এটাই তাদের সুইমিং পুল

ক্রীড়া প্রতিবেদক | শুক্রবার , ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৪:৫৪ পূর্বাহ্ণ

স্বচ্ছ নীল জলের ঢেউ নেই। চকচকে টাইলসের সাজসজ্জাও নেই। উপর থেকে নিচ পর্যন্ত পানিও দেখা যায় না। তবুও তাদের কাছে এটি সুইমিং পুল। প্রতিদিন প্রায় অর্ধ্বশতাধিক শিশু কিশোর সাঁতার শিখছে এখানে। চট্টেশ্বরী কালী মন্দিরের পাহাড়ের উপর পুকুরটির কথা। যেখানে প্রতিদিন শিশু কিশোররা সাঁতার শেখার কাজে মত্ত থাকে। এদের প্রায় সবারই স্বচ্ছ জলের সুইমিং পুলে গিয়ে সাঁতার শেখার সামর্থ নেই। কিন্তু জীবন বাঁচাতে সাঁতার শেখাটাতো জরুরি। এই নগরীতে তেমন কোন নিরাপদ পুকুর নেই যেখানে গিয়ে নির্বিঘ্নে সাঁতার শেখা যায়। এই পুকুরটিও যে একেবারে সাঁতার শেখার জন্য উপযোগী তাও কিন্তু না। তারপরও কোনমতে সাঁতারটাতো শেখা হবে।
চট্টেশ্বরী কালী মন্দিরের পাহাড়ের উপর পুকুরটির দৈর্ঘ্যে ১০০ ফুট এবং প্রস্থে ৪০ ফুটের মত। পুকুরের পানিও খুব বেশি পরিষ্কার নয়। তবে একেবারে দূষিতও নয়। তাই এখানে প্রতিদিন শিশু কিশোররা সাঁতার শিখছে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে দেখা যায় কারো হাতে রাবারের টায়ার, কারো হাতে লাইফ জ্যাকেট আবার কারো হাতে প্লাস্টিকের বড় বোতল। যা দিয়ে সাঁতার শেখার চেষ্টা করে শিশুরা। তবে বেশিরভাগ শিশু কিশোরের হাতে প্লাস্টিকের বোতল। আর সেটাই তাদের সাঁতার শেখার প্রধান উপকরণ। গতকাল বুধবার পুকুরটিতে গিয়ে দেখা গেল পুকুরে একদল শিশু সাঁতার শিখছে আবার শান বাঁধানো ঘাটে অন্যরা গোসল করছে। পুকুরের চার পাশে অবশ্য সীমানা প্রাচীর রয়েছে। মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি দেবু চক্রবর্তী জানান, পুকুরের চার পাশে দেয়াল এবং ওয়াকওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা থাকলেও অর্থের অভাবে তা সম্পন্ন করা হয়নি। যেহেতু এটি মন্দিরের পুকুর সেহেতু এখানে পুজার্থীরা ব্যবহার করে বেশি। কিন্তু আশেপাশের মানুষজন ময়লা আবর্জনা ফেলে পুকুরের পানিকে দূষিত করে ফেলছে। একেতো আবদ্ধ পানি তার উপর ময়লা আবর্জনা ফেললে পানি দ্রুত দূষিত হয়ে যায়। তিনি বলেন, পুকুরের পাড় এবং পানি পরিষ্কার রাখতে এরই মধ্যে ১৪ লক্ষ টাকার মত খরচ করেছে তারা। কিন্তু কাজের ৩০ ভাগও শেষ হয়নি। জেলা পরিষদের কাছ থেকে দেড় লক্ষ টাকা পেলেও আর কেউ এউ পুকুর সংস্কারে এগিয়ে আসেনি। গতকাল সাঁতার শিখতে আসা বেশ কয়েকজন শিশুর সাথে কথা হয়। তারা বলে বাসার কাছে হওয়াতে তারা এখানে এসে সাঁতার শিখে। তবে পুকুরের পানি ক্রমশ দূষিত হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে তাদের নানা সময় অসুখ-বিসুখের ভয় করে। নিজের দুই কন্যা সন্তানকে এই পুকুরেই সাঁতার শেখাচ্ছেন প্রণব বড়ুয়া অর্নব। তিনি বলেন, বাসার পাশে এই পুকুরে মেয়েদের নিয়ে এসে প্রতিদিনই সাঁতারের জন্য নামিয়ে দেন। এখানে যারা সাঁতার শিখছে তাদের পক্ষে কোন সুইমিংপুলে গিয়ে সাঁতার শেখা সম্ভব নয়। তাই এই পুকুরই তাদের ভরসা। তিনি দাবি করেন নগরীতে এ রকম যেসব পুকুর রয়েছে সেগুলোকেও যেন দূষণমুক্ত করে ছেলে মেয়েদের সাঁতার শেখানোর কাজে ব্যবহার করা হয়। মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি বলেন, সাবেক মেয়রের সাথে কথা বলেছিলাম। কিন্তু তিনি এই পুকুর সংরক্ষণের কাজটি করে দেননি। বর্তমান মেয়রের সাথেও কথা বলেছি আমরা। আশা করছি তিনি পুকুরটি সংস্কার এবং সংরক্ষণের ব্যাপারে ভূমিকা রাখবেন। যাতে পুকুরটি হারিয়ে না যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা