লক্ষাধিক পরিবহন শ্রমিক বেকায়দায়

লকডাউনে অনেকে পাল্টেছেন পেশা ১০ টাকার ওএমএস চালুর দাবি

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৮ জুলাই, ২০২১ at ১০:৫৮ পূর্বাহ্ণ

চলমান কঠোর লকডাউনে বেকায়দায় পড়েছেন চট্টগ্রামের প্রায় লক্ষাধিক পরিবহন শ্রমিক। অনেকে পেশা পাল্টে সবজি বিক্রেতা, হকার কিংবা রিকশা চালনার কাজও করছেন। তবে বেশিরভাগ পরিবহন শ্রমিক পরিবার পরিজন নিয়ে অভাব অনটনে দিন কাটাচ্ছেন। পরিবহন শ্রমিকদের অভিযোগ- গত বছর লকডাউনে সরকারি-বেসরকারি নানা সহযোগিতা পাওয়া গেলেও এবার সরকারি সহযোগিতাও মিলছে না। সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি শ্রমিকদের জন্য ১০ টাকা কেজির ওএমএস চালুর দাবি জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে কঠোর লকডাউনে সাধারণ ছুটি চলছে অফিস-আদালতে। বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। এবার বন্ধ রাখা হয়েছে গার্মেন্টস কারখানাও। ফলে চলছে না বেশিরভাগ গণপরিবহন। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকটা অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে শ্রমিকরা। শ্রমিক সংগঠনগুলোর দাবি, অফিস আদালত বন্ধ থাকলেও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারিরা বেতন পাচ্ছেন। কিন্তু পরিবহন শ্রমিকরা এক প্রকার দিনমজুর। গাড়ির চাকা বন্ধ থাকলে পরিবহন শ্রমিকরা কোন বেতন পান না। চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্তরের পরিবহন শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রামে নগর ও জেলা মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক রয়েছে সিএনজি টেক্সি চালক। এ সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজারের কাছাকাছি। বাস, মিনিবাস, হিউম্যান হলার, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, লরিসহ মিলিয়ে রয়েছে আরো প্রায় ৪০ হাজারের অধিক শ্রমিক। এসব শ্রমিকদের বেশিরভাগই দিনে এনে দিনে খাওয়া শ্রমিক। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত চলবে কঠোর লকডাউন। ফলে একপ্রকার ঘরবন্দি হয়ে আছেন দেশের মানুষ। এতে সব পর্যায়ের কর্মহীন মানুষগুলোর দুর্ভোগও বিলম্বিত হচ্ছে। তবে সরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন কম আয়ের লোকজনকে ত্রাণ সহযোগিতা দিলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
চট্টগ্রাম সিএনজি টেক্সি-টেম্পু শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘ নগরীতে নিবন্ধিত সিএনজি টেক্সি রয়েছে ১৩ হাজার। প্রাইভেট আছে আরও এক হাজারের বেশি। অনেক সময় একেকটি সিএনজি টেক্সি রাতে-দিনে দুইজন চালক চালান। জেলায়ও প্রায় ৪০ হাজারের অধিক সিএনজি টেক্সি ও টেম্পু শ্রমিক রয়েছে। লকডাউনে বেশিরভাগ সিএনজি টেক্সি-টেম্পু চলাচল বন্ধ রয়েছে। যারা কিছুটা ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় নামছে, তাদের ট্রাফিক ধরে মামলা দিচ্ছে। একেকটি মামলায় সর্বনিম্ন ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হয়। এটি শ্রমিকদের উপর একপ্রকার জুলুম। অথচ রাস্তায় বড় লোকের প্রাইভেট গাড়ি অবাধে চলাচল করছে।’
তিনি বলেন, ‘গত বছর লকডাউনে শহরে ও গ্রামে সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে বিত্তবানরা ত্রাণ সহযোগিতা দিয়েছিল। এবার কোন সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। এতে চালকদের কেউ কেউ সবজি বিক্রয় করছে, কেউ ফুটপাতে হকারি করছে। আবার অনেকে প্যাডেল ও ব্যাটারি রিকশা নিয়ে রাস্তায় নেমেছে।’ সরকারি সহযোগিতার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গত রোজার ঈদেও কিছু সংখ্যক শ্রমিককে এককালীন আড়াই হাজার টাকা করে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন থেকে ৮ হাজার শ্রমিকের তালিকা নেয়া হলেও তিন হাজারের মতো শ্রমিককে এ প্রণোদনা দেয়া হয়। যারা পাননি তাদের তালিকা জেলা প্রশাসনের কাছে রয়েছে। এখন সরকারিভাবে বেকার চালকদের প্রণোদনার আওতায় আনা উচিত।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মো. মুছা গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, বৃহত্তর চট্টগ্রামে পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের অধীনে ৫৫টি সংগঠন রয়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রামে প্রায় লক্ষাধিক পরিবহন শ্রমিক রয়েছে। পরিবহন সেক্টরে প্রত্যেক শ্রমিকই দিনমজুর। গাড়ি চললে তাদের আয় হয়। গাড়ি না চললে কোন রোজগার নেই। চলমান লকডাউনে পরিবহন শ্রমিকরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। কারো পরিবারে এখন খাবার নেই। পরিবহন শ্রমিকদের প্রায় সকলেই কষ্টে আছেন। তবে গত ঈদে সারাদেশে প্রায় সোয়া দুই লাখ পরিবহন শ্রমিককে নগদ আড়াই হাজার টাকা করে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামে কিছু সংখ্যক পরিবহন শ্রমিক সেই প্রণোদনা পেয়েছিল। কিন্তু চলমান লকডাউনে সরকারি কিংবা ব্যক্তি পর্যায়েও কোন সহযোগিতা মিলছে না। তাই পরিবহন শ্রমিকদের জন্য ওএসএসের মাধ্যমে ১০ টাকা কেজি দরে চাল দেয়া উচিত। এতে অন্তত খাদ্য সংকট মেটানো সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, পরিবহন শ্রমিকদের পরিচয় পত্র রয়েছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে স্ট্যান্ডগুলোতে ওএমএস চালু করা হলে বেকার শ্রমিকরা কিছু হলেও সুফল পাবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকক্সবাজার ও বান্দরবানে শত শত গ্রাম প্লাবিত
পরবর্তী নিবন্ধঅ্যামনেস্টির বক্তব্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত : তথ্যমন্ত্রী