কক্ষ বরাদ্দ নিয়ে কর্মকর্তাদের মাঝে চলছে মান অভিমান

নির্বাচনের পাঁচ মাসেও গঠিত হয়নি সাব কমিটি

ক্রীড়া প্রতিবেদক | শুক্রবার , ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ at ৭:০৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে গত বছরের ২৫ নভেম্বর। সে হিসেবে প্রায় পাঁচ মাস হতে চলল নতুন কমিটির মেয়াদ। কিন্তু এই পাঁচ মাসেও গঠিত হয়নি বিভিন্ন উপ কমিটি সমুহ। এ বছরের শুরুর দিকে উপ কমিটি সমুহ গঠনের একটা তোড়জোর চললেও তা আবার ঠান্ডা হয়ে গেছে। ফলে কবে নাগাদ এই সব উপ কমিটি গঠিত হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেননা কেউই। অবশ্য নির্বাচনের পঁচ মাসের মত হয়ে গেলেও এই সময়ে নির্বাহি কমিটির সভা হয়েছে দুটি। যার মধ্যে প্রথমটিকে বলা যায় দায়িত্ব হস্তান্তরের সভা। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর হয়েছিল সে সভা। এরপর এ বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারী হয়েছে দ্বিতী সভাটি। এরপর আর কোন সভা হয়নি সিজেকেএস নির্বাহি কমিটির। ফলে উপ কমিটি সমুহ গঠনের আলোচনাও চলে গেলে একরকম হিমাগারে। যদিও পুরানো উপ কমিটি দিয়ে আগের মেয়াদে চার বছর পার করে দেওয়ার রেকর্ডতো রয়েছেই। এবারেও যদি তেমনটি হয় তাহলেতো অবাক হওয়ার কিছুই থাকবেনা।

নির্বাচনের পর উপ কমিটি গঠনের বিষয়টি এক রকম হিমাগারে চলে গেলেও আরেকটি বিষয়ে এখন বেশ সরব জেলা ক্রীড়া সংস্থা। তা হচ্ছে নির্বাহি কমিটির কর্মকর্তাদের কক্ষ বরাদ্দ। গত আট বছরেরও বেশি সময় ধরে জেলা ক্রীড়া সংস্থার মেইন বিল্ডিং এর নিচে দু পাশের দুটি কক্ষ ফুটবল এবং ক্রিকেট সম্পাদকের কক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যেখানে ক্রিকেট এবং ফুটবলের জরুরী সভাও সমুহও হয়ে থাকে। ভবনের তৃতীয় তলার দক্ষিণ পাশে গত চার বছর ধরে ছিল দুই যুগ্ম সম্পাদকের কক্ষ। তবে এবারের নির্বাচনের পর কক্ষগুলো নতুন করে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য বিপুল অর্থ ব্যয়ে কক্ষগুলো সাজানো হচ্ছে। অবশ্য তৃতীয় তলায় করা হয়েছে তিনটি কক্ষ। যেখানে একটি কাউন্সিলরদের জন্য, একটি নির্বাহি সদস্যদের জন্য এবং একটি করার কথা সহ সভাপতিদের জন্য। নিচের দুটি কক্ষ দুই যুগ্ম সম্পাদকের জন্য করার কথা শোনা যায়। আর তাতেই বাধ সাধে সহ সভাপতিরা। তাদের দাবি যেহেতু তাদের বয়স বেশি তাই তাদের পক্ষে উপরে উঠা কষ্টকর হবে। তাই নিচের দুটি কক্ষ চার সহসভাপতির নামে বরাদ্দ দেওয়ার দাবি তোলে। সংস্থার সহসভাপতি হাফিজুর রহমান নিচের দুটি কক্ষ সহ সভাপতির বরাবরে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য সাধারণ সম্পাদক বরাবরে একটি চিঠিও দিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। যদিও কক্ষগুলো পুরোপুরি প্রস্তুত।

ভবনের নিচের দুটি কক্ষ যদি সহসভাপতি কিংবা যুগ্ম সম্পাদকদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয় তাহলে ফুটবল এবং ক্রিকেট কমিটি কোথায় যাবে ? তেমন প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। সংস্থার নির্বাহি কমিটির একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন এ বিষয়ে আসলে কোন সিদ্ধান্ত নেই। তবে লোকজন বলাবলি করছে ক্রিকেটকে স্টেডিয়ামের মূল প্রবেশ পথের সামনে অনেকটাই পরিত্যক্ত ভবনে পরিনত হওয়া ভবনটিতে স্থানান্তর করা হবে। আর ফুটবলকে পাঠিয়ে দেওয়া হতে পারে জিমনেসিয়াম ভবনে জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের পাশে। আবার কেউ কেউ নাকি প্রস্তাব করেছেন স্টেডিয়ামের উত্তর এবং দক্ষিণ প্রান্তে যে দুটি টাওয়ার সেখানে ফুটবল এবং ক্রিকেটকে পাঠিয়ে দিতে। সেগুলোও অনেকটা পরিত্যক্ত ভবনের মত। যদিও এই দুই ভবনে বিভিন্ন দলের খেলোয়াড়দের রাখা হতো। এই দুই ভবনের একটিতে আবার সিজেকেএস এর কিছু কর্মচারি ডেরা পেতেছে। তাই ক্রিকেট এবং ফুটবল সম্পাদকের ঠিকানা কোথায় হবে তা এখনো নিশ্চিত হয়নি। বা নিশ্চয়তা পায়নি।

সিজেকেএস কর্মকর্তাদের কক্ষ বরাদ্দ নিয়ে এই মান অভিমানের খেলা বেশ হাস্য রসের সৃষ্টি করেছে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনে। কেউ কেউ বলছেন খেলাধুলা গোল্লায় গেলেও নিজেদের জন্য একেবারে চকচকে, তকতকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসার ব্যবস্থা করতে হবে। কর্মকর্তাদের মধ্যে কক্ষ নিয়ে মান অভিমান চললেও চট্টগ্রামের খেলাধুলা ক্রমশ চলে যাচ্ছে পেছনে। গত ৩১ ডিসেম্বর জেলা ক্রীড়া সংস্থা একটি পঞ্জিকা প্রকাশ করে। যাতে ছিল ক্রিকেট হবে জানুয়ারী থেকে মে পর্যন্ত। যা চলছে। ফেব্রুয়ারীতে বাস্কেটবল, জুডো, মার্চে দাবা, এপ্রিলে টেবিল টেনিস এবং হ্যান্ডবল আয়োজিত হওয়ার কথা থাকলেও এখনো সে সব ইভেন্ট আয়োজন করতে পারেনি সংস্থাটি। অথচ কর্মকর্তাদের মধ্যে চলছে কক্ষ নিয়ে কাইজ্জ্যা। জাতীয় পর্যায়েতো ক্রমশ অবনতি হচ্ছে চট্টগ্রামের পারফরম্যান্স। অথচ ভাঙ্গা ঘরে বসেই এই চট্টগ্রাম থেকে অনেক নামি দামি ক্রীড়াবিদ সৃষ্টি করেছে চট্টগ্রামের ক্রীড়া সংগঠকরা। বসার চেয়ার ছিলনা, বাতাস খাওয়ার পাখা ছিলনা। কিন্তু মাঠে মান সম্পন্ন খেলা ছিল। জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্টত্ব ছিল, জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব ছিল। আর এখন সব আছে কিন্তু মান সম্মত খেলা নেই। জাতীয় পর্যায়ে উন্নতি নেই অবনতি আছে।

দেশের সবচাইতে ধনী ক্রীড়া সংস্থা চট্টগ্রাম। কিন্তু খেলাধুলা নিয়ে নেই কোন পরিকল্পনা। সেটা স্বল্প মেয়াদী, মধ্য মেয়াদী কিংবা দীর্ঘ মেয়াদী। দীর্ঘ দিন ধরে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনের সাথে যুক্ত আছেন এমন একাধিক ক্রীড়া সংগঠক বলেন এই মুহুর্তে চট্টগ্রামের উচিত দক্ষ ক্রীড়া সংগঠকদের নিয়ে একটি প্যানেল করে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহন করা। বিশেষ করে চার/পাঁচটি ইভেন্টকে টার্গেট করে এগুতে হবে। তবেই ফিরতে পারে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনের সুদিন। অন্যতায় স্টেডিয়াম এলাকায় গাড়ি বাড়বে, চকচতে, তকতকে কক্ষ হবে কিন্তু খেলাধুলা গোল্লায় যাবে। যদিও একাধিক ক্রীড়া সংগঠক অভিজ্ঞ এবং দক্ষ সংগঠকদের নিয়ে প্যানেল গঠনের সম্ভাবনাকে স্বপ্ন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাদের ভাষায় চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ সংগঠকদের কোন দাম নেই। মূল্যায়ন হয় তেলেসমাতি করতে পারা লোকদের। অন্তত গত আট বছরে তেমনটিই দেখা গেছে। তাই এই মেয়াদেও চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনের আহামরি কোন উন্নতি হবে তেমনটিও বিশ্বাস করতে চাননা অনেকেই। তাদের মতে যেমন চলছে তেমনই চলবে। উন্নতির কোন সম্ভাবনা নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজব্বারের বলী খেলা ২৫ এপ্রিল
পরবর্তী নিবন্ধসিএসইতে লেনদেন ১৮.০৫ কোটি টাকা