কক্সবাজার ও বান্দরবানে শত শত গ্রাম প্লাবিত

ঘুমধুমে দুজনের মৃত্যু

আজাদী ডেস্ক | বুধবার , ২৮ জুলাই, ২০২১ at ১০:৫৮ পূর্বাহ্ণ

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে ভারী বৃষ্টি, সাথে পাহাড়ি ঢল ও জোয়ারের পানি। কক্সবাজারে প্লাবিত হয়েছে শতাধিক গ্রাম। পানিবন্দি ৫ লাখ মানুষ। বান্দরবানেও অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উখিয়ায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাহাড় ধসে আলীকদমের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আঁচ লেগেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও। মানুষকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে প্রশাসনও তৎপর হয়েছে।
এদিকে নাইক্ষ্যংছড়িতে কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। ঘুমধুমে বন্যার পানিতে ভেসে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে রোহিঙ্গা শিশুর লাশ।
কক্সবাজারে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত
কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে টানা তিন দিনের বর্ষণজনিত পাহাড়ি ঢল ও সামুদ্রিক জোয়ারে কক্সবাজারের নিম্নাঞ্চলের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার বাড়িঘর ও গ্রামীণ রাস্তাঘাট ৫ থেকে ৬ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
বর্ষণ অব্যাহত থাকায় স্থানীয় প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাসরত লোকজনদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে মাইকিং করছে। সদর, ঈদগাঁও, চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, টেকনাফ, উখিয়া, রামু ও মহেশখালীতে ভারী বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অব্যাহত বর্ষণে মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদী এবং ছোট-বড় কয়েকটি খাল-ছড়া দিয়ে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের তোড়ে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী জানিয়েছেন, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উখিয়ার কয়েকটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প, রামুর কচ্ছপিয়া, গর্জনিয়া, সদরের ঈদগাঁও, পোকখালী, ইসলামাবাদ, টেকনাফের হোয়াইক্যং ও বাহারছড়া ইউনিয়ন এবং চকরিয়ার সুরাজপুর-মানিকপুর, ডুলাহাজারা, চিরিঙ্গা ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম। এসব গ্রামের কয়েক হাজার বাড়ি অন্তত পাঁচ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে।
অপরদিকে সামুদ্রিক জোয়ারের পানি উপকূলীয় এলাকায় কয়েক ফুট উচ্চতায় আঘাত হানছে। এতে সাগরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে সৈকতের ঝাউবাগান।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী জানান, শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ সময় বেশ কয়েকটি এলাকায় বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কক্সবাজার আবহাওয়া দপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুর রহমান জানান, বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের কারণে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। কক্সবাজার উপকূলে চলাচল করা নৌযানগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদে থেকে মাছ শিকারের কথা বলা হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ১১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আরও দুদিন মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা কাজ করছেন। পাহাড়ে ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে নিরাপদে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে আসতে মাইকিং করা হচ্ছে। প্লাবিত এলাকায় শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ঘুমধুমে পানিতে ভেসে ২ জনের মৃত্যু
নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি জানান, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ৫ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল গতকাল প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে বাইশারী ও ঘুুমধুমের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ডুবে গেছে। রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কের যোগাযোগ সড়ক বন্ধ হয়ে গেছে। ঘুমধুমে কোনারপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৫ হাজার রোহিঙ্গা কষ্টে পড়েছেন।
থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আলমগীর হোসেন বলেন, সোমবার বিকেলে ঘুমধুম ছড়া থেকে এক রোহিঙ্গা শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার নাম আবদুর রহমান (৮)। তার ধারণা, লাশটি ৩ দিন আগের।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সালমা ফেরদৌস জানান, পরিস্থিতি জেলা প্রসাশনকে জানানো হয়েছে। পাহাড় ধস নিয়ে মাইকিং করা হচ্ছে।
এদিকে, ঘুমধুমে পানিতে ভেসে আরও ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বিকালে ঘুমধুম ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বড়ুয়া পাড়া সড়কে এ ঘটনা ঘটে।
৬ নম্বর ওয়ার্ডের চৌকিদার রঞ্জিত বড়ুয়া বলেন, তারা ৩ জন বন্যার পানি দেখতে রাস্তায় বের হন। এক পর্যায়ে তারা সড়কের কোমর পানির অংশ পার হতে গিয়ে দুজন স্রোতে ভেসে যায়। এদের একজন সুমন বড়ুয়া (১৭)। তার বাড়ি ঘুমধুমের শীল পাড়ায়। তার সাথে আবদুর রহিম (২৮) নামে এক রোহিঙ্গাও ভেসে গেছেন। তবে তার খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি।
ঘুমধুমের তুমব্রুর কোনারপাড়া এলাকা পাহাড়ি ঢলের পানিতে ডুবে গেছে। আর সড়কের কয়েকটি স্থানের পাহাড় ধসের কারণে ঘুমধুম-তুমব্রু-নাইক্ষ্যংড়ি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
উখিয়া বর্ষণে ক্ষতি
উখিয়া প্রতিনিধি জানান, বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও জোয়ারের পানিতে উখিয়ার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হচ্ছে। পালংখালী, জালিয়াপালং, রত্নাপালং, হলদিয়াপালং ও রাজাপালং ইউনিয়নে ক্ষতি হয়েছে। পালংখালী, জালিয়াপালং ও রাজাপালং ইউনিয়নে অন্তত ২৩/২৫ কাঁচা ও মাটির ঘর ভেঙে গেছে।
নাফ নদীর জোয়ারের পানিতে আঞ্জুমানপাড়া, রাহমতের বিল ও বালুখালীতে প্রায় দেড় হাজার একর চিংড়ি ঘের তলিয়ে গেছে। সড়ক ও সবজি ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে। অনেক স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
উখিয়া ভূমি অফিসের ভিতরে প্রায় হাঁটু পরিমাণ পানি। গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করেছেন সহকারী কমিশনার ভূমি মো. তাজ উদ্দিন। ভূমি অফিসের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে।
উখিয়া ত্রাণ কর্মকর্তা (পিআইও) মো. আল আমিন বলেন, বিভিন্ন এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হচ্ছে।
লামার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, পাহাড় ধস
লামা প্রতিনিধি প্রতিনিধি জানান, পাহাড়ি ঢলে লামা উপজেলার পৌর এলাকাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। লামা-আলীকদম সড়কের দুই জায়গা পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যাওয়ায় আলীকদমের সাথে সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধস দেখা দিয়েছে। লোকজনকে নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে।
লামা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মজনুর রহমান জানান, উপজেলা দুর্যোগ প্রস্তুতি কমিটির জরুরি সভা হয়েছে। পৌর এলাকাসহ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৩৯টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের চিঠি দেওয়া হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভালো কাজে যেমন পুরস্কার তেমনি খারাপ কাজে শাস্তিও হবে
পরবর্তী নিবন্ধলক্ষাধিক পরিবহন শ্রমিক বেকায়দায়