নির্বাচনী সহিংসতায় কাপ্তাই উপজেলায় একজন ইউপি সদস্য খুন হয়েছেন। তার নাম মো. সজিবুর রহমান (৪০)। রাঙামাটি জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের এ সদস্য কাপ্তাই ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার। তিনি গত ২ দফায় এ ওয়ার্ডে সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। আগামী ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনেও তিনি সদস্য প্রার্থী ছিলেন। তবে তার খুনের ঘটনায় উক্ত ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদ ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও পুরুষ সদস্য পদে নির্বাচন স্থগিত থাকবে বলে জানায় নির্বাচন অফিস।
কাপ্তাই থানা সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাত প্রায় সাড়ে ১১টার দিকে ইউপি সদস্য সজিবসহ কয়েকজন কাপ্তাই নতুন বাজারে টেক্সি স্ট্যান্ড সংলগ্ন একটি বেকারির সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন। এসময় হঠাৎ কয়েকজন ব্যক্তি এসে তাদের উপর হামলা চালায়। হামলায় সজিবুর রহমান মাথায় গুরুতর আঘাত পান এবং আলাউদ্দীন (৪৫), সালাউদ্দীন (৫৫) এবং আব্দুল জলিল নামের সঙ্গের আরো তিনজন আহত হন। আহতদের তাৎক্ষণিক উদ্ধার করে কাপ্তাই উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সজিবকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ব্যাপারে কাপ্তাই থানার ওসি মো. নাসির উদ্দিন জানান, নির্বাচনী দ্বন্দ্বের জেরে এ হত্যাকাণ্ড বলে প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে আরিফুল ইসলাম বাবু (২৫) নামের একজনকে তাৎক্ষণিকভাবে আটক করা হয়। এছাড়া পরবর্তীতে অভিযান চালিয়ে আরো ৩ জনকে আটক করেছে থানা পুলিশ।
এদিকে ইউপি সদস্যকে খুনের খবরে রাতেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। দলে দলে লোকজন ভিড় করতে থাকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহান, ওসি মো. নাসির উদ্দিন এবং সহকারি কমিশনার (ভূমি) মাঈনুল হোসেন চৌধুরী হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। ঘটনার পর রাতে পুরো এলাকায় যৌথবাহিনীর টহল জোরদার করা হয়। গতকাল বুধবার রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এবং জেলা পুলিশ সুপার মীর মোদ্দাচ্ছের হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এদিকে ইউপি সদস্য সজিবুর রহমান হত্যার প্রতিবাদে গতকাল সকালে কাপ্তাই উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া কাপ্তাই নতুন বাজার এলাকায়ও বিক্ষোভ মিছিল করে স্থানীয়রা। গতকাল বাদে আসর নতুন বাজার জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এই হত্যার ঘটনায় গতকাল বিকাল ৫টা পর্যন্ত মামলা হয়নি বলে থানা সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে সজিবুর রহমান নিহত হওয়ার পর কাপ্তাই ইউনিয়নের নির্বাচন পূর্ব নির্ধারিত সময়ে (১১ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত হবে কিনা জানতে চাইলে কাপ্তাই উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তানিয়া আক্তার বলেন, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে পুরুষ সদস্য পদের নির্বাচন স্থগিত রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে চেয়ারম্যান পদ আর সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ অক্টোবর কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী নেথোয়াই মারমাকেও সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে। ঐ হত্যাকাণ্ডের পর নির্বাচন কমিশন ১১ নভেম্বরের ভোট পিছিয়ে ২৮ নভেম্বর নতুন তারিখ ঘোষণা করে। মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে কাপ্তাইয়ে ২ জন প্রার্থী নির্মমভাবে খুন হওয়ায় অন্যান্য নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থীদের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
