কর্ণফুলী নদীতে পিলারবিহীন সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা

রাঙামাটি-বান্দরবান সড়ক

প্রান্ত রনি, রাঙামাটি | শনিবার , ২০ এপ্রিল, ২০২৪ at ৬:৪৪ পূর্বাহ্ণ

স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবি রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনায় কর্ণফুলী নদীর উপর পাকা সেতু। বিভিন্ন সময়ে সরকারি দলের রাজনৈতিক নেতারাও আশ্বাস দিয়েছেন চন্দ্রঘোনায় কর্ণফুলী নদীর উপর পাকা সেতু হবে। যদিও স্থানীয়দের আশাআকাঙ্খা ও রাজনৈতিকদের আশ্বস্ত করা বাণীর দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি এখনো দেখা যায়নি। তবে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ নদীতে পাকা সেতু নির্মাণে কর্তৃপক্ষকে একটি প্রস্তাবনা দিয়েছিল আরও দুইবছর আগে। বর্তমানে সেই প্রস্তাবনার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে বলে জানিয়েছে সড়ক বিভাগের ব্রিজ ম্যানেজ উইং (বিএমডব্লিউ)

বিএমডব্লিউ সূত্র জানায়, বর্তমানে কর্ণফুলী নদীতে চন্দ্রঘোনা সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষার কাজ শেষের দিকে। নদীতে স্রোত থাকার কারণে পিলার ছাড়াই সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করছে বিএমডব্লিউ। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি পর্যটক নির্ভর এলাকা হওয়ার প্রেক্ষিতে সেতুটি দৃষ্টিনন্দন করা হবে।

সওজ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি থেকে সড়কযোগে বান্দরবানে যাতায়াতের একমাত্র প্রধান সড়ক এটিই। খাগড়াছড়ি জেলা থেকে রাঙামাটি হয়ে বান্দরবানে যেতে একই পথ ব্যবহার করে থাকেন খাগড়াছড়ি জেলার মানুষরাও। তবে বিকল্প সড়ক হিসেবে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির বাসিন্দারা বান্দরবানে যেতে পারেন চট্টগ্রাম শহর ঘুরে। কর্ণফুলী নদীতে পাকা সেতু নির্মাণ করা গেলে এই পথে যাতায়াত ব্যবস্থা আরও সুদৃঢ় ও সহজ হবে। পাশপাশি নদীতে সেতু নির্মাণের ফলে স্থানীয় বিভিন্ন পর্যটনশিল্পে অর্থনৈতিকভাবেও প্রভাব ফেলতে পারে। নদীর এই অংশের দুই পাড়ের দূরত্ব ৪৩০ মিটার। এরমধ্যে ৫৫০ মিটার সেতুর প্রস্তাব করেছিল সওজ।

সাধারণত নদীতে সেতু নির্মাণের ফলে নদীর গতিপথ ও পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে থাকে। ব্রিজ ম্যানেজমেন্ট উইং রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনা সেতু নির্মাণের জন্য বিস্তারিত সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ এমনভাবে করছে; যাতে করে সেতুর কারণে নদীর পানিপ্রবাহ ও গতিপথ বাধাগ্রস্ত না হয়। ভৌগোলিকভাবে সেতুটির অবস্থান পর্যটন জেলায় হওয়ায় নদীতে দৃষ্টিনন্দন এবং দীর্ঘ স্প্যানে করার পরিকল্পনা রয়েছে বিএমডব্লিউর। তবে চার লেনের সেতুটির দৈর্ঘ্য এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এদিকে, সড়ক বিভাগের একটি নির্ভর সূত্র বলছে, নদীর দুই পাশে পিলার থাকবে, দুইটি পিলারে দীর্ঘ স্প্যানে সেতুর জোড়া লাগবে। নদীর মধ্যে কোনো পিলার দেয়া হবে না। এতে করে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে না। চন্দ্রঘোনার লিচু বাগান বাজারে যানজট এড়াতে একটি ওভারব্রিজে বাজারের বাইর এলাকা থেকে যান চলাচল করা হবে; এমন সব পরিকল্পনায় রয়েছে। এতে করে রাঙামাটিবান্দরবানের পথে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ হবে এবং সময়ও কমবে। তবে এতসব পরিকল্পনা থাকলেও সেতু নির্মাণের দৃশ্যমান অগ্রগতি এখনো দেখছেন স্থানীয়রা।

জানতে চাইলে সওজ ব্রিজ ম্যানেজমেন্ট উইংয়ের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শিশির কান্তি রাউৎ বলেন, ‘চন্দ্রঘোনা সেতুর কাজটি গুরুত্বপূর্ণ ও বড় প্রকল্প হওয়ার কারণে বিস্তারিত সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ প্রক্রিয়াধীন। কর্ণফুলী নদীতে স্রোত ও জোয়ারভাটা আছে। তবে আমরা আশা করছি, শীঘ্রই বিস্তারিত সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হবে। সাধারণত অনেক সময় সেতু নির্মাণ করা হলে নদীর গতিপথতে ডিস্টার্ব করে; নদীর গতিপথ ও পানি প্রবাহকে যেন বাধাগ্রস্ত না করে সেজন্য দীর্ঘ স্প্যান করার পরিকল্পনা রয়েছে। পার্বত্য জেলাগুলো বিউটি এলাকা হওয়ায় এটিকে একটি দৃষ্টিনন্দন সেতুকে হিসেবে তৈরি করা হবে; সেটিকে গুরুত্ব দিয়ে নকশা করা হচ্ছে। নদীর গতিপথকে সম্পূর্ণ নির্বিঘ্ন রাখতে দীর্ঘ স্প্যানের চার লেনের সেতু করা হবে।’ বড় প্রকল্পগুলো বাহিরের ও বিদেশী ঠিকাদারদের দিয়ে সম্পন্ন করা হয়ে থাকে। সাধারণত লোকাল ঠিকাদারদের বড় প্রকল্পের কাজ করার মতো সক্ষমতা থাকে না। অন্যান্য বড় প্রকল্পের মতো চন্দ্রঘোনা সেতু নির্মাণের কাজও আলাদা প্রকল্প নিয়ে করা হবে বলে জানান বিএমডব্লিউর প্রধান শিশির কান্তি রাউৎ।

সওজ রাঙামাটি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা জানান, ‘কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী নদীতে সেতু নির্মাণের জন্য উদ্যোগ নেয়ার পর সওজের ব্রিজ ম্যানেজমেন্ট উইং (বিএমডব্লিউ) সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ করছে। যেহেতু কর্ণফুলী নদীতে জোয়ারভাটা, স্রোত আছে; সেখানে সেতু নির্মাণের আগে কিছু কারিগরি বিষয়াদি রয়েছে। তবে প্রকল্পটির অগ্রগতি কতদূর আমার এখন জানা নেই।’

এদিকে, সড়কে যাতায়াতকারী পরিবহন মালিকদের তথ্যানুযায়ী, প্রতিদিন রাঙামাটিবান্দরবান রুটে বান্দরবান চারটি এবং রাজস্থলী উপজেলা পর্যন্ত দশটি যাত্রীবাহী বাস যাতায়াত করে থাকে। রাঙামাটিবান্দরবান রুটের সব বাস, হালকা, ভারী যানবাহন এই ফেরি দিয়েই কর্ণফুলী পার হতে হয়। যদিও সিএনজি অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, মালবাহী ট্রাকসহ অন্যান্য যান চলাচলের কোনো পরিসংখ্যান জানা সম্ভব হয়নি। স্থানীয়দের হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ৪৫ শতাধিক ছোটবড় যান চলাচল করে ফেরি দিয়ে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধম্যাজিস্ট্রেট আসার খবরে বিয়ের আসর থেকে পালাল বর-কনে
পরবর্তী নিবন্ধতিন দিনের হিট অ্যালার্ট