ওষুধ জীবনরক্ষাকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সিংহভাগ ওষুধ বিদেশ থেকে আমদানি করে চলতো বাংলাদেশ। সেই জায়গা থেকে বাংলাদেশ এখন ওষুধ রপ্তানি করছে। বর্তমানে দেশীয় ৫০-৬০টি প্রতিষ্ঠান বিশ্বের প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ওষুধ রপ্তানি করে চলেছে। বর্তমানে কাঁচামাল আমদানি, কাঁচামাল তৈরিতে সরকারি সহযোগিতা পাওয়া গেলে ওষুধ শিল্পেও আছে অপার সম্ভাবনা। যথাযথ সরকারি পৃষ্টপোষকতা পাওয়া গেলে রপ্তানি আয়ে এ শিল্প পোষাক খাতকেও পেছনে ফেলতে পারবে বলে বিশ্বাস এ শিল্পে জড়িতদের।
চলমান ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট ছিল। যা আগের ২০১৯-২০ অর্থবছরের চেয়ে ১৩.২ শতাংশ বেশি। ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে মোট বাজেটের ৫ দশমিক ২ শতাংশ অর্থাৎ ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়। ওষুধ শিল্পও এই খাতের অন্তর্ভুক্ত। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ২৫ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা। বিগত বাজেটে অগ্রাধিকারের শীর্ষে রাখা হয় স্বাস্থ্যখাতকে। আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ৬ লক্ষ কোটি টাকার বাজেট দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার।
এদিকে করোনা মহামারিকালে দেশের বেশিরভাগ শিল্পের আয় ব্যাপক পরিমাণে কমলেও বেড়েছে ওষুধ শিল্পের। চিকিৎসা নিয়ে মানুষের মাঝে উৎকন্ঠা থাকলেও দেশে ওষুধের জন্য কোন দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়নি। করোনাকাল শুরু থেকে ২০২০ সালে দেশের ওষুধের বাজারে বিরাট প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ শিল্পে জড়িতরা বলছেন, ২০২০ সালে ওষুধ শিল্প ১০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। করোনাকালে দেশিয় অনেক প্রতিষ্ঠান জেনেরিক অ্যান্টি-করোনাভাইরাস ওষুধ তৈরি করেছে, যা বিশ্বজুড়ে অনেক মানুষের জীবন বাঁচাতে সহায়তা করেছে। ফেভিপিরাভির ও রেমডেসিভিরের মতো অ্যান্টি-করোনাভাইরাস ওষুধ উৎপাদন ছিল ওষুধ শিল্পের বড় অর্জন। করোনাকালে বাংলাদেশি তৈরি রেমডেসিভির আমেরিকা, মধ্য এশিয়াা ও আফ্রিকায় রপ্তানি হয়েছে।
এ শিল্পের উদ্যোক্তারা বলছেন, ওষুধ শিল্পের প্রায় ৯০ শতাংশ কাঁচামাল ভারত, চীন ও ইউরোপ থেকে আমদানি করতে হয়। দেশেও ওষুধের অনেক কাঁচামাল তৈরি হয়। তাই কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক কমানো গেলে এবং দেশে কাঁচামাল তৈরিতে প্রণোদনা দেয়া গেলে দেশের ওষুধ শিল্প অনেক এগিয়ে যাবে। এতে একদিকে দেশে অপেক্ষাকৃত কমমূল্যে ওষুধ কিনতে পারবেন সাধারণ মানুষ, অন্যদিকে রপ্তানি আয়েও শীর্ষে যেতে পারবে শিল্পটি।