ওদের চোখে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন

ক্রীড়া প্রতিবেদক | রবিবার , ১৪ আগস্ট, ২০২২ at ৫:৩৯ পূর্বাহ্ণ

আশীষ ভদ্র ও মামুনুল ইসলাম। বাংলাদেশের দুই প্রজন্মের দুই সেরা ফুটবলার। মামুনের পৃথিবীতে আলোর মুখ দেখার সময়েই বুট জোড়া তুলে রেখেছেন আশীষ ভদ্র। তারপরও আশীষের সাথে তুলনা হয় মামুনের। কারণ দুজনই বাংলাদেশের অধিনায়ক ছিলেন এবং দলকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন পায়ের জাদু দিয়ে। আশীষ ভদ্র ফুটবলকে বিদায় বলেছেন অনেক আগেই। কিন্তু মামুনের পায়ের জাদু চলছে এখনো। এখনো বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ফুটবলারের তালিকা হলে সেখানে নিশ্চিতভাবেই থাকেন চট্টগ্রামের এই দুই সন্তান।

গতকাল শনিবার এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে এসেছিলেন এই দুই ফুটবল লিজেন্ড ক্ষুদে ফুটবলার বাছাই কার্যক্রমে। ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন চোখে নিয়ে হাজারো ক্ষুদে ফুটবলার হাজির মাঠে। আর তা দেখে যেন নস্টালজিক হয়ে গেলেন দুজনই। যদিও এভাবে ফুটবলার হওয়ার পরীক্ষা দিতে হয়নি মামুনকে। কারণ বিকেএসপির ছাত্র হিসেবে তার বেড়ে ওঠা সেখানেই। কিন্তু আশীষ ভদ্র এমন পরীক্ষা দিয়েছেন জীবনে অনেকবার। তবে কতদিন পর এ রকম ফুটবলারের মেলা দেখলেন সেটা মনে করতে পারলেন না। এই লিজেন্ডের কাছে যেন মনে হচ্ছিল ফুটবলের জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এ যেন ফুটবলের নব জাগরণ।

ফরটিস ফুটবল ক্লাবের আয়োজনে গতকাল যেন এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে ক্ষুদে ফুটবলারের মেলা বসেছিল। সেসব ফুটবলারদের পরখ করছিলেন এ দুজন। আর সে সাথে যেন ফিরে যাচ্ছিলেন নিজের শৈশবে। ফরটিস ফুটবল ক্লাবের এই উদ্যেগকে স্বাগত জানালেন অকপটে। আশীষ ভদ্র যেমন বললেন এই পদ্ধতিতে এগিয়ে যেতে থাকলে চট্টগ্রাম থেকে ফুটবলার বেরিয়ে আসতে বাধ্য। ক্ষুদে ফুটবলারদের উপস্থিতি দেখে উচ্ছসিত মামুনুলও। চট্টগ্রামে দীর্ঘ দিন পর এমন একটি ফুটবলার বাছাই ক্যাম্প হলো যা সত্যি প্রশংসনীয় বললেন এই জাতীয় তারকা। কথায় আছে জহুরী জহর চিনে। মামুনের চোখও এড়ায়নি কিছু তরুণের পায়ের কাজ। তার অভিমত সঠিক পদ্ধতিতে এগুলে চট্টগ্রাম থেকে বছরে কম করে হলেও জাতীয় মানের দশজন ফুটবলার বেরিয়ে আসবে।

আশীষ কিংবা মামুন। দুই প্রজন্মের দুই সেরা ফুটবলার। এদের মধ্যে কি আশীষ কিংবা মামুনকে দেখতে পাচ্ছেন এই দুই লিজেন্ড। আশীষ ভদ্রের আশা তার চাইতে ভাল ফুটবলার পাওয়া যাবে এখানে। তবে তিনি জোর দিলেন সঠিক পরিচর্যার উপর। আশীষ ভদ্র বললেন ফুটবলের টানে এই বয়সেও প্রখর রোদে বসে ফুটবলারদের পরখ করছেন। এই টানটা যেন আয়োজকদের মধ্যে থাকে। মামুনও দেখছেন ভাবিষ্যতের অনেক মামুন এই তরুণদের মাঝে। তবে আশীষ কিংবা মামুনতো একদিনে হয় না। সময় লাগে, তৈরি করতে হয়। তবে এই বয়সে বাচ্চারা যে স্কিল দেখাচ্ছে তা সত্যিই তাদের প্রতিভার ঝলক।

ফরটিস এফসি এবারে বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলের সেরা আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে খেলবে। আর সেজন্য শক্তিশালী দলও গঠন করেছে তারা। মামুনও রয়েছে সে দলে। তবে ক্লাবটির এমন উদ্যেগের ফলে চট্টগ্রাম থেকে ফুটবলার বেরিয়ে আসবে তেমনটি প্রত্যাশা বাংলাদেশ দলের সাবেক দুই অধিনায়কের।

ফুটবল কেবলই শক্তি দিয়ে খেলা যায় না। এর জন্য লাগে মেধা এবং কৌশল। সে কৌশল কীভাবে রপ্ত করা যায় তরুণদের সে দিক্ষাও নিতে বললেন এই দুই লিজেন্ড। শুধু ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখলে হবে না। তার জন্য মানতে হবে নানা নিয়ম-শৃক্সখলা। সবচাইতে বড় কথা অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই। নিজেকে গড়ে তুলতে হলে কঠোর অনুশীলন করতে হবে বলেও তরুণদের জানিয়ে দিলেন এই দুই তারকা ফুটবলার।

আশীষদের যুগে ফুটবল এতটা আধুনিক কিংবা প্রযুক্তি নির্ভর ছিল না। এখন ফুটবল এগিয়ে গেছে অনেক দূর। শুধু মাঠে অনুশীলন করে এখন আর ফুটবলার হওয়া যাবে না। যথাযথ কোচিং এর পাশাপাশি জিম, ট্রেনিং, সেমিনার, পুথিগত পাঠ এসবও আয়ত্ত করতে হয়। এখন ফুটবল কেবলই মাঠের খেলা নয়। মাঠের বাইরেও এখন ফুটবল শেখানো হয়। এই আধুনিকতার সাথেও তরুণদের নিজেকে সম্পৃক্ত করতে হবে বলে জানালেন আশীষ ভদ্র এবং মামুনুল ইসলাম। তবে তরুণদের মাঝে ফুটবলের প্রতি যে অনুরাগ সেটা দেখে এই দুই লিজেন্ড মনে করছেন এদের মধ্য থেকেই বেরিয়ে আসবে আগামী দিনের আশীষ ভদ্র কিংবা মামুনুল ইসলাম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রথমবার বাঁচল, দ্বিতীয়বারে হারিয়েই গেল
পরবর্তী নিবন্ধউত্তাল সাগরে মাছ ধরার ট্রলার ডুবি