এ বিজয় জনগণের

ভোট নিয়ে এত আগ্রহ কখনো দেখিনি ।। কোনো দল নির্বাচনে না এলে, তার মানে এটা নয় যে গণতন্ত্র নেই ।। পর্যবেক্ষণে আসা বিদেশিদের সঙ্গে মতবিনিময়ে শেখ হাসিনা

| মঙ্গলবার , ৯ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৯:২৩ পূর্বাহ্ণ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নয়, জনগণের জয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভোট পর্যবেক্ষণ করা দেশিবিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের সঙ্গে গতকাল সোমবার মতবিনিময়ে তিনি এ কথা বলেন। গণভবনের এই মতবিনিময়ে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, এবারে নির্বাচনে জনগণ যে ভোট দিয়েছে, নির্বাচিত করেছে এবং আমাদের অনেক স্বতন্ত্রও নির্বাচিত হয়েছে। অন্যদলগুলোরও বেশকিছু নির্বাচিত হয়েছে। এই দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে এবং নির্বাচনকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য সব ব্যবস্থা নিয়েছি। এ বিজয়টা হচ্ছে জনগণের বিজয়। এ বিজয়টা আমার বিজয় না। জনগণের সরকার গঠন করবার অধিকার ও ক্ষমতা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেটা নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন সংগ্রাম করেছি জনগণের ভোটের অধিকার সেটা তারা নিজেরা প্রয়োগ করবে সেটা সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।

রোববারের ভোট দেখতে আসায় বিদেশিদের ধন্যবাদও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি মনে করি আমাদের দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য এটা অত্যন্ত যুগান্তকারী ঘটনা।

নির্বাচনটা যে অবাধ, সুষ্ঠু হতে পারে সেই দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে পেরেছি। আপনাদের আগমন আমাদের দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, মানুষের অধিকারটা আরও সুরক্ষিত হয়েছে। আপনারা যার যার দেশে ফিরে যাবেন, বাংলাদেশের কথা বলবেন। আপনাদের আগমন আমাদের গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থাকে আরও মজবুত ও শক্তিশালী করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

কোনো দল নির্বাচনে না এলে, তার মানে এটা নয় যে গণতন্ত্র নেই: এদিকে কোনো দল নির্বাচনে অংশ না নিলে, তার মানে দেশে গণতন্ত্র নেই, এটা বোঝায় না বলে মন্তব্য করে আওয়ামী সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের অংশগ্রহণই মূল বিষয়। গতকাল গণভবনে অনুষ্ঠানে বিবিসির সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। প্রশ্নোত্তর পর্বে বিবিসির সাংবাদিক সামিরা হুসেইন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেন, ২০১৮ সালের পর আপনি প্রধান বিরোধী দলকে সংলাপে অন্তর্ভুক্ত করেননি। তাদের অনুপস্থিতিতে গতকালকের নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। যেখানে ৬০ শতাংশ মানুষ ভোট দেয়নি। আপনার সরকার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সীমিত করেছে, মানবাধিকার কর্মীরা এমন সমালোচনা করছে। আপনি কি এখনো বিশ্বাস করেন কোনো বিরোধী দল ছাড়া বাংলাদেশে একটি গতিশীল গণতন্ত্র থাকবে? এই প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নিজেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে। যদি কোনো দল নির্বাচনে অংশ না নেয়, তার মানে এটা বোঝায় না সেখানে গণতন্ত্র নেই। আপনাকে বিবেচনা করতে হবে জনগণ অংশ নিয়েছে কি নেয়নি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। তারা (বিএনপিজামায়াত জোট) চেষ্টা করেছে, বাধা দিয়েছে জনগণ যাতে ভোট দিতে না যায়। কিন্তু জনগণ তাদের কথা শোনেনি। কারণ আমাদের জনগণ এখন তাদের অধিকার নিয়ে খুবই সচেতন। ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার। শেখ হাসিনা বলেন, গণতন্ত্রের যদি আলাদা কোনো সংজ্ঞা থাকে, সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি এটা জনগণের অধিকার। যখন জনগণ অংশগ্রহণ করে, তারা তাদের সরকারের জন্য ভোট দেয়। সুতরাং জনগণের অংশগ্রহণই মূল বিষয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, নির্বাচন হয়েছে। তারা চেষ্টা করেছে। কিন্তু বন্ধ করতে পারেনি। তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে কিন্তু পারেনি। বিএনপি কত মানুষ মেরেছে, সে প্রশ্ন তিনি করেননি। এটা শুধু এ বছরই নয়। তারা ২০১৪১৫ সালে একই কাজ করেছিল। ৩ হাজার মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়েছে, ৫ শত মারা গেছে। তাদের কীভাবে গণতান্ত্রিক দল বলা যায়? তারা সন্ত্রাসী দল এবং মানুষ তাদের সমর্থন করে না।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বিবিসি সাংবাদিককে আরও বলেন, আপনি যে দলটির (বিএনপি) কথা বলেছেন, তারা কী করেছে? তারা আগুন দিয়েছে, আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করে। মাত্র কিছুদিন আগে তারা ট্রেনে আগুন দিয়েছিল এবং নারীশিশুসহ মানুষ হত্যা করেছে। এটা কি গণতন্ত্র?

শেখ হাসিনা বলেন, হ্যাঁ, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। কিন্তু যখন সাধারণ মানুষকে হত্যার চেষ্টা করা হয়, শুধুমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশে। আমি জানি না এটি কি রাজনীতি। এটা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। কারোই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করা উচিত না। মানুষ এটা গ্রহণ করে না। এটা শুধু একটা ঘটনা নয়। এ ধরনের ঘটনা এ দেশে একাধিকবার ঘটেছে। আমরা ধৈর্য দেখিয়েছি। আমরা মানুষের অধিকার নিশ্চিত করেছি।

ভারতের টেলিগ্রাফের সাংবাদিক দেবাদ্বীপ পুরোহিত বলেন, আপনি যখন গণতন্ত্রের কথা বলছেন, তখন বাংলাদেশে আপনার বিরোধী দলেরও প্রয়োজন হবে। এ ব্যাপারে আপনি কী ভাবছেন? জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আপনি কী চান? আপনি কি বলছেন, আমার উচিত একটি বিরোধী দল গঠন করা? আমি তা করতে পারি? আমি নিজেও বিরোধী দলে ছিলাম দীর্ঘ সময়। আমরা আমাদের দলকে সংগঠিত করেছি। সুতরাং বিরোধীদেরও তাদের নিজেদের দলকে সংগঠিত করতে হবে। তারা যদি তা করতে ব্যর্থ হন, তাহলে তার জন্য কে দায়ী?

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আপনি যদি আমাকে বলেন বিরোধী দলের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে সংগঠিত করতে। যদি আপনি চান আমরা সেটা করতে পারি। কিন্তু সেটা সত্যিকারের বিরোধী দল হবে না।

ভোট নিয়ে এত আগ্রহ কখনো দেখিনি: বিএনপিজামায়াত ও সমমনাদের বর্জনের এই নির্বাচনে কৌতূহল ছিল ভোটার উপস্থিতি কেমন হয়। ভোটের দিন দেখা যায়, যেসব আসনে শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন, সেগুলোতে ভোটের হার তুলনামূলক বেশি, আর যেসব আসনে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না, সেগুলোতে ভোটার উপস্থিতি কম। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন ৪১.৮ শতাংশ ভোট পড়ার কথা জানায়, যদিও বিএনপি ও সমমনারা ভোট ‘বর্জন করায়’ দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। ভোট পর্যবেক্ষণে আসা বিদেশিরা এখন পর্যন্ত নেতিবাচক কোনো মন্তব্য করেননি। বরং তাদের পক্ষ থেকে যেসব বক্তব্য এসেছে তাতে আওয়ামী লীগ বেশ আনন্দিতই।

শেখ হাসিনা মনে করেন, ভোট নিয়ে মানুষের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনার কমতি ছিল না। তিনি বলেন, আমি অনেকবারই নির্বাচন করেছি। সেই ১৯৮৬ সাল থেকে আটবারই আমার নির্বাচন করা হয়ে গেছে। তবে এত মানুষের আগ্রহ আগে দেখিনি। আমি মনে করি, বাংলাদেশের জনগণ অনেক আনন্দিত এবং নির্বাচন যারা পর্যবেক্ষণ করেছেন, মতামত দিয়েছেন সেটা উপযোগী। সেই জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার করেছি : ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের ফলাফলের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সবসময় এটাই চেষ্টা ছিল নির্বাচনটাকে সুষ্ঠু করা। মানুষের যে ভোটের অধিকারটা অর্থাৎ সে যাকে চায়, কে সরকারে থাকবে, সেটা মানুষই সিদ্ধান্ত নেবে। সেই জন্য নির্বাচনের ব্যবস্থাকে সংস্কার করেছি। নির্বাচন চলাকালীন সময়ে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সবাইকে নির্বাচন কমিশনের অধীনস্ত করে মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করাসেটাই লক্ষ্য ছিল। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ভোটের হার বাড়াতে নিজ দলের নেতাদেরকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে বাধা না দিয়ে বরং উৎসাহ দিয়েছে। তাতে বহু আসনে ভোটের হার বেড়েছে।

নির্বাচনটাকে ‘ব্যতিক্রমী’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সাধারণত আমরা দলের প্রার্থী ঠিক করে দেই বা সব দল তাদের প্রার্থী নির্বাচন করে দেয়। এবার আমরা আমাদের প্রার্থী নির্বাচিত করেছি, পাশাপাশি এ নির্বাচনটা উন্মুক্ত করে দিয়েছি, যার ইচ্ছামত দাঁড়াতে পারবে। বিএনপির ভোট বর্জন নিয়ে তিনি বলেন, দলটি সামরিক স্বৈরশাসকের হাতে তৈরি। তারা নিজেরা চলতে পারে না, নিজেদের জনসমর্থন থাকে না। সেই জন্য নির্বাচনকে ভয় পায়। আমাদের দল হল জনগণের।

নতুন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন হয়ে গেছে, এখনো গেজেট হয়নি। তাই আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। গেজেটের পর শপথ হবে, এরপর আমাদের সংসদীয় দলের বৈঠক করতে হবে। সেখানে সংসদীয় দলের নেতা কে হবে সেটা নির্বাচন করতে হবে। তখন সরকার গঠন করতে রাষ্ট্রপতির কাছে যেতে হবে। সরকার গঠন হবে। এটাই সংবিধানিক প্রক্রিয়া, তা অনুসারী করতে চাচ্ছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশেখ হাসিনাকে চীন ভারতসহ ১১ রাষ্ট্রদূতের শুভেচ্ছা
পরবর্তী নিবন্ধবঙ্গোপসাগরে ৫ দিন ধরে নিখোঁজ ১৩ মাঝিমাল্লা