কোটি টাকায় কাঠের ট্রলার

কর্ণফুলীর পাড়ে কর্মযজ্ঞ

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২২ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:১৯ পূর্বাহ্ণ

সাগরে ইলিশ শিকার করা ফিশিং ট্রলার তৈরি হচ্ছে কর্ণফুলী নদীর পাড়ে। বিগত বছরগুলোতে শুষ্ক মৌসুমে ট্রলার তৈরির ধুম পড়লেও এবার এই সংখ্যা কম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার সাগরে আশানুরূপ মাছ ধরা পড়েনি। বেশিরভাগ বোট মালিক লোকসান দিয়েছেন। তাই নতুন করে বোট বানাচ্ছেন না। একেকটি বোট তৈরিতে প্রায় কোটি টাকার মতো ব্যয় হয় বলে জানিয়েছেন অভিজ্ঞ কারিগররা। তবে সাগরে জীবনবাজি রেখে মাছ শিকারে যাওয়া এসব ফিশিং ট্রলার যারা নির্মাণ করেন তাদের নেই প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা। অনুমান ও অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে নিপুণ হাতে তৈরি হয় কাঠের তৈরি এসব ট্রলার।
সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, অতিরিক্ত ট্রলার তৈরি হওয়ায় সমুদ্রে অতি মৎস্য আহরণ রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। সাগরের মাছের অতি আহরণ রোধ করার জন্য ট্রলারের চাপ কমানো দরকার। তাছাড়া ব্লু-ইকোনমির সুফল পেতে হলে নৌযানগুলোকে একটি আইনি কাঠামোর মধ্যে আনা উচিত।
সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বাংলাদেশের সীমানায় মৎস্য শিকার করতে পারে দেশীয় নৌযানগুলো। বর্তমানে সামুদ্রিক জেলের সংখ্যা প্রায় সোয়া ৫ লাখ। সামুদ্রিক যান্ত্রিক নৌযানের সংখ্যা প্রায় ৩৩ হাজার। এই নৌযানের মধ্যে প্রায় ২৭ হাজার যান্ত্রিক নৌযানের নিবন্ধন নেই। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার নৌযান সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তরের নিবন্ধন নিলেও প্রায় চার হাজার নৌযান নিয়মিত নবায়ন করে না। মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বছরে বঙ্গোপসাগর থেকে কম-বেশি ৭ লাখ মেট্রিক টন সামুদ্রিক মৎস্য আহরিত হয়। এর মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি আহরিত হয় এই যান্ত্রিক ট্রলার দ্বারা।
সরেজমিনে নগরীর রাজাখালী খালের মোহনায় গিয়ে দেখা গেছে, কর্ণফুলীর নদীর তীরে বানানো হচ্ছে কয়েকটি ট্রলার। এসব ট্রলার বানাতে কোনো ইঞ্জিনিয়ার কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষিত কোনো নকশাকার নেই।
কথা হয় ফিশিং ট্রলার বানানোর অভিজ্ঞ কারিগর হাজী রফিক উদ্দিনের সাথে। ৬৩ বছর বয়সী এই কারিগর ১৯৭৪ সাল থেকে বোট তৈরির কাজে জড়িত। ১৯৮৪ সাল থেকে নিজের নেতৃত্বে বোট বানানো শুরু করেন তিনি।
কারিগর রফিক বলেন, আমি কক্সবাজারের হাজী গোলা রহমান মিস্ত্রির কাছ থেকে ট্রলার বানানোর কাজ শিখেছি। ১৯৮৪ সাল থেকে নিজে বোট বানাচ্ছি। এ পর্যন্ত প্রায় ২শ বোট বানিয়েছি। ৭ম শ্রেণি পাস এ কারিগর বলেন, এ মৌসুমে সাগরে মাছ কম ধরা পড়ছে। এতে বোট মালিকদের হাতে অর্থের সংকট রয়েছে, যে কারণে এ বছর নতুন বোট কম তৈরি হচ্ছে। এক বোট মালিক গত বছর ৪টি বোট বানিয়েছেন। তার ১৫-১৬টি বোট রয়েছে। সাগরে মাছ না পাওয়ায় এ মৌসুমে তার অনেক টাকা লোকসান হয়েছে। এবার তিনি ৪টি বোট বিক্রি করে দিচ্ছেন। তিনি বলেন, বোট তৈরির করার কাঠগুলো আসে থাইল্যান্ড ও আফ্রিকা থেকে। এসব কাঠের বর্গফুট ২ হাজার টাকা। আমরা যে বোটটি তৈরি করছি এটি ২০ হাজার পিস ইলিশ শিকার করতে পারবে। ওজনে প্রায় ৫শ মণ মাছ শিকার করে আনতে পারবে। একটি বোট তৈরি করতে কম-বেশি এক কোটি টাকা ব্যয় হবে। একটি বোট তৈরিতে আমাদের মজুরি আছে ১০ লাখ টাকা। গত মৌসুমে ১০টি বোট বানিয়েছেন বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সামুদ্রিক মৎস্য আহরণকারী বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক বাবুল সরকার বলেন, প্রতি বছর সারা দেশে চারশ থেকে পাঁচশ ফিশিং ট্রলার তৈরি হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রামে তৈরি হয় দেড়শ থেকে দুইশ। এ বছর সাগরে মাছ কম পড়েছে। অনেক ট্রলার মালিক এবার লোকসান গুণেছেন। যে কারণে এ বছর নতুন ট্রলার কম তৈরি হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজনশক্তি রপ্তানিতে ফিরছে সুদিন
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬