কৃত্রিম জলাধারে ‘সবুজ সোনা’

| বৃহস্পতিবার , ১৮ মার্চ, ২০২১ at ১০:৪১ পূর্বাহ্ণ

প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত সব সামুদ্রিক শৈবাল ও শৈবালজাত পণ্য মানুষের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য। এ কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে শৈবালের চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। দেশেও তাই ক্রমে বাড়ছে ‘সবুজ সোনা’ খ্যাত এই শৈবালের চাষ। পর্যাপ্ত সুযোগ পেলে পণ্যটি হয়ে উঠতে পারে অন্যতম রপ্তানি পণ্য।
বর্তমানে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের দরিদ্র ও অতি দরিদ্র জেলে সমপ্রদায়ের লোকজন বাণিজ্যিকভাবে শৈবাল উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছেন। প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন শৈবালের মধ্যে স্পিরুলিনা প্রজাতির শৈবালের মধ্যে এমন কিছু গুণাগুণ রয়েছে যা আমাদের নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় কাজেও ব্যবহারযোগ্য। খবর বাংলানিউজের।
নীলাভ সবুজ এই শৈবালের রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ই এবং বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন বি, সি, ডি, ই, কে। রয়েছে অনেক সমৃদ্ধ ঔষুধী গুণও। তাই মানুষের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি গেল কয়েক বছর ধরে ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল হিসেবেও ব্যবহার হচ্ছে সবুজ এই শৈবাল। সব মিলিয়ে এই খাদ্যপণ্যটি এখনও অনেকের কাছে নতুন মনে হচ্ছে। তবে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের মধ্যে সামুদ্রিক শৈবাল খাদ্য হিসেবে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
সবুজ শৈবাল সাধারণত দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে চাষ হলেও এবার বরেন্দ্রভূমি খ্যাত রাজশাহীর তানোর উপজেলার আমশো গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। সামুদ্রিক এই শৈবাল চাষে বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত কাজে লাগিয়ে স্থানীয় কলেজ শিক্ষক রাকিবুল সরকার পাপুল তার পরিত্যক্ত ধানের চাতালে কৃত্রিম জলাধার তৈরি করে ফেলেছেন। এখন সেখানে বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করেছেন তিনি। বর্তমানে এটি শৈবাল চাষের জন্য দেশের সর্ববৃহৎ জলাধার।
সমুদ্রের শৈবাল খামারে চাষ করে এরই মধ্যে সাড়া ফেলেছেন পাপুল। তার পরিত্যক্ত ধানের চাতালে বর্তমানে ১৭ হাজার লিটার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন জলাধার রয়েছে। এটি তারই তৈরি করা। এখানেই বাণিজ্যিকভাবে চলছে স্পিরুলিনার চাষ। গত ৪ মার্চ থেকে স্পিরুলিনার আহরণ শুরু হয়েছে। পুষ্টিকর খাদ্য বিবেচিত এই সবুজ শৈবাল চাষ করেই এখন কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন পাপুল।
বিশাল এই জলাধার ঘিরে সূর্যের আলো ঢোকার মতো স্বচ্ছ প্লাস্টিক টিনের ঘর তৈরি করেছেন তিনি। যেহেতু এরা সূর্যের আলো থেকে খাবার তৈরি করে সেজন্য স্বচ্ছ টিন ছাউনি হিসেবে ব্যবহার করতে হয়। বীজ হিসেবে গত ৪ জানুয়ারি শৈবালসহ ১৫ লিটার পানি তার জলাধারে দেন।
খোলা জায়গায় স্পিরুলিনা চাষের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা এই কৃত্রিম জলাধারের চারদিকে নেট জাল আর পলিথিন দিয়ে নিখুঁতভাবে ঘিরতে হয়েছে। এরপর কৃত্রিম উপায়ে ১৭ হাজার লিটার পানিতে শৈবাল বেড়ে উঠছে। সমুদ্রের পানির উপাদানের জন্য জলাধারে ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়। ওষুধ প্রয়োগে এ পর্যন্ত তার এক লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এই ওষুধেই ছয় মাস চলবে। এরপর পানির মাত্রা কমে গেলে তা বাড়াতে আবারও প্রয়োজন অনুপাতে একই উপাদান দিতে হবে।
ব্যক্তি উদ্যোগে রাজশাহীর তানোর স্পিরুলিনার চাষ শুরু হলেও এখনও তা জানে না কৃষি বিভাগ। তবে এমন চাষাবাদ প্রশংসনীয় বলে উল্লেখ করেছেন তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মাহাতো। তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে ‘স্পিরুলিনা’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিষয়টি নতুন হলেও কৃষি বিভাগের সঙ্গে কথা বলে এর বাণিজ্যিক চাষ, উদ্যোক্তা তৈরি ও বাজারজাতকরণের ব্যাপারে ভবিষ্যতে আমরা সাধ্যমতো সহায়তা দেব।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন, বর্তমানে শৈবাল থেকে খাদ্যপণ্য, ঔষুধী পণ্য, প্রসাধনী পণ্য, সার, বায়ো ফুয়েল এবং পরিবেশ দূষণরোধক পণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে। লবণাক্ত, আধা লবণাক্ত পানিতে এই শৈবাল জন্মে এবং অল্প খরচে সহজ পদ্ধতিতে তা চাষাবাদ করা যায়। এ কারণে সামুদ্রিক শৈবাল বিভিন্নভাবে ব্যবহারের পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানিরও সুযোগ রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসেমিকন্ডাক্টর বানাবে বাইটড্যান্স
পরবর্তী নিবন্ধপ্রথম ওয়ানডের ভেন্যু ডুনেডিনে এখন তামিমরা