এবার উখিয়া সীমান্তে গোলা বর্ষণ

তিন গ্রামের ১শ পরিবারকে সরিয়ে আনার চিন্তা তুমব্রু সীমান্তে ত্রিশ মিনিটে ২০ বিস্ফোরণ

উখিয়া, বান্দরবান ও নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি | বুধবার , ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৫:১০ পূর্বাহ্ণ

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের তুমব্রুর পাশাপাশি এবার উখিয়া সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে গোলা বর্ষণ করছে মিয়ানমার। এসব গোলার বিকট শব্দে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের সীমান্ত সংলগ্ন গ্রামের বাসিন্দাদের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত আঞ্জুমান পাড়া ও রাহমতেরবিল সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা গোলাগুলির শব্দ শুনতে পান।
এদিকে তুমব্রু সীমান্তে গতকাল সকাল ৯টার পর থেকে মর্টার শেলের বিস্ফোরণ হঠাৎ করে বেড়ে যায়। ত্রিশ মিনিটের ব্যবধানে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে তুমব্রু সীমান্তে বিস্ফোরিত হয়েছে কমপক্ষে বিশটি শেল। বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে তুমব্রু সীমান্তের বাংলাদেশ ভূ-খণ্ড।
পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, তুমব্রুর পাশাপাশি এবার উখিয়া সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। এতে সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বিষয়টি বিজিবিকে অবহিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, পালংখালী ইউনিয়নের সীমান্ত সংলগ্ন পূর্ব বালুখালী, জমিদার পাড়া ও ধামনখালী গ্রামের প্রায় ১০০ পরিবারকে সীমান্ত এলাকা থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনার আলোচনা চলছে। সীমান্ত এলাকায় আরো যারা রয়েছে পরিস্থিতির অবনতি হলে তাদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসা হবে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন সজীব বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতিতে আমরা সতর্ক রয়েছি। পরিস্থিতি অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
স্থানীয়দের চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ : তুমব্রু সীমান্তে গতকাল সকালে ত্রিশ মিনিটের ব্যবধানে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে তুমব্রু সীমান্তে বিস্ফোরিত হয়েছে কমপক্ষে বিশটি মর্টার শেল।
তুমব্রু সীমান্ত ঘেঁষে বসবাসকারী বাংলাদেশি সুমিতা রায় বলেন, এখানে থাকতে সমস্যা হচ্ছে না। কিন্ত মনে ভয় আর আতঙ্ক কাজ করছে। মর্টার শেল এসে পড়লে স্বামী-সন্তানের কী হবে? কোনারপাড়ায় মর্টার শেল বিস্ফোরণের পর থেকেই ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাচ্ছি না। কিন্ত ঘরবাড়ি ছেড়ে যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। প্রশাসন ও ইউপি চেয়ারম্যান নিরাপত্তা ঝুঁকিতে বসবাসকারী ৩শ পরিবারের জন্য জায়গা ঠিক করে জানাবেন বলেছেন। তারা যেখানে বলবেন সেখানে চলে যাব। ঘরবাড়ির চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি।
ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, তুমব্রু এলাকাটি দুই ভাগে বিভক্ত করায় সীমান্ত ঘেঁষে মানুষের বসতি পড়ে গেছে। সীমান্তের এপারে ওপারে উভয় ভূ-খণ্ডে তুমব্রু এলাকা রয়েছে। তুমব্রু সীমান্তের মিয়ানমার অংশে মূলত গোলাগুলি হচ্ছে আরাকান আর্মির সাথে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর। দুই পক্ষের সংঘাতে মাঝেমধ্যে মর্টার শেল ও ভারী অস্ত্রের গুলি এসে পড়ছে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে। স্বাভাবিক মনে হলেও সীমান্ত পরিস্থিতি অস্থিতিশীল। ক্রমশ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে গোলাগুলির শব্দ। তুমব্রু সীমান্তের এপার থেকে ওপারে পাহাড়ে মর্টার শেল বিস্ফোরণের ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। সীমান্ত থেকে ৩শ পরিবারকে সরানোর চিন্তাভাবনা চলছে। তবে এখনো পর্যন্ত ঊর্ধ্বতন মহল থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি। নির্দেশনা পেলে কার্যক্রম শুরু হবে।
স্থানীয়রা বলছেন, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু, বাইশফাঁড়ি, রেজু, আমতলী, ফাত্রাঝিরি, চাকমা পাড়া সীমান্তবর্তী এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। স্থানীয়দের চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে বিজিবি। বাড়ানো হয়েছে টহল। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পাশপাশি সীমান্ত জুড়ে প্রশাসন, পুলিশ এবং আনসার বাহিনীর সদস্যরাও নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছে। কঠোর নিরাপত্তায় স্থানীয় বাসিন্দারা এক পাড়া থেকে অন্য পাড়ায় যেতে পারছে না।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সালমা ফেরদৌস বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। সীমান্তবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সীমান্ত এলাকা ঘুরে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের সম্ভাব্য তালিকা প্রস্তুত হয়েছে। বিভিন্ন প্রস্তাবনাও ঊর্ধ্বতনের কাছে পাঠানো হয়েছে। তারা বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে করণীয় ঠিক করবেন। ঊর্ধ্বতনের নির্দেশনা মোতাবেক সীমান্ত অঞ্চলের জনসাধারণের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডুবতে থাকা ছোট ভাইকে বাঁচিয়ে মারা গেলেন নিজেই
পরবর্তী নিবন্ধ১৫ বছরের আগের ঘটনায় পাঁচ জনের মৃত্যুদণ্ড