চেম্বারে যাওয়ার সময় ডাক্তারকে জরিমানা ইউএনওর

সাতকানিয়া প্রতিনিধি | রবিবার , ৪ জুলাই, ২০২১ at ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ

করোনায় অনেক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার চেম্বার বন্ধ করে দেওয়ায় রোগীরা যখন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ঠিক তখনই সাতকানিয়ায় চেম্বারে যাওয়ার সময় এক ডাক্তারকে জরিমানা করলেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। জরিমানার শিকার হওয়া ডাক্তারের নাম ফরহাদ কবির। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় রোগী দেখতে মোটর সাইকেলযোগে সাতকানিয়া পৌর এলাকায় চেম্বারে যাওয়ার সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নজরুল ইসলাম তাঁকে এক হাজার টাকা জরিমানা করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ইউএনও’র শাস্তি দাবি করেছেন চিকিৎসক নেতারা। তবে ইউএনও মোঃ নজরুল ইসলামের দাবি তিনি অন্যায় কিছু করেননি, সরকারি আইন বাস্তবায়ন করেছেন।
জরিমানার শিকার হওয়া সাতকানিয়ার মির্জারখীল এলাকার বাসিন্দা ডা. ফরহাদ কবির বলেন, ‘আমি পৌরসভার নাছির ফার্মেসি এবং মক্কা ফার্মেসিতে নিয়মিত চেম্বার করি। ঘটনার দিন আমি চেম্বার শেষ করে ফিরছিলাম। ওই সময় একজন ইমার্জেন্সি রোগী আসার বিষয়ে ফোন পেয়ে মাঝপথ থেকে আবার চেম্বারে যাচ্ছিলাম। তখন সাতকানিয়া পৌরসভার কলেজ রোডের মুখে ইউএনও সাহেবের সাথে দেখা হয়। এসময় ইউএনও’র সাথে থাকা লোকজন সিগন্যাল দিলে আমি মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আমার পরিচয় দিই। ডাক্তার পরিচয় পাওয়ার পর ইউএনও কিছুটা ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন, আপনারা লকডাউন দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেন। আমরা লকডাউন সফল করতে পারি না বলে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। আর এখন আপনারাই লকডাউন মানছেন না। এরপর ইউএনও’র সাথে থাকা এক লোক আমার কাছ থেকে মোটর সাইকেলের চাবিটি নিয়ে ফেলেন। এক পর্যায়ে ইউএনও জানান, আমাকে দুই হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, লকডাউনে বের হয়েছেন এজন্য। তখন আমি উনাকে ডাক্তারদের চেম্বারে যাওয়া আসায় বিধি নিষেধ না থাকার বিষয়ে বলি। এতে আরো বেশি রাগান্বিত হয়ে যান ইউএনও। তিনি বলেন, আমি চাইলে আপনাকে জেল দিতে পারি। তা করলাম না, এক হাজার টাকা জরিমানা দেন।’ ডাক্তার ফরহাদ কবির আরো জানান, অনেক লোকের সামনে তিনি ডাক্তারদের সম্পর্কে অনেক কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। এক পর্যায়ে মামলা লিখে আমার হাতে দিয়ে এক হাজার টাকা দিতে বলেন। তখন আমি টাকা দিয়ে দিই। এরপর ইউএনও বলেন, সাংবাদিকরা ছবি উঠান, ডাক্তারকে যে জরিমানা করছি এটা পত্রিকায় দিতে হবে। পরে অনেকে মুঠোফোনে আমার ছবি তুলেছেন। এরকম অপমান আমি জীবনে হইনি। আমি বুঝতে পারছি না একজন ইউএনও কিভাবে এমন খারাপ আচরণ করতে পারেন ?
ঘটনার বিষয়ে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, উনি যে ডাক্তার সেটাতো আমি বুঝতে পারিনি। উনার সাথে আইডি কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং হেলমেট ছিল না। তিনি যে অন্যায় করেছেন সেটা নিজে বুঝতে পেরেছেন। তিনি নিজেই বলেছেন, আমার অন্যায় হয়েছে। আমাকে শাস্তি দেন। পরে আমি এক হাজার টাকা জরিমানা করেছি। আইন সবার জন্য সমান। সরকার আইন করেছে আমরা বাস্তবায়ন করছি। তিনি চাইলে আপিল করতে পারেন। মূলত সন্ধ্যা ৭ টার পর হওয়ায়, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও হেলমেট না থাকায় জরিমানা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। ভুক্তভোগী ডাক্তার আমাকে জানাননি। স্বাচিপের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে আমি বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলেছি। তারা বলেছেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। চলমান লকডাউনে ডাক্তারদের চলাচলের ক্ষেত্রে বিধি নিষেধ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রশ্নই ওঠে না।
ঘটনার বিষয়ে স্বাচিপের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান বলেন, লকডাউনে ডাক্তারদের চলাচলে সরকারিভাবে কোনো ধরনের বাধা নেই। এরপরও একজন ডাক্তার রোগী দেখতে চেম্বারে যাওয়ার সময় ইউএনও’র এমন আচরণ অত্যন্ত দুঃখজনক। চিকিৎসকরা করোনা মহামারীতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোগীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ইউএনও’র এমন আচরণ চিকিৎসকদের হতাশ করে। যে চিকিৎসককে জরিমানা করা হয়েছে তার গাড়ির কাগজপত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও হেলমেট না থাকলে মোটর যান আইনে মামলা দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি মামলার কাগজে ডাক্তার উল্লেখ করে সংক্রমণ আইনে মামলা দিয়েছেন। এটা ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এছাড়া ইউএনও লোকজনের সামনে ডাক্তারদের নিয়ে অনেক কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। এজন্য ইউএনও’র বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএবার সীতাকুণ্ডে মিলল নেশার সিরাপ ‘স্কুফ’
পরবর্তী নিবন্ধএক বছরে বেড়েছে সাড়ে পাঁচ হাজার ট্রেড লাইসেন্স