এক বছরে বেড়েছে সাড়ে পাঁচ হাজার ট্রেড লাইসেন্স

২৩ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় চসিকের

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৪ জুলাই, ২০২১ at ৬:১৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) গত অর্থবছরে (২০২০-২০২১) ৭৮ হাজার ৪২টি ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করেছে, যা পূর্বের অর্থবছরে (২০১৯-২০২০) ছিল ৭২ হাজার ৫০৮টি। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে নগরে পাঁচ হাজার ৫৩৪টির বেশি ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করেছে সংস্থাটি।
করোনার প্রভাবে বিদায়ী অর্থ বছরে বিশ্বব্যাপী ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নেমেছিল। বাদ ছিল না বাংলাদেশও। সে জায়গায় নগরে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রাণ সঞ্চার হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে কেউ কেউ বলছেন, ব্যবসা মন্দা গেলেও প্রতি বছর ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করেন ব্যবসায়ীরা। ফলে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুর সাথে ব্যবসায় গতি আসছে বলার খুব বেশি সুযোগ নেই। এদিকে গত অর্থ বছরে ইস্যুকৃত ট্রেড লাইসেন্সের বিপরীতে চসিক ২৩ কোটি ২০ লাখ ৪৫ হাজার ৮০৯ টাকা রাজস্ব আদায় করেছে, যা পূর্বের অর্থ বছরে ছিল ২০ কোটি ৭৮ লাখ ৫৯ হাজার ২৭২ টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে দুই কোটি ৪১ লাখ ৮৬ হাজার ৫৩৭ টাকা বেশি আদায় হয়েছে।
অবশ্য চসিকের লক্ষ্যমাত্রা ছিল, বিদায়ী অর্থ বছরে এক লক্ষ ১০ হাজার ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু হবে এবং এর বিপরীতে ৩০ কোটি ৮০ লাখ ৭০ হাজার টাকা রাজস্ব আদায় হবে। ওই হিসেবে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুর ৭০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে।
আদর্শ কর তফসিল-২০১৬ অনুযায়ী, নগরে যে কোনো বৈধ ব্যবসার জন্য চসিক থেকে ট্রেড লাইসেন্স নেয়া বাধ্যতামূলক। আবার প্রতি অর্থ বছর এসব লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়। ব্যবসার ধরণ অনুযায়ী ৫০০ টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ট্রেড লাইসেন্স ফি নির্ধারণ করা আছে আইনে। আবার প্রতি ট্রেড লাইসেন্সের বিপরীতে তিন হাজার টাকা আয়কর দিতে হয়। সাথে লাইসেন্স ফি’র বিপরীতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট পরিশোধ করতে হয়। ফলে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকায় কোনো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ট্রেড লাইসেন্স করলে তাকে আরো তিন হাজার ৭৫ টাকা আয়কর ও ভ্যাট পরিশোধ করতে হয়। অতিরিক্ত টাকা পরিশোধের ভয়ে অধিকাংশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ট্রেড লাইসেন্স করতে চান না। এতে পূরণ হচ্ছে না চসিকের লক্ষ্যমাত্রাও।
চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, মেয়র মহোদয়ের গাইডলাইন ছিল সব ব্যবসায়ীদের যেন ট্রেড লাইসেন্সের আওতায় নিয়ে আসা হয়। সে লক্ষ্য পূরণে আমরা তৎপর ছিলাম। নিয়মিত ফিল্ড ভিজিট করেছেন আমাদের আদায়কারীরা। আমিও নিয়মিত মনিটরিং করেছি। এতে সাফল্য এসেছে। তবে এবার যা আদায় হয়েছে তা আগামীতে আরো বৃদ্ধি পাবে। কারণ, আমাদের হিসেবে এখনো অনেক দোকান রয়ে গেছে ট্রেড লাইসেন্সের আওতার বাইরে। আগামীতে তাদের কাছ থেকেও রাজস্ব আদায় করা হবে।
ট্রেড লাইসেন্স করার ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে জানিয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, ট্রেড লাইসেন্স ফি ৫০০ টাকা থেকে শুরু হয়। কিন্তু প্রতিটি ট্রেড লাইসেন্সের বিপরীতে তিন হাজার টাকা আয়কর পরিশোধ করতে হয়। এটাকে অনেক ব্যবসায়ী অজুহাত হিসেবে দেখান। কিন্তু আমাদের বক্তব্য হচ্ছে সেটা এনবিআর’র বিষয়। তাছাড়া সেটা আইনে আছে। ব্যবসায়ীদের সেটা মানতে হবে।
প্রথম হয়েছে সার্কেল-৩ : আটটি রাজস্ব সার্কেলের মাধ্যমে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করে চসিক। এর মধ্যে বিদায়ী অর্থ বছরে প্রথম হয়েছে রাজস্ব সার্কেল-৩। এ সার্কেল থেকে ১২ হাজার ৮০১টি ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু হয়েছে। এর মধ্যে নতুন ইস্যু হয় এক হাজার ৯৬৮টি এবং এবং নবায়ন হয়েছে ১০ হাজার ৮৩৩১টি। এতে তিন কোটি ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ৫৮০ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে।
সার্কেলটির কর কর্মকর্তা (লাইসেন্স) মো. জানে আলম আজাদীকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আমাদের সার্কেলের অর্জন ৭৯ শতাংশ। মেয়র মহোদায় ও প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার সহযোগিতা, সহকর্মীদের কঠোর পরিশ্রমে এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত কর আদায়কারীদের তদারকি করেছি। তাদের সাথে মিটিং করে উদ্বুদ্ধ করেছি। এতে সাফল্য এসেছে। অর্থ বছরের শেষের দিকে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করায়ও আদায় বৃদ্ধির একটা কারণ বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে সার্কেল-১ ও ৪ যৌথভাবে দ্বিতীয় হয়েছে। সার্কেল দুটির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে ৭৮ দশমিক ৫ শতাংশ। এছাড়া সার্কেল-২ এর ৬৩ দশমিক ৫ শতাংশ, সার্কেল-৫ এর ৬৯ শতাংশ, সার্কেল-৬ এর ৭২ শতাংশ, সার্কেল-৭ এর ৬১ দশমিক ৫ শতাংশ এবং সার্কেল-৮ এর লক্ষ্যমাত্রার ৭০ শতাংশ পূরণ হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বিদায়ী অর্থ বছরে ইস্যুকৃত ট্রেড লাইসেন্সের মধ্যে ১৩ হাজার ৫৪৮টি নতুন এবং এবং ৬৪ হাজার ৪৯৪টি নবায়ন করা হয়। এর আগে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে ১২ হাজার ৪৪৫টি নতুন এবং ৬০ হাজার ৫৪টি নবায়ন করা হয়েছিল। ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে নতুন ও নবায়নসহ ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু হয়েছিল ৮০ হাজার ৫১টি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচেম্বারে যাওয়ার সময় ডাক্তারকে জরিমানা ইউএনওর
পরবর্তী নিবন্ধতিউনিসিয়া উপকূলে ডুবে গেছে বাংলাদেশিসহ ৪৩ অভিবাসী