জনশক্তি রপ্তানিতে ফিরছে সুদিন

চলতি বছর চট্টগ্রাম থেকে গেছেন ২২,১৯১ জন

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২২ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:১৯ পূর্বাহ্ণ

করোনার প্রাথমিক ধাক্কা সামলে জনশক্তি রপ্তানিতে সুদিন ফিরতে শুরু করেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গত ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত কর্মের সন্ধানে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও আফ্রিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিয়েছেন ৫ লাখ ৫৯ হাজার ৪৪৯ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে গেছেন ২২ হাজার ১৯১ জন। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় তিন গুণ। এদিকে তিন বছর পর মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার চালুর বিষয়ে সম্প্রতি সরকারের সাথে একটি সমঝোতা চুক্তি হয়েছে। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালু হলে জনশক্তি রপ্তানিতে আরো গতি বাড়বে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
জনশক্তি রপ্তানি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমাদের দেশের শ্রমবাজার প্রধানত মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক। মোট জনশক্তির রপ্তানির ৯০ ভাগ হয় সৌদি আরব, কাতার, ওমান ও আরব আমিরাতে। এর বাইরে চীন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়ায়ও ভাগ্য বদলের উদ্দেশ্যে অনেকে পাড়ি দিচ্ছেন। পূর্ব ইউরোপের দেশ রুমানিয়া, পোল্যান্ড, মাল্টা ও বুলগেরিয়ার মতো দেশগুলোতে এখন অনেকে পাড়ি দিচ্ছেন। এছাড়া আফ্রিকার মোজাম্বিক, ইথিওপিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকায়ও অনেকে যাচ্ছেন। চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান এবং জনশক্তি অফিস সূত্রে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম থেকে মোট ২২ হাজার ১৯১ জন লোক বিদেশে পাড়ি দেন। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব গেছেন ৮ হাজার ৬৩১ জন, ওমানে ১০ হাজার ৯৮ জন, কাতারে ১ হাজার ৫২৭ জন এবং আরব আমিরাতে গেছেন ১ হাজার ৫৮৪ জন। সব মিলিয়ে এই চারটি দেশে গেছেন ২১ হাজার ৮৪০ জন। বাকি ৩৫১ জন গেছেন ইয়েমেন, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রাজিল, ইকুয়েডর, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, আলবেনিয়া, আর্মেনিয়া, রোমানিয়া, পোল্যান্ড, জর্দান, বাহরাইন, ইথিওপিয়া, মোজাম্বিক, মরিশাস, দক্ষিণ আফ্রিকা, সার্বিয়া ও উজবেখিস্তানে।
জেলা কর্মসংস্থান এবং জনশক্তি অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্বব্যাপী করোনার থাবায় জনশক্তি রপ্তানিতে ধস নামলেও পরিস্থিতির উন্নতির সাথে সাথে জনশক্তি রপ্তানি বাড়তে শুরু করেছে। মধ্যপ্রাচ্য তো আমাদের দেশের প্রধান শ্রমবাজার। এছাড়া বর্তমানে অনেক অপ্রচলিত দেশেও অনেক বেকার যুবক আগ্রহ প্রকাশ করছে। বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপের দেশ রোমানিয়া, আর্মেনিয়া, আলবেনিয়া, পোল্যান্ড, মাল্টা, সার্র্বিয়া ও ক্রোয়েশিয়ায় অনেকে পাড়ি দেয়।
রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের সংগঠন বায়রার সদস্য এবং কানন ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মো. গিয়াস উদ্দিন আজাদীকে বলেন, করোনার পরিস্থিতি আগের চেয়ে উন্নতি হওয়ায় বর্তমানে বিদেশগামীদের চাপ বেড়েছে। বিশেষ করে সৌদি আরব, ওমান ও আরব আমিরাতে গমন বেড়েছে। তবে এখানে একটা সমস্যা হচ্ছে, বিমান ভাড়া অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। ফলে অনেক দরিদ্র ও মধ্যবিত্তের জন্য সেই টাকা জোগাড় করাটা কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চ মহলের ভাবা দরকার।
চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান এবং জনশক্তি অফিসের উপ-পরিচালক জহিরুল আলম মজুমদার আজাদীকে বলেন, বর্তমানে ইতিবাচক ধারায় জনশক্তি রপ্তানি হচ্ছে। গত মাসে সারা দেশ থেকে এক লাখের বেশি জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে। এই মাসে আশা করি আরো বেশি হবে। সারা দেশের সাথে চট্টগ্রামের চিত্রটাও আশাব্যাঞ্জক। এই ধারা চলতে থাকলে জনশক্তি রপ্তানিতে সুদিন ফিরছে বলা যায়। ইতোমধ্যে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির বিষয়ে চুক্তি হয়েছে। বর্তমান সরকার দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। সেই লক্ষ্যে উপজেলা পর্যায়ে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। কারণ ভবিষ্যতে অদক্ষ শ্রমিকদের জন্য বিদেশের মাটিতে অর্থ উপার্জন করা কঠিন হবে বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউল্টো থেকে দেখা
পরবর্তী নিবন্ধকোটি টাকায় কাঠের ট্রলার