এবার তীরে এসে ডুবল তরী

ক্যারিবীয়দের কাছে ৩ রানের হার

ক্রীড়া প্রতিবেদক | শনিবার , ৩০ অক্টোবর, ২০২১ at ৬:২৮ পূর্বাহ্ণ

শিরোপা ধরে রাখার মিশনে আসা ওয়েস্ট ইন্ডিজের অবস্থাটা মোটেও ভাল নয় এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। বাংলাদেশের অবস্থাও একই। তাই এই দুই দলের লড়াইয়ে একটি জয়ের জন্য হাপিত্যেশ করছিল দুদলই। বিশ্বকাপে কিছু অর্জনের আশা আগেই শেষ হয়ে গেছে। প্রত্যাশা ছিল সোনার হরিণ হয়ে থাকা জয়টা যদি ধরা যায়। সেজন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজই ছিল মোক্ষম প্রতিপক্ষ। কিন্তু ধরা দিল না সেই জয়। এবার তীরে এসে তরী ডোবাল বাংলাদেশ। জয়ের নাগাল পেতে পেতে সেটি যেন মরিচিকা হয়ে গেল। ফলে এ ম্যাচেও ধরা দিল না জয়। জয়ের একেবারে কিনারায় গিয়েও ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হারতে হলো মাত্র ৩ রানে। অথচ বোলাররা কি সুন্দর মঞ্চ তৈরি করে দিয়েছিল। শেষ দিকে কিছুটা পথ হারালেও বোলাররা বেশ ভালোই সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিল। কিন্তু সে সুযোগটাকে কাজে লাগাতে পারল না ব্যাটসম্যানরা।
ওপেনিং জুটিতে পরিবর্তন, একাদশে সৌম্যকে ফিরিয়ে আনা, লিটন দাশের রানে ফেরা সবকিছুই একেবারে মাটি হয়ে গেল ৩ রানের পরাজয়ে। আরো একবার মুশফিকের সেই সুইপ শট কাঠগড়ায় দাঁড় করাল তার দায়িত্ববোধকে। বড় শট খেলতে পারার দ্বৈন্যতাটা আরো একবার স্পষ্ট হয়ে গেল বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। জেসন হোল্ডাররা যেখানে ছক্কা মেরেছেন গ্যালারিতে সেখানে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ছক্কা বড়জোর গেছে সীমানার কাছে। আর তাতেই ফিরতে হয়েছে টাইগার ব্যাটসম্যানদের। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ পর্বের আগের দুই ম্যাচে একরকম অসহায় আত্মসমর্পণ করলেও গতকাল গড়ে তোলা প্রতিদ্বন্দ্বীতা কিছুটা হলেও আশার সঞ্চার করেছিল টাইগার সমর্থকদের মনে। শেষ পর্যন্ত সে হতাশায় পরিণত করল ব্যাটসম্যানরা।
শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টসে জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় বাংলাদেশ অধিনায়ক। শুরুতেই টাইগার বোলাররা একরকম চেপে ধরে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের। তৃতীয় ওভারেই এভিন লুইসকে ফেরান মোস্তাফিজ। পঞ্চম ওভারে ক্রিস গেইলকে ফিরিয়ে চাপটা আরো বাড়িয়ে দেন মেহেদী হাসান। ১৮ রানে দুই ওপেনারকে হারানোর পর আন্দ্রে রাসেলকে রানের খাতাও খোলতে দেননি তাসকিন। তবে বোলিং দিয়ে নয়। রান আউট করে। রোস্টন চেইজকে নিয়ে চাপ থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছিলেন অধিনায়ক পোলার্ড। কিন্তু রানের গতি বাড়াতে পারছিলেন না। তাই ১৩ তম ওভারের চতুর্থ বলে স্বেচ্ছায় অবসরে গেলেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক। ১৮ বলে ১৪ রান করেন তিনি। পঞ্চম উইকেটে হাল ধরেন নিকোলাস পুরান এবং রোস্টান চেইজ। ৫৮ রান যোগ করেন দুজন। যখনই খুব বেশি ভয়ংকর হয়ে উঠছিল এজুটি ঠিক তখনই আঘাত হানেন শরীফুল। ফেরান পুরানকে। ২২ বলে ১টি চার এবং ৪টি ছক্কার সাহায্যে ৪০ রান করেন একবার জীবন পাওয়া পুরান। শরীফুল পরের বলে ফেরান আরেক সেট ব্যাটসম্যান চেইজকেও। তিনি করেন ৪৬ বলে ৩৯ রান। হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলা শরীফুল অবশ্য পারেনি হ্যাটট্রিক করতে। শেষ দিকে জেসন হোল্ডারের ৫ বলে ১৫ রানের ক্যামিউতে শেষ পর্যন্ত ১৪২ রান সংগ্রহ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশের পক্ষে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন মেহেদী হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান এবং শরীফুল ইসলাম।
১৪৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে পরিবর্তন এনেছিল বাংলাদেশ। ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মত ইনিংস উদ্বোধন করতে নামেন সাকিব। কিন্তু বাংলাদেশের সে জুয়া কোন কাজে আসেনি। ৯ রান করে ফিরেন সাকিব। এরপর ওয়ান ডাউনে নাঈমের সাথে যোগ দেন লিটন দাশ। কিন্তু এবারো হাসল না নাঈমের ব্যাট। হোল্ডারের বলে প্লেইড অন হয়ে ফিরলেন ১৯ বলে ১৭ রান করে। এরপর জুটি গড়েন লিটন দাশ এবং সৌম্য সরকার। এগুচ্ছিলেন ভালই। কিন্তু জুটিটা ৩১ রানের বেশি হলো না। ১৭ রান করে ফিরলেন সৌম্য গেইলের হাতে ক্যাচ দিয়ে। দলের অভিজ্ঞ এবং সেরা ব্যাটসনম্যান মুশফিক আবারো সেই সুইপ শট খেলতে গিয়ে ফিরলেন দলকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে। যে শটের জন্য বারবার সমালোচিত হচ্ছে মুশফিক সেই শট বারবার খেলছেন আর ব্যর্থ হচ্ছেন। মাহমুদউল্লাহকে সঙ্গী করে দলকে বেশ ভালই টানছিলেন লিটন। এক সময় জয়টা প্রায় হাতের নাগালে চলে এসেছিল। দারুণ খেলতে থাকা লিটন ফিরেছেন ছক্কা মারতে গিয়ে একেবারে সীমানার কাছে জেসন হোল্ডার যেভাবে ক্যাচটি নিলেন তা ছিল এক রকম অবিশ্বাস্য। ৪৩ বলে ৪৪ রানে থামে লিটনের ইনিংস। তারপরও আশা জিইয়ে ছিল বাংলাদেশের। কারণ তখনো উইকেটে মাহমুদউল্লাহ। শেষ ওভারে ১৩ রান দরকার হলেও তা নিতে পারেন নি মাহমুদউল্লাহ। আন্দ্রে রাসেলের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ের সামনে হার মানতে হয় বাংলাদেশকে। ৯ রান নিতে পেরেছেন টাইগার দলপতি। ফলে ৩ রানের বেদনাদায়ক হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় বাংলাদেশকে। ২৪ বলে ৩১ রানে অপরাজিত ছিলেন মাহমুদউল্লাহ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআমার দোষ, শেষ বলে পারিনি : মাহমুদউল্লাহ
পরবর্তী নিবন্ধচসিক জেনারেল হাসপাতাল কেন্দ্রে ফাইজারের টিকাদান শুরু আজ