কেন বৃদ্ধি পাবে ফিটনেসবিহীন গাড়ির দৌরাত্ম্য, ব্যবস্থা নিন

| শনিবার , ২০ এপ্রিল, ২০২৪ at ৮:০৩ পূর্বাহ্ণ

সড়কে দুর্ঘটনা রোধে সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তার কথা অনুভব করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেছেন, বিশ্বে সকল বয়সের মানুষের মৃত্যুর ৮ম প্রধান কারণ রোডক্র্যাশ। এর কারণে প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ১৩ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষ মারা যান। একই সাথে ৫২৯ বছর বয়সের শিশু ও তরুণদের মৃত্যুর প্রধান কারণ রোডক্র্যাশ। তাঁরা আরও বলেন, সড়ককে নিরাপদ করার জন্য জাতিসংঘের কৌশলপত্রে পাঁচটি স্তম্ভের কথা বলা হয়েছে। এগুলো হলো, সড়ক নিরাপদ করতে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ যানবাহনের ব্যবস্থা, সড়ক ব্যবহারকারীদের জন্য নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, রোডক্র্যাশ পরবর্তী ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা ও যান চলাচলের নিরাপদ ও সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা। কিন্তু অতীব দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে সড়কে এখন শৃঙ্খলা নেই। প্রতিদিন মৃত্যু আছে, আছে বিশৃঙ্খলা। গত ১৮ এপ্রিল দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত হয়েছে ‘ফিটনেস নেই, তবুও সড়কে ওদের দৌরাত্ম্য’ শীর্ষক প্রতিবেদন। এতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বিআরটিএর দুইটি বিভাগ থেকে প্রাপ্ত হিসেব অনুযায়ী গাড়ির সংখ্যা ৩ লাখ ১৪ হাজার ৫১৬টি। এর মধ্যে ১ লাখ ৫২ হাজার মোটর সাইকেল। মোটর সাইকেলের কোন ফিটনেস সার্টিফিকেট নেই। বাকি ১ লাখ ৬২ হাজার ৫১৬টি গাড়ি ফিটনেস সার্টিফিকেটের আওতায় রয়েছে। এসব গাড়ি রেজিস্ট্রেশন করানোর সময় ফিটনেস সার্টিফিকেট নিয়েছে। যেগুলো এক দুই বছর পরপর নবায়ন করতে হয়। ফিটনেস করার সময় ইনকাম ট্যাক্স এবং ট্যাক্স টোকেন মিলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করে। কিন্তু চট্টগ্রামে বহু গাড়িই রয়েছে যেগুলো রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নেয়ার পর আর ফিটনেস করাতে বিআরটিএ মুখো হয়নি। কোন কোনটি প্রথম কয়েক বছর ফিটনেস করালেও পরবর্তীতে আর করাচ্ছে না।

প্রাপ্ত হিসেব অনুযায়ী চট্টগ্রামে ১ লাখ ১৭ হাজার ৩৮৬টি গাড়ির ফিটনেস নিয়মিত রয়েছে। বাকি ৪৫ হাজার ১৩০টি গাড়ির ফিটনেস নেই। এই হিসেব শুধু রেজিস্ট্রেশন করানো গাড়ির। রেজিস্ট্রেশন করানো ছাড়া গ্যারেজ নম্বরসহ নানা পন্থায় শহরে চালানো গাড়িগুলো এই হিসেবের বাইরে রয়েছে। এছাড়া বিপুল সংখ্যক রেজিস্ট্রেশনবিহীন সিএনজি টেক্সি কোন ধরনের ফিটনেস এবং হিসেব নিকেশ ছাড়াই চলাচল করছে। সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেছেন, চট্টগ্রামে ৬০ হাজারেরও বেশি গাড়ি ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়াই চলাচল করছে। এরমধ্যে প্রাইভেট কার, জীপ, বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, ট্যাংক লরি এবং সিএনজি টেক্সি রয়েছে। শহরে চলাচলকারী রেজিস্ট্রেশনবিহীন অন্তত ১৫ হাজার সিএনজি টেক্সিরই কোন ফিটনেস সার্টিফিকেট নেই। এছাড়া ২ হাজার ৯৯টি বাস, ৩৬ হাজার প্রাইভেট কার এবং প্রায় ৩০ হাজার ট্রাক কাভার্ড ভ্যান এবং কন্টেনার মোভারের একটি উল্লেখযোগ্য অংশেরই ফিটনেস নেই।’

সড়ক দুর্ঘটনার নানা কারণের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলোচালকের অদক্ষতা, চালকের ক্লান্তি, গাড়ির বেপরোয়া গতি এবং গাড়ির ফিটনেস না থাকা। সাধারণের মনে এখন একটাই প্রশ্নমহাসড়ক নিরাপদ হবে কবে? গবেষণায় দেখা গেছে, ৯০ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী যানবাহনের অতিরিক্ত গতি এবং চালকের বেপরোয়া মনোভাব। মহাসড়কে যান চলাচলের সর্বোচ্চ গতি বেঁধে দিয়ে এবং গতি পরিমাপক যন্ত্র ব্যবহার করে চালকদের ওই নির্দিষ্ট গতি মেনে চলতে বাধ্য করা হলে দুর্ঘটনা অনেক কমে আসবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তাছাড়া চালকের দক্ষতার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে। মহাসড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ করতে হবে সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী।

ইতোপূর্বে আমরা পাঠকদের অবগতির জন্য জানিয়েছি যে, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন কিছু সুপারিশ পেশ করেছে। সংগঠনটি বলছে, দক্ষ চালক তৈরিতে উদ্যোগ বৃদ্ধি, চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি, যানবাহন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও পথচারীদের মধ্যে ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করা, মহাসড়কের স্বল্প গতির যানবাহন চলাচল বন্ধ করে সেগুলোর জন্য আলাদা রাস্তা তৈরি, সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ, গণপরিবহনের চাঁদাবাজি বন্ধ, রেল ও নৌপথ সংস্কার এবং সমপ্রসারণ করে সড়ক পথের ওপর চাপ কমানো, টেকসই গণপরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা এবং সড়ক পরিবহন আইন২০১৯ বাস্তবায়ন করতে পারলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে। তবে ট্রাকসহ পণ্যবাহী যানবাহন ও মোটরসাইকেলের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। চট্টগ্রামে ফিটনেসবিহীন গাড়ির দৌরাত্ম্য সীমাহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে। এর লাগাম টানতে হবে। অতি দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধসুধীরলাল চক্রবর্তী : একজন সুদক্ষ সুরকার