ

একুশে পদকপ্রাপ্ত দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেছেন, হকাররা যদি না থাকে তবে সংবাদপত্র বের করে কী হবে? আপনারা প্রতিটি ঘরে প্রকাশিত সেই সংবাদপত্রটা পৌঁছে দিচ্ছেন। আপনারা ও আমরা তাই পরস্পরের পরিপূরক। এখানে কেউ বড়, কেউ ছোট, বিষয়টি তেমন নয়। বিদেশে একটা সিস্টেম চালু আছে। বিভিন্ন স্টেশনে সংবাদপত্র রাখে এবং সাথে কৌটাও রাখে। সেই কৌটায় পয়সা দিয়ে সংবাদপত্র নিয়ে যায়। আমরা যদি এই ব্যবস্থা করি সংবাদপত্রও যাবে, কৌটাও যাবে। আমরা এখনো সে স্থানে পৌঁছতে পারিনি।

গতকাল সন্ধ্যায় দৈনিক আজাদী মিলনায়তনে চিটাগাং সংবাদপত্র হকার্স বহুমুখী সমবায় সমিতির নবনির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, প্রচারসংখ্যায় চট্টগ্রামে যেকোনো পত্রিকার চেয়ে আজাদী এখনো শীর্ষে। কেন? সেটি আপনাদের জন্যই। আজাদী কেন সবচেয়ে বেশি চলে? এই জন্যই চলে, আমরা চট্টগ্রামবাসীর সুখদুঃখের কথা বলি। চট্টগ্রামবাসীর কথা বলার জন্যই আমার বাবা কাগজটা বের করেছিলেন। আমার মনে হয়, যে উদ্দেশ্যে তিনি কাগজটা বের করেছিলেন সেই প্রত্যাশা আমরা পূরণ করতে পেরেছি। আমাকে অনেকেই বলেন, আপনি জাতীয় পত্রিকা করতে পারেন। ঢাকা থেকে কাগজ বের করেন। আমি বলেছি, আমার বাবার উদ্দেশ্য সেটি ছিল না। আমি চাইলে কালপরশু থেকে ঢাকা থেকে কাগজ বের করতে পারি। ঢাকা থেকে কাগজ বের করলে সেটি হয়ে যাবে বাংলাদেশের খবরের কাগজ। কিন্তু আমার কাগজে ৩০ দিনের মধ্যে ৩০ দিনই থাকে চট্টগ্রামের খবর।

তিনি আরো বলেন, আমরা সিআরবি রক্ষার আন্দোলন নিয়ে অনেক নিউজ ছেপেছি। সেই আন্দোলন সফল হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামবাসীর ফুসফুসখ্যাত সিআরবির বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছেন। আরেকটি বিষয় হলো, বাংলাদেশে একমাত্র কাগজ হচ্ছে আজাদী, যার প্রয়াত সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ পেয়েছিলেন রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পদক স্বাধীনতা পদক। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ একুশে পদক পেয়েছি আমি। একুশে পদক পাওয়া আমার জন্য আরো বেশি গৌরবের। কারণ একুশের সাথে আমাদের ওতপ্রোত সম্পর্ক রয়েছে। কারণ আমার বাবা ১৯৫২ সালে মাহবুব উল আলম চৌধুরীর লেখা একুশের প্রথম কবিতা ‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবী নিয়ে এসেছি’ ছাপিয়েছিলেন। আমার বাবা কিন্তু জানতেন এ কবিতা ওই সময়ে ছাপানো মানে তৎকালীন পাকিস্তানি সরকারের চোখে দেশদ্রোহিতা। তারপরও কবিতাটি ছাপিয়েছেন। সেই সময় আমাদের প্রেসের ম্যানেজার দবির সাহেবকে জেলও খাটতে হয়েছে। তবে একুশে পদক পাওয়ায় আমি মারা যাওয়ার পর আমার কফিনের উপর দেশের লালসবুজের পতাকা স্থান পাবেএটাই আমার জন্য সবচেয়ে বড় পাওনা। আপনারা দোয়া রাখবেন আমি যেন এই লালসুবজের পতাকার সম্মানটা ধরে রাখতে পারি।

প্রধান আলোচকের বক্তব্যে চট্টগ্রাম জেলা সমবায় অফিসার মুরাদ আহাম্মদ বলেন, হকারের কাজটি অত্যন্ত কষ্টকর কাজ। ভোরের আলো ফোটার আগেই তারা পাঠকের বাসায় বাসায় পত্রিকা বিলি করেন। বিভিন্ন বাসার উপরের তলায় প্রতিদিন সিঁড়ি মাড়িয়ে তারা কাজটি করেন দিনের পর দিন। আয়ও অত্যন্ত কম। চিটাগাং সংবাদপত্র হকার্স বহুমুখী সমবায় সমিতিতে যারা নির্বাচিত হয়েছেন আমি তাদের বলব, আপনারা হকার ভাইদের পাশে থাকবেন। তাহলে আপনারা যেভাবে সুন্দর একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশে নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন, আগামীতে আবারও জয়ী হবেন।

সংগঠনের প্রবীণ সদস্য জয়নাল আবেদীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চিটাগাং সংবাদপত্র হকার্স বহুমুখী সমবায় সমিতির নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সংবাদপত্র হকার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহের ও সাধারণ সম্পাদক ওসমান গণি টিপু, চিটাগাং সংবাদপত্র হকার্স বহুমুখী সমবায় সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি দাউদুল ইসলাম প্রমুখ। সমাপনী বক্তব্য রাখেন চিটাগাং সংবাদপত্র হকার্স বহুমুখী সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি ইউসুফ আলী। পরে দৈনিক আজাদী সম্পাদক সমিতির নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দকে শপথবাক্য পাঠ করান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধব্রিজঘাট বাজার ইজারা না দিতে সিডিএর চিঠি
পরবর্তী নিবন্ধকোভিডকালের মানবিক গল্প