‘কঠোর লকডাউন’ কার্যকর করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও কাজে লাগান

| শনিবার , ৩ জুলাই, ২০২১ at ৭:০২ পূর্বাহ্ণ

সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় গত ১লা জুলাই থেকে ‘কঠোর লকডাউন’ শুরু হয়েছে আমাদের বাংলাদেশে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ রাস্তায় বের হলে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানানো হয়েছে, বলা হয়েছে আনা হবে আইনের আওতায়। সে হিসেবে প্রথম দিনে রাজধানীতে অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যন্ত্রচালিত কোনো যানবাহন চলতে দেওয়া হচ্ছে না জরুরি সেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের গাড়ি ছাড়া। এ বিধি কার্যকর থাকবে শুরু থেকে যাওয়া সাত দিনের সর্বাত্মক লকডাউনের পুরোটা সময়।
‘কঠোর লকডাউনে’ কার্যকর করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতাও উল্লেখ করার মতো। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন প্রবেশ পথে অবস্থান নিয়েছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে নগরের সিটি গেইট এলাকায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা তল্লাশি শুরু করেন। এছাড়াও লকডাউনে চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন প্রবেশ পথে মোতায়েন করা হয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। মাঠে রয়েছে পুলিশ, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও আনসার সদস্যরা। এদিকে, নগরে সেনাবাহিনী, র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশের সঙ্গে রয়েছেন ১২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। উপজেলা পর্যায়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী কমিশনাররা (ভূমি)। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুকের উদ্ধৃতি দিয়ে বাংলানিউজ বলেছে, সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার সদস্যদের নিয়ে নগরের সার্কিট হাউস থেকে যাত্রা শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার।
আসলে বর্তমানে সংক্রমণের যে হার, তা মোকাবিলায় কঠোর লকডাউনের বিকল্প নেই। কিন্তু সেই সঙ্গে মনে রাখতে হবে সারাদেশে লকডাউনের মতো বিশাল কর্মযজ্ঞ একা সরকারের পক্ষে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এ কাজে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, বেসরকারি সংস্থা ও নাগরিক সমাজকেও যুক্ত করতে হবে। ইতোমধ্যে লকডাউনে দরিদ্র মানুষের জীবনে বেশ দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই খাবারে কষ্টে আছে; বিশেষ করে দৈনিক উপার্জনের ওপর নির্ভর করে যাদের বেঁচে থাকতে হয়। তাই তাদের জন্য নগদ অর্থ সহায়তার ব্যবস্থা করা একান্ত প্রয়োজন, যেন তারা খাদ্য কিনে প্রাণধারণ করতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, লকডাউনের কারণে যাঁদের জীবিকা বন্ধ হয়ে যাবে, তাদের নিয়ে ভাবতে হবে। রিকশাচালক, ভ্যানচালক, অটোরিকশাচালক, দিনমজুর, গৃহকর্মী ও হকারশ্রেণির মানুষ ভীষণ বিপদে পড়বেন। গ্রামে যাওয়ারও উপায় থাকবে না। এজন্য প্রথম দুদিন কোথাও কোথাও লকডাউন কার্যকর হতে দেখা যায়নি। তারা বাধ্য হয়ে জীবন জীবিকার তাগিদে বের হয়েছে পথে। তাঁদের ৭ দিন কিংবা ১৫ দিন চলার মতো (লকডাউনের মেয়াদ যত দিন থাকবে) খাবার অথবা অর্থ দেওয়ার পরিকল্পনা আছে কিনা আমরা জানি না। না থাকলে তা চিন্তা করা জরুরি। যদি না থাকে, জীবিকার সঙ্গে বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবনও হুমকির মুখে পড়বে। তাই সর্বাত্মক লকডাউনে খেটে খাওয়া মানুষের যেন খাদ্যাভাব না হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে সরকারকে। প্রয়োজনে তাদের জন্য ব্যবস্থা করতে হবে নগদ অর্থ কিংবা খাদ্যসামগ্রীর।
আমরা জানি, করোনার সংক্রমণ রোধে সরকারের যে কোনো কঠোর কর্মসূচির প্রতি জনগণের সমর্থন আছে। সবাই চায় করোনা নিয়ন্ত্রণে থাকুক। কিন্তু তা যদি আগের বারের মতো হয়, যদি লকডাউন বাস্তবায়িত না হয়, তাহলে সবার ক্ষতি। লকডাউনের উদ্দেশ্য সফল না হলে জীবন ঝুঁকিতে পড়বে, মারাত্মকভাবে ব্যাহত করবে সমস্ত কার্যক্রম। কাজটি কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে কিংবা সেনা টহল বসিয়ে হবে না, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাজে লাগাতে হবে।
বাস্তবিক অর্থে ‘লকডাউন’ কার্যকর করতে হবে। মাস্ক পরিধান ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বিষয় দুটি যেন কোনোমতেই উপেক্ষিত না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। সরকারি নির্দেশনাবলি ও স্বাস্থ্যবিধি- উভয়ই মেনে চলতে সর্বসাধারণকে বাধ্য করতে হবে। সাসনে আসছে কোরবানি। সংক্রমণের রোধ করার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ এটি। কোরবানির পশুর হাটকে কেন্দ্র করে যে লোকসমাগম হয়, তা বন্ধ করতে না পারলে লকডাউনের উদ্দেশ্য ব্যাহত হওয়ার আশংকা রয়েছে। এ বিষয়েও বিকল্প উপায় বের করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে