এক গাছে ২০ কেজি মরিচ!

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | শনিবার , ২৯ এপ্রিল, ২০২৩ at ৫:৩৬ পূর্বাহ্ণ

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা মালিরহাট এলাকার কৃষক মোহাম্মদ আবুল হোসেন। ৬০ শতক জমিতে মরিচের চাষ করেছেন। এর মধ্যে ৪০ শতক জমিতে বিজলী প্লাস এবং ২০ শতক জমিতে ইন্দ্রিরা জাতের মরিচের আবাদ করেন তিনি। ইতোমধ্যে বিজলী প্লাস জাতের প্রতিটি গাছ থেকে তিনি পুরো মৌসুমে ১৫২০ কেজি করে কাঁচা মরিচ উত্তোলন করছেন বলে জানান। তার ৪০ শতক জমিতে প্রায় দুই হাজারটি গাছ রয়েছে।

যদি ৬০% গাছ থেকে এ রকম ফলন পাওয়া যায় তাহলে ১২০০ গাছ থেকে পুরো মৌসুমে ফলন হবে ১৮ থেকে ২৪ হাজার কেজি। প্রতি কেজি ৫০ টাকা করে হলে এক বছরে তিনি ৯ থেকে ১২ লাখ টাকার মরিচ বিক্রি করতে পারবেন।

কৃষক আবুল হোসেন জানান, মরিচ চাষাবাদে তিনি সচ্ছলতার মুখ দেখেছেন। মাত্র ৫০ হাজার টাকা খরচে বারোমাসি মরিচ চাষে তিনি ভাল দাম পেয়েছেন, হয়েছেন লাখপতি। ইতোমধ্যেই ৪৫ মাসের ব্যবধানে ৭৮ লাখ টাকার মরিচ বিক্রি করেছেন। আরও কয়েক লাখ টাকার মরিচ বিক্রির আশা করেছেন তিনি।

এই টাকায় কিনেছেন নতুন জমি, করেছেন নতুন ঘর। নিজের ছেলেকেও বিয়ে করিয়েছেন। অন্যদিকে ইন্দ্রিরা জাতের প্রতিটি গাছ থেকে ২৫৩০ কেজি করে মরিচ পাওয়া যাচ্ছে। তবে এসব শুকানো মরিচ হিসেবে তিনি উত্তোলন করবেন। যা সাড়ে ৫০০ টাকা কেজি হারে বিক্রি করলে সেখান থেকেও ৮১০ লাখ টাকা পাওয়া যাবে। এই ব্যাপারে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার বলেন, কৃষক আবুল হোসেনের সফলতা অবিশ্বাস্য হলেও বাস্তব। তিনি পেশাদার কৃষক।

শসাসহ বিভিন্ন জাতের ফসলের আবাদ করে থাকেন। গত কয়েক মাস আগে আমার পরামর্শে তিনি ৪০ শতক জমিতে বিজলী প্লাস জাতের মরিচ চাষ করেন। এই জাতগুলো সারা বছর চাষ করা যায়। শীত বা রবি মৌসুমে ভাল হয়। ধানের পরিবর্তে মরিচ চাষাবাদ করে তিনি সফল হয়েছেন। তার দেখাদেখি আশেপাশের অন্যান্যরাও এই চাষাবাদের প্রতি উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।

জানা যায়, শুধু কৃষক আবুল হোসেনই নন, রাঙ্গুনিয়ায় বেশ কিছু মরিচ চাষি লাখপতি হয়েছেন। রাঙ্গুনিয়ায় এবার মরিচের ভাল উৎপাদন হওয়ার পাশাপাশি বাজারে উপযুক্ত দাম পেয়ে কয়েক শত প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষি এবার নিজদের ভাগ্যই বদলে ফেলেছেন। জমি থেকে কয়েক দফা কাঁচা মরিচ তুলে বিক্রি করে শেষ পর্যায়ে মরিচ শুকানো হচ্ছে এখন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে উপজেলায় ৭০ হেক্টর জমিতে মরিচ আবাদ হয়েছে। যেখানে ফলন এসেছে ১০৪ মেট্রিক টন। এবছর ৭৫ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে। এরআগে শীত মৌসুমে গত বছর ২৩০ হেক্টর জমি থেকে ফলন এসেছিল ২৯১ মেট্রিক টন। গত শীত মৌসুমে ২৫৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয় এবং ৩২৬.৯৫ মেট্রিক টন ফলন পাওয়া গেছে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার দুই ধারে বিভিন্ন বাড়িতে ও ক্ষেতে মরিচ শুকানো হচ্ছে। কোথাওকোথাও দল বেঁধে মহিলারা মরিচ তুলছেন। সরফভাটা মীরেরখীল গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ হেলাল জানান, তিনি ৩৫ শতক জমিতে মরিচ চাষ করেন। গেল রমজান মাসে ভাল ফলন পেয়েছেন এবং উপযুক্ত দামে বিক্রি করে লাভবান হয়েছেন। এখন পাকা মরিচ শুকিয়ে রাখার কাজ চলছে। বর্ষা মৌসুমে দাম বেশি হলে বিক্রি করবেন। একই কথা বলেন ওই গ্রামের অন্যান্য কৃষকরাও।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সহিদুজ্জামান সাহেদ জানান, রাঙ্গুনিয়ার উর্বর কৃষি জমি মরিচ আবাদের জন্য উপযোগী। ধানের চেয়েও মরিচ আবাদে লাভ বেশি। বিশেষ করে হাইব্রিড ইন্দ্রিরা, কিং, হাটহাজারী জাতের মরিচ চাষ বেশি করেন কৃষকরা। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে চাষিদের নানা পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করা হয় বলে তিনি জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌশলে যাত্রীছাউনি ভেঙে ভবন নির্মাণের চেষ্টা
পরবর্তী নিবন্ধভোলার ইলিশা-১ গ্যাস কূপ থেকে পরীক্ষামূলকভাবে গ্যাস উত্তোলন শুরু