কম ডিম, হালদায় হতাশা

সামনের জো’র জন্য অপেক্ষা

হাটহাজারী ও রাউজান প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ১৭ মে, ২০২২ at ৪:৪৬ পূর্বাহ্ণ

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে কার্প জাতীয় মা মাছ অল্পসংখ্যক ডিম ছেড়েছে। গত রোববার দিবাগত রাত থেকে গতকাল সোমবার দুপুর পর্যন্ত নদীর বিভিন্ন স্থানে এই ডিম ছাড়ে। ফলে কাঙ্ক্ষিত ডিম না পেয়ে হতাশ হয়ে ডাঙায় ফিরে আসেন ডিম আহরণকারীরা। এর আগে গত শনিবার রাতে নদীতে মাছ নমুনা ডিম পাওয়া গিয়েছিল।
গত রোববার পূর্ণিমার তিথি/জো ছিল। গত বৃহস্পতিবার থেকে এ জো শুরু হয়। আগামী বুধবার পর্যন্ত জো চলবে। নদীতে মা মাছ নমুনা ডিম দেওয়ার পর সংগ্রহকারীরা মনে করেছিল জো চলাকালে যে কোনো সময় মাছ ডিম ছাড়বে। অবশ্য ডিম ছাড়তে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত, শীতল হওয়াসহ অনুকূল পরিবেশ প্রয়োজন। এবার কিন্তু জো চলাকালে সেই রকম পরিবেশ ছিল না। রোববার রাতে বৃষ্টি হয়েছিল। তবে বেশি ডিম ছাড়ার মতো বৃষ্টিপাত হয়নি।
ডিম সংগ্রহের জন্য নদীতে অবস্থানকারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গতকাল সকাল থেকে জালে আটকে ছিল ১০-২০টা করে ডিম। জোয়ারের সূচনাতে সংখ্যা বাড়ার খবরে জাল নিয়ে নামতে থাকে প্রস্তুত থাকা তিন শতাধিক নৌকা। নদীতে সারি সারি জাল পেতেও অনেকে পোনা উৎপাদন করার মতো ডিম সংগ্রহ করতে পারেনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সোমবার দুপুরে নদীর আজিমেরঘাট থেকে মোবারকখীল পর্যন্ত তিন কিলোমিটার এলাকায় নদীতে জাল ফেলেছিল প্রায় তিনশ নৌকা ও ২০টি বাঁশের ভেলায় প্রায় ৬শ জন ডিম আহরণকারী।
হালদার পাড়ে দায়িত্বশীলদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাংলা ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে কর্ণফুলী, সাঙ্গু, মাতামুহুরী, চাঁনখালী, চেংখালী, সোনাইখাল, কুমারখালী, বোয়ালিয়া, সর্ত্তাখালসহ বিভিন্ন নদী, খাল ও ছরা থেকে মা মাছ হালদা নদীতে ছুটে আসে ডিম ছাড়তে। পরিবেশ অনুকূল থাকলে চৈত্র ও বৈশাখ মাসের অমাবস্যা, অষ্টমী ও পূর্ণিমা তিথির জোতে হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ে। কিন্তু এবার চৈত্র ও বৈশাখ মাসে পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃষ্টি হয়নি। যে পরিমাণ হয়েছে তা হালদা নদীর সাথে সংযুক্ত খাল ও ছরায় ঢল সৃষ্টির জন্য পর্যাপ্ত ছিল না। এমনকি নদীর উপরিভাগ থেকেও বৃষ্টিতে ঢলের প্রকোপ দেখা যায়নি। ঢল না থাকায় হালদায় মা মাছ পর্যাপ্ত ডিম ছাড়েনি।
ডিম থেকে রেণু ফোটানোর জন্য উপজেলা প্রশাসন হাটহাজারী অংশে সরকারিভাবে স্থাপিত মদুনাঘাট, মাছুয়াঘোনা, শাহামাদারী হ্যাচারি ও নয়াহাট এলাকায় প্লাস্টিকের কুয়াগুলো সংস্কার করে রেখেছেন। তাছাড়া রাউজান উপজেলার হালদা অংশে স্থাপিত হ্যাচারি গুলোও মেরামত করা হয়েছে। এখন ডিম থেকে রেণু ফোটানোর জন্য ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ডিম আহরণকারীরা।
ডিম আহরণকারী কামাল সওদাগর বলেন, এবার ৬টি নৌকায় এক বালতি করে ৬ বালতি ডিম আহরণ করেছি, যা গত বছরের চেয়ে অনেক কম। কোনো ডিম আহরণকারী ২/৩টি নৌকায় ১ থেকে ২ বালতির উপরে ডিম সংগ্রহ করতে পারেনি।
কী পরিমাণ ডিম পাওয়া গেছে জানতে চাইলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী বলেন, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা, হালদা গবেষকদের নিয়ে একটি টেকনিক্যাল কমিটি রয়েছে। তারা হিসাব নিকাশ করে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহিত করলে সেখান থেকে আহরিত ডিমের পরিমাণ জানানো হবে।
হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিদ্যাবিভাগের অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার ডিম কম ছেড়েছে। তবে সামনে আরও জো রয়েছে। এসব জোতে পরিবেশ অনুকূলে থাকলে পুনরায় ডিম ছাড়বে বলে আশা করছি।
হালদা গবেষক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলী আজাদী বলেন, পরিবেশ অনুকূলে না থাকায় এই জোতে ডিম কম ছেড়েছে। এই মাসে ২৮ থেকে ৩১ তারিখে আর একটি জো আছে সেই জোতে পর্যাপ্ত বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হলে মা মাছ পর্যাপ্ত ডিম ছাড়বে বলে প্রত্যাশা করছি। অবশ্য জুন মাসের জোতেও ডিম ছাড়তে পারে বলে তিনি জানান।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহিদুল আলম বলেন, এবার ডিম কম পাওয়া গেছে। সামনে পরিবেশ অনুকূলে থাকলে পরের তিথিতে মা মাছ নদীতে ডিম ছাড়তে পারে। হালদা রক্ষার জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়ার পরও পর্যাপ্ত পরিমাণ ডিম পাওয়া যায়নি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশেখ হাসিনার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ
পরবর্তী নিবন্ধপেঁয়াজের কেজি ৪৫ টাকা অস্বাভাবিক না : বাণিজ্যমন্ত্রী