কবি আইনুন নাহার : মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

সোহেল লুতফুল হাসনাত | বুধবার , ২৯ জুন, ২০২২ at ৫:১৭ পূর্বাহ্ণ

কবি আইনুন নাহার। জন্ম চট্টগ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। তাঁর পিতা মরহুম মোহাম্মদ একরামুল হক, মাতা-মরহুমা আছিয়া খাতুন উভয়ে ছিলেন সাহিত্যানুরাগী। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, তৎকালীন ভারতীয় আইন পরিষদের সিনিয়র সদস্য কাজেম আলী মাস্টারের পৌত্রী আইনুন নাহার কৈশোর থেকেই কাব্য চর্চায় অনুরাগী হলেও নিয়মিত লেখা শুরু করেন পঞ্চাশ দশকের শেষ দিকে। ষাট দশক থেকে লিখেছেন বেগবান গতিতে। সমাচার, মাহে নও, পাকিস্তানী খবর, দিলরুবা, আজাদ, ইসলামাবাদ, বেগম, বান্ধবী, ইত্তেফাক, সংবাদ, আজাদীসহ বহু পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে।

তাঁর শিক্ষা জীবনের একটা বড় অংশ কেটেছে চট্টগ্রাম সরকারী গার্লস কলেজে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৮ সালে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী কবি আইনুন নাহার কিছুদিন শিক্ষকতাও করেছেন। চট্টগ্রাম বেতারে স্বরচিত কবিতা পাঠের আসরের নিয়মিত শিল্পী ছিলেন কবি আইনুন নাহার। এছাড়াও চট্টগ্রাম লেখিকা সংঘের আজীবন সহ-সভানেত্রী ছিলেন তিনি।

ন্যাপ চট্টগ্রাম এর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও পরে সভাপতি এডভোকেট লুতফুল হক মজুমদারের সহধর্মিণী কবি আইনুন নাহার স্বভাবগতভাবেই ছিলেন কিছুটা প্রচার বিমুখ।

গতকাল ২৮ জুন ছিল এই মহীয়সী কবির পঁচিশতম মৃত্যুবার্ষিকী। তাঁর প্রকাশিত একমাত্র কবিতার গ্রন্থ ‘উত্তরণ’ থেকে একটি কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে আজকের লেখা শেষ করছি।

সূর্যের লাল রঙে

স্বপ্নের রঙ মেখে আজাদী এলো
পুলকের শিহরণ এনে দিতে
দুর্ভাগা দেশে।
লাল নীল কাগজের ফুলঝুরি দিয়ে
এসেছে নতুন সাজে
রিক্ত বক্ষ বুভুক্ষ অন্তরে।
অনাগত আশাটুকু হাতছানি দেয়
বাঁচার আশ্বাসে কাঁপে ব্যথাহত
অসংখ্য জীবন।

অকস্মাৎ ভেঙে যায়
সোনালী স্বপন,
অঢেল পানির ঢেউয়ে ভেসে যায়
আগামীর সব আয়োজন।
ভগ্ন চালায় বসে শকুনির পাল
মৃত বীভৎস লাশ ছিঁড়ে খুঁড়ে খায়
নিপীড়িত জনতার বাঁচবার দাবি
শূন্যে মিলিয়ে যায়
বিক্ষুব্ধ প্রলয়ে,
নিভে যায় উৎসবের আলো।

তবু জাগে অবসন্ন প্রাণে
আগামী দিনের এক নতুন প্রত্যাশা
ভগ্ন ভিটেয় পুনঃ তুলে নেবো ঘর,
আবার ফোটাবো হাসি
প্রতিটি হৃদয়ে
সূর্যের লাল রঙে ভরে যাবে
বিধ্বস্ত অন্তর।

লেখক : এডভোকেট

পূর্ববর্তী নিবন্ধমানুষ ও মুখোশ
পরবর্তী নিবন্ধদূরের টানে বাহির পানে