কৃষিতে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে

| বৃহস্পতিবার , ২২ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৫:৫৪ পূর্বাহ্ণ

অতি প্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের চাহিদা পূরণে কোনো দেশের ওপর নির্ভর না করে গবেষণার ওপর জোর দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত সোমবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। তিনি দেশে ভোজ্যতেল উৎপাদন বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘ভোজ্যতেল আমদানিনির্ভর হলেও সরিষার তেল স্বাস্থ্যের জন্য সব থেকে ভালো। আর রিফাইন করে এটাকে আরও উন্নত করা যেতে পারে।’ প্রধানমন্ত্রী জানান, সরকার কৃষি সমপ্রসারণে গবেষণার জন্য উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। তিনি বলেন, কৃষি আগে ছিল আমাদের খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার অন্যতম অবলম্বন। এখন কিন্তু কৃষি সেখানে সীমাবদ্ধ নেই। কৃষি এখন অর্থকরী ফসল।

কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়, সেই রপ্তানি বাড়াতে ও কৃষির বাণিজ্যিক ব্যবহার বাড়াতে উদ্যোগ নিতে হবে। বিদেশে যারা উচ্চশিক্ষা নিতে চান সরকার তাদের সহায়তায় যথেষ্ট ব্যবস্থা নিয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কৃষি শিক্ষা ও সহায়তায় একটা ট্রাস্ট ফান্ড করা হয়েছে। সেখান থেকে আমরা উচ্চশিক্ষার জন্য সহযোগিতা করি। আর আমাদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে গবেষণার জন্য সেখানে একটা ভালো সহযোগিতা দেওয়া হয়। কাজেই এদিকে আরও আমাদের সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্বল্প সময়ে গবেষণায় সব থেকে বেশি দক্ষতা দেখিয়েছে এবং অনেক উন্নত জাতের বা অধিক ফলনশীল ধান, বীজ, তৈল বীজ, সবজি, ফলমূল ও বিভিন্ন ফসলের প্রায় ৬৭টি উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছে বলে গর্ববোধ করার কথাও অনুষ্ঠানে জানান তিনি। গবেষণা করে ১২ মাসওয়ারি কাঁঠালের জিনোমসিকোয়েন্স আবিষ্কারের জন্যও অভিনন্দন জানান তিনি। উন্নত বিশ্বে এখন অনেকেই মাংস খেতে চান না এবং এর পরিবর্তে কাঁঠাল খেতে চায় জানিয়ে এ ফল দিয়ে নানা ধরনের পুষ্টিকর দামি খাবার তৈরি হওয়ার কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

দেশে নির্মাণাধীন অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে সেখানে নারীদের জন্য আলাদাভাবে কোটা রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, আমাদের মিশন বা স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের বর্তমান কৃষিকে অগ্রসর কৃষিতে নিয়ে যেতে হবে। আমাদের দেশের প্রায় ৭০ভাগ মানুষ গ্রামে বাস করে, যারা কোন না কোনভাবে কৃষির সাথে জড়িত। আবার দেশের প্রায় অর্ধেক জনসাধারণ কিন্তু কৃষি কাজ করে। আমরা যদি কৃষি খুব ভালো জানি, তাহলে কৃষি কাজ করেই কিন্তু আমরা ধনী হতে পারি। এ কথা বলা বাহুল্য যে, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির প্রধান কৃতিত্ব অবশ্যই কৃষকদের। তারা সারা বছর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উৎপাদনের ধারা বজায় রেখেছে। অনেক সময় প্রয়োজনীয় প্রণোদনা বা সহযোগিতা পায়নি, উৎপাদিত ফসলের খাদ্যমূল্য পায়নি এবং নানা দুর্যোগ দুর্বিপাকে প্রায়ই ফসল হারিয়েছে; তারপরও তারা কৃষিকে ছাড়েনি। কৃষি তাদের জীবিকার অবলম্বন। সেটাই কৃষির সঙ্গে তাদের আটকে রেখেছে। এইসঙ্গে তারা পালন করছে একটা বিশাল দায়িত্ব। তারা দেশের সমগ্র জনগণের প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্যের যোগান দিচ্ছে। তবে আরো উৎপাদন ও লাভ ছাড়া কৃষিতে টিকে থাকা ভবিষ্যতে কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, বর্তমানে আমদের কৃষক যা করে তাতে কিন্তু কৃষকের খুব বেশি লাভ হয় না। তাই এটাকে লাভজনক করতে হলে টেকনোলজি লাগবে। টেকনোলজি এমন একটা জিনিস, যেটা সঠিকভাবে ব্যবহার করলে লাভবান হবে। আর সঠিকভাবে ব্যবহার না করলে লাভবান হবে না। আমরা যেহেতু লাভের কথা বলছি, তাহলে এই লাভজনক করতে হলে, তার জন্য টেকনোলজির সাথে যোগাযোগ বাড়াতে হবে।

আর এই যোগাযোগের মাধ্যম হচ্ছে তিনটা, এগ্রিকালচার এক্সটেনশন অফিসিয়ালস, ডিলার, কোম্পানির স্টাফ। সবকিছুতেই কিন্তু সময়ের নির্দিষ্টতা রয়েছে, অন টাইম সার্ভিস দেওয়ার জন্য ফাস্ট রিচ করতে হবে। কৃষির যান্ত্রিকীকরণের ফলে একদিকে যেমন উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ছে অন্যদিকে তেমনি উৎপাদন ব্যয় কমছে। একই সঙ্গে ফসলের অপচয়ও কমছে। কাজেই কৃষিতে উন্নত প্রযুক্তি বা যন্ত্রপাতি ব্যবহারের অপরিহার্যতা সহজেই অনুমেয়। কৃষিকে সহজ ও লাভজনক করতে হবে জাতীয় স্বার্থেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে