কলা গাছের আঁশের সুতা থেকে পণ্য

সচ্ছলতার স্বপ্ন দেখছেন পাহাড়ের নারীরা

বান্দরবান প্রতিনিধি | শনিবার , ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৬:৩৬ পূর্বাহ্ণ

বান্দরবানে কলা গাছের আঁশের সুতা থেকে পণ্য তৈরি করছেন পাহাড়ের নারীরা। ফলে এখন পার্বত্য চট্টগ্রামের গ্রামীণ ও প্রান্তিক পর্যায়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারীরা সচ্ছলতার স্বপ্ন দেখছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রামে কাঁচামালের সহজলভ্যতা ও স্বল্প পরিশ্রমে অধিক মুনাফা লাভের আশায় বান্দরবান সদর উপজেলার কুহালং ইউনিয়নের আমতলী পাড়ার ৮৮ পরিবার এখন কলাগাছের আঁশ (বাঁকল) থেকে ফাইবার বা সুতা তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

এ প্রকল্পের আওতায় রাজবিলা ইউনিয়নের খামাদং পাড়ার ৪৪ পরিবার এবং সূয়ালক ইউনিয়নের আমতলী পাড়ার অর্ধশতাধিক পরিবারও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রশিক্ষণ নিয়ে কলা গাছ থেকে সুতা তৈরি ও পণ্য তৈরির কাজে জড়িত হয়েছে।

বান্দরবান পৌরসভার কালাঘাটা এলাকায়ও কলা গাছের সুতা থেকে বিভিন্ন ধরণের শোপিজ, কাপড় ও পণ্য তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারীরা। এছাড়াও রুমা, রোয়াংছড়ি, লামা এবং আলীকদম উপজেলায়ও পাহাড়ের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর নারীরা কলা গাছের সুতা থেকে বিভিন্ন ধরণের পণ্য তৈরির কাজে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।

বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ওয়াল্ড ভিশন, উদ্দীপন, গ্রাউস উদ্যোক্তাদের মেশিন সরবরাহসহ কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে। স্থানীয় নারী উদ্যোক্তা, সাধারণ নারী এবং মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত সমিতির নারীরাও জড়িত হচ্ছে এ প্রকল্পে।

প্রকল্পের সংশ্লিষ্টরা জানায়, একটি কলাগাছ থেকে কমপক্ষে ২০০ গ্রাম সুতা উৎপাদন করা যায়। সেই হিসেবে পাঁচটি কলাগাছ থেকে ১ কেজি সুতা উৎপাদন করা সম্ভব। যেসব পরিবার এই প্রকল্পে সরাসরি জড়িত থাকবে না, তারাও উৎপাদনকারীর কাছে কলা গাছ বিক্রির মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারছেন।

স্থানীয় নারী উদ্যোক্তা হ্লামেচিং মারমা ও প্রশিক্ষণার্থী এমেচিং মারমা বলেন, কাঁচামালের সহজলভ্যতা, স্বল্প পরিশ্রম এবং স্বল্প পূঁজিতে কলা গাছ থেকে সুতা তৈরি এবং সুতা দিয়ে পণ্য তৈরির প্রকল্পটি সম্ভাবনা দেখাচ্ছে পাহাড়ের নারীদের সচ্ছলতায়।

জেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় কয়েকটি উন্নয়ন সংস্থা প্রকল্পটি সফলতায় সার্বিক সহযোগিতা দিচ্ছেন। জেলা প্রশাসক একজন নারী হওয়ায় তিনি পাহাড়ের নারীদের কর্মসংস্থান তৈরির জন্য প্রকল্পটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে।

ইতিমধ্যে কলা গাছ থেকে সুতা তৈরি এবং বিভিন্ন ধরণের পণ্যও তৈরি করা হচ্ছে। উৎপাদন করা পণ্যগুলো দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ভ্রমণকারীদের আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। ভ্রমণকারীরা আত্মীয় স্বজনদের জন্য গিফট হিসাবে কিনে নিয়ে যাচ্ছে।

বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তীবরিজি জানান, পাইলটিং ভিত্তিতে এই প্রকল্পটি সদর উপজেলার কুহালং ইউনিয়নের আমতলী পাড়া ও রাজবিলা ইউনিয়নের খামাদং পাড়ায় পরীক্ষামূলকভাবে স্থাপন করা হয়েছিল। এই প্রকল্পের সাফল্য ও উদ্যোক্তাদের চাহিদার ভিত্তিতে এটি বর্তমানে সদর, রুমা, রোয়াংছড়ি, লামা ও আলীকদম উপজেলায়ও সমপ্রসারণ করা হয়েছে আগ্রহীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে।

জেলা শহরের কালাঘাটায় কলা গাছের সুতা থেকে নিয়মিত বিভিন্ন ধরণের শোপিজ, কাপড় ও পণ্য তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। এটি পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য সম্ভাবনাময় শিল্প হতে পারে। জেলা প্রশাসন প্রকল্পটি সম্প্রসারণে সার্বিক সহযোগিতা দিচ্ছে। স্থানীয় কয়েকটি উন্নয়ন সংস্থাও নারীদের কর্মসংস্থান তৈরিতে প্রকল্পটিতে কারিগরি সহযোগিতা দিচ্ছেন। প্রকল্পটি এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে বড় ধরণের ভূমিকা রাখতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রধানমন্ত্রীর কোনো টুইটার অ্যাকাউন্ট নেই
পরবর্তী নিবন্ধহাই কোর্টের স্থগিতাদেশে ১৪ বছরেও হয়নি সাক্ষ্য