কন্টেনার সংকটে বেড়েছে ফ্রেইট চার্জ

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৮ মে, ২০২১ at ৫:১০ পূর্বাহ্ণ

এবার বৈশ্বিক মন্দা করোনার প্রভাব পড়েছে আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহনেও। বিশ্বের দেশে দেশে লকডাউনের কারণে জাহাজ চলাচল সীমিত হয়ে পড়ায় খালি কন্টেনার সংকট তৈরি হয়েছে। এতে ফ্রেইট চার্জ (জাহাজ ভাড়া) বেড়ে যাওয়ার কারণে আমদানি-রপ্তানিকারকরা বিপাকে পড়েছেন। রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত তিন-চার মাসে ফ্রেইট চার্জ দ্বিগুণের চেয়েও বেড়েছে। করোনার কারণে এমনিতেই রপ্তানি আদেশ কমে গেছে। প্রতিযোগিতামূলকভাবে কম মূল্যে অর্ডার নিতে হচ্ছে। তার উপর ফ্রেইট চার্জ বেড়ে যাওয়ার রপ্তানিখাতে নতুন করে সমস্যা তৈরি হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, শ্রীলংকার কলম্বোসহ কয়েকটি বন্দরে জাহাজ ও কন্টেনারের তীব্র জট তৈরি হয়েছে। ফলে বিশ্বব্যাপী আমদানি-রপ্তানির কন্টেনার সংকট দেখা দিয়েছে। যার কারণে ফ্রেইট চার্জ বাড়িয়ে দিয়েছে শিপিং লাইনগুলো। রপ্তানিকারক ব্যবসায়ী হিফস এগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ বিডি’র স্বত্বাধিকারী ছৈয়দ মুহাম্মদ শোয়াইব হাছান দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘এখন খালি কন্টেনারের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এতে ফ্রেইট চার্জ বেড়ে গেছে। গত সপ্তাহে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ বলিভিয়াতে পণ্য পাঠাতে সাড়ে ৭ হাজার ডলার ফ্রেইট দিতে হয়েছে। কয়েক মাস আগেও সাড়ে তিন হাজার ডলার ছিল। গায়ানাতে ৬ হাজার ডলারে শিপমেন্ট দিতে হয়েছে। অথচ সাধারণ ফ্রেইট হচ্ছে ২৮শ ডলারের মতো। কন্টেনার সংকটের কারণে গায়ানা, বলিভিয়া, অ্যাঙ্গোলা, মেক্সিকোর বেশিরভাগ এক্সপোর্ট আটকা রয়েছে।’ তিনি বলেন, ফ্রেইট বেড়ে যাওয়ায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। করোনাকালে এমনিতেই রপ্তানি কম।
পোশাক রপ্তানিকারক মালিকদের সংগঠন বিজেএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘করোনাকালে একদিকে অর্ডার কমে গেছে। এখন অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে অর্ডার নিতে হচ্ছে। যাতে কোনো রকমে বৈশ্বিক এ মহামারী সৃষ্ট মন্দার মধ্যেও কারখানাগুলো সচল রাখা যায়। যাতে গার্মেন্টেসের শ্রমিকদের কর্মহীন হতে না হয়। এত্তোকিছুর মধ্যেও ভ্যাট, ট্যাক্স বাড়ছে প্রতিনিয়ত। এখন কন্টেনার সংকট দেখিয়ে নতুন করে অলিখিতভাবে ফ্রেইট চার্জ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। ফ্রেইট চার্জ বাড়ার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পোশাক খাত।’
খালি কন্টেনার সংকটের বিষয়ে ইনফিনিটি লজিস্টিকের আবুল হাসান বাদল দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটে খালি কন্টেনার সংকট রয়েছে। লকডাউনের কারণে প্রিন্সিপালেরা (শিপিং কোম্পানি) ফ্রেইট চার্জ বাড়িয়ে দিয়েছে। করোনার কারণে অনেকে কার্গোগুলো ঠিক সময়ে খালাস নিতে পারছে না। এতে কন্টেনারগুলো স্টোরেজ আকারে বন্দরে বন্দরে পড়ে থাকায় সংকট তৈরি হয়েছে। আমদানি ও রপ্তানি সবক্ষেত্রে একই সমস্যা। আমেরিকা ইউরোপে এখন ফ্রেইট অনেক বেড়ে গেছে। ওইসব দেশে আগে ১২শ ৫০ ডলারের ফ্রেইট ২৫শ ডলার, যেটির ফ্রেইট ২৫শ ডলার, সেটি ৫ হাজার ডলার হয়েছে। অনেকক্ষেত্রে আরও বেড়েছে।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স এসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অমিয় শংকর বর্মণ দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘এক সময়ে ফ্রেইট অনেক কমে গিয়েছিল। লস দিয়ে জাহাজ চালাতে গিয়ে অনেক জাহাজ মালিক দেউলিয়া হয়ে গেছেন। এখন বড় বড় অনেক শিপিং কোম্পানির মধ্যে কয়েকটি কয়েকটি মিলে একটি কোম্পানিতে ঢুকে গেছে। অনেকগুলো বড় শিপিং লাইন বিক্রি হয়ে গেছে। ফ্রেইট বৃদ্ধি পাওয়ার ক্ষেত্রে এটিও একটি কারণ। তাছাড়া বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের ইমপোর্ট কার্গোগুলো শ্রীলংকায় (ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্টে) আটকা পড়ছে। অনেক কন্টেনার এক মাসের বেশি সময় ধরে পড়ে আছে। অথচ এসব কন্টেনার দুই তিন দিনের মধ্যে ট্রান্সশিপমেন্ট হয়ে চলে আসার কথা। সিঙ্গাপুরেও আটকা আছে। এতে কন্টেনারের স্বাভাবিক চলাচল কমে গেছে। এজন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কন্টেনার সংকট দেখা দিয়েছে। এতে ফ্রেইট বেড়েছে। গত তিন চার মাসের ব্যবধানে ইউরোপ আমেরিকার প্রায় জায়গায় ফ্রেইট দ্বিগুণ হয়ে গেছে।’
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের পরিচালক শাহেদ সরোয়ার দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘কোভিডের কারণে পৃথিবীর সব জায়গায় কন্টেনারের সংকট রয়েছে। প্রধানত এশিয়া থেকে কন্টেনারগুলো ইউএসএতে যায়। এই কন্টেনারগুলো সময়মতো ফেরত আসলে সংকট হয় না। কোভিড শুরু হওয়ার পর লকডাউনের কারণে ইউরোপ আমেরিকার দেশগুলোতে স্বাভাবিক সময়ে কন্টেনার খালি হয় নাই। অনেক সময় দুই তিন দিনের স্থলে দুই তিন সপ্তাহও লেগে গেছে। এতে পৃথিবীজুড়ে কন্টেনার নিয়ে অস্বাভাবিকতা তৈরি হয়েছে। এটার কারণে ক্রাইসিস হয়ে ফ্রেইটও বেড়ে গেছে। তবে আমাদের আমদানি বেশি, রপ্তানি কম। এতে আমাদের বন্দরে কন্টেনারের কোনো সংকট নেই। বিশ্ব বাজারের প্রভাবের কারণে ফ্রেইট বেড়েছে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধপঁচিশে বৈশাখ আজ কবিগুরুর জন্মদিন
পরবর্তী নিবন্ধরাশিয়ান ভ্যাকসিন একে-৪৭ এর মতোই নির্ভরযোগ্য : পুতিন