চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা দলের সদ্য ঘোষিত কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন সংগঠনটির একাংশের নেতৃবৃন্দ। কমিটি বাতিল না করলে প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন তারা। গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে ঘোষিত কমিটি থেকে পদত্যাগ করা ১৩ নেত্রীসহ পদবঞ্চিতরা নিজেদের দাবি উপস্থাপন করেন। সংবাদ সম্মেলন থেকে ঘোষিত কমিটিকে বাণিজ্যের কমিটি বলেও দাবি করা হয়।
বিগত কমিটির সিনিয়র সহ–সভাপতি ফাতেমা বাদশা বলেন, নতুন কমিটিতে আমাকে সদস্য পদ পর্যন্ত দেয়া হয়নি। আমাদের কেন্দ্রীয় নেত্রী কথা দিয়েছিলেন, চট্টগ্রামের নেতৃস্থানীয় নারীদের সঙ্গে নিয়ে আমাদের নেতাদের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা করে কমিটি করা হবে। কিন্তু আমরা যারা মাঠের কর্মী, মামলার আসামি হয়েছি, তাদের বাদ দিয়ে কীভাবে কমিটি করা হল।
নতুন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আঁখি সুলতানা নিজের পদ প্রত্যাখানের ঘোষণা দিয়ে বলেন, যাদের কখনও আন্দোলন সংগ্রামে দেখা যায়নি, তাদের কমিটিতে রাখা হয়েছে। আমরা মনোয়ারা বেগম মণি বা জেলি আক্তারের বিপক্ষে নয়। কিন্তু আমরা চাই নেতৃত্বের বিকাশ হোক। এখানে আমরা যারা আছি, সবাই জেল–জুলুমের শিকার হয়েছি। অনেকে বলছে আমরা চেয়ারের জন্য আন্দোলন করছি। এটি সঠিক নয়। যে কমিটি হয়েছে এটা গুপ্ত কমিটি, বাণিজ্যের কমিটি, সিন্ডিকেট কমিটি। এ কমিটি আমরা মানি না। আমরা এই কমিটি প্রত্যাখান করলাম। নতুন কমিটি বাতিল করে কেন্দ্র থেকে পুনরায় কমিটি ঘোষণা না করা পর্যন্ত আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমাদের প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে।
নতুন কমিটিতে সহ–সভাপতি পদ পাওয়া সাবেক চসিক কাউন্সিলর জেসমিনা খানম বলেন, আমরা কোনো অপরাজনীতির সঙ্গে জড়িত হতে চাই না। চট্টগ্রামে মহিলা দলের যে কমিটি দেওয়া হয়েছে সেটাতে আমরা নারাজি প্রকাশ করছি। এ কমিটির ১০ জনকেও আমরা চিনি না। শুভঙ্করের ফাঁকির মতো কমিটি দিয়ে গেলেই যে মেনে নেব, এমনটা হতে পারে না। চট্টগ্রামের বিএনপির শীর্ষ নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা কি এই কমিটির বিষয়ে কিছুই জানতেন না? আপনাদের কাছে প্রশ্ন রেখে গেলাম, কেন ত্যাগীদের তারা মূল্যায়ন করলেন না। চট্টগ্রামের ৪১ ওয়ার্ডে মহিলা দলের কমিটি আছে। তৃণমূল থেকে তেমন কাউকে কমিটিতে রাখা হয়নি। কাদের স্বার্থে এই কমিটি দেওয়া হয়েছে?
নবগঠিত কমিটির সভাপতি মনোয়ারা বেগম মণির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উনি বছরে সাত মাস দেশের বাইরে থাকেন। তিনি আমেরিকার সিটিজেন। সাত মাস যিনি সংগঠনের কোনো কাজ করেন না, তাকে দেওয়া হয়েছে সভাপতির পদ। আর আমরা যারা রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে দলের জন্য খেটে যাই, তাদের কোনো মূল্যায়ন করা হয়নি। উনার সঙ্গে আমাদের ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কোনো দ্বন্দ্ব নেই। তাকে আমরা ভালোবাসতাম। এখন আর ভালোবাসি না। আমরা নতুন নেতৃত্ব চাই।
সংবাদ সম্মেলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক মহিলা বিষয়ক সম্পাদক পারভীন চৌধুরী, নগর মহিলা দলের বিগত কমিটির প্রচার সম্পাদক দেওয়ান মাহমুদা আক্তার লিটা, সাবেক শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ফাতেমা কাজল, সদস্য নার্গিস বেগম, সাইমা হক, মনোয়ারা বাবুল, খাদিজা বেগম, নাজমা বেগম, মর্জিনা খসরু উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে সংবাদ সম্মেলন চলাকালে কথা বলতে না দেয়ার অভিযোগ তুলে লালখান বাজার ওয়ার্ড মহিলা দলের কয়েকজন নেত্রী বের হয়ে যান।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার মনোয়ারা বেগম মনিকে সভাপতি ও জেলী চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৩৬ সদস্য বিশিষ্ট নগর মহিলা দলের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর আগেও টানা দুইবার এ দুইজন সভাপতি–সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
