সুদূর প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের সূতিকাগার হিসেবে চট্টগ্রামের অবস্থান ও মর্যাদা সর্বজনবিদিত। ‘চট্টগ্রাম সর্বাগ্রে’ – মহাত্না গান্ধীর এই ভূষণের মাধ্যমে চট্টগ্রামের ইতিহাসসমৃদ্ধ ভূমিকার যথার্থতা অধিকতর পরিপূর্ণতা পেয়েছে। মহান ভাষা আন্দোলনের পটভূমি পর্যালোচনায় সামাজিক-রাজনৈতিক বিষয়সমূহ বিভিন্ন আঙ্গিকে ও মাত্রায় এপর্যন্ত বিপুলভাবে বর্ণিত হয়েছে। সৃজনশীল চিন্তা-চেতনার প্রভাব ভাষা আন্দোলনকে ঘিরে প্রগতি ও অসামপ্রদায়িক মূল্যবোধকে জাগ্রত করে যে সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিপ্লব সংঘটিত করেছিল, তা কিন্তু সামগ্রিকভাবে তেমন প্রসার পেয়েছে বলে মনে হয় না। যদিও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট প্রায় সকলেরই জানা, তবুও স্মৃতি বিস্মৃত না হয়ে ইতিহাস-সত্যতা চর্চায় যাতে বর্তমান ও আগামী প্রজন্ম আরো বেশি আগ্রহশীল হয় এ লক্ষ্যেই স্বল্প পরিসরে নিবন্ধের পরিবেশনা।
আমাদের উপলব্ধিতে এটি সুস্পষ্ট যে, সামাজিক জীব হিসেবে বেঁচে থাকার তাগিদে মানুষের সকল সৃষ্টির সমষ্টির বিকল্প হচ্ছে সংস্কৃতি। সমাজের মৌলিক কাঠামো বা উৎপাদন ব্যবস্থা ভিন্ন ভিন্ন সামাজিক পর্যায়কে অভিষিক্ত করার ভিত্তিতে উপরি-কাঠামো তথা জীবন যাপন সর্ম্পকে ধ্যান-ধারণা, সামাজিক মূল্যবোধ, রীতি-নীতি, আচার ব্যবহার, শিক্ষা, ধর্ম, দর্শন, আইন, সাহিত্য ইত্যকার বিষয়সমূহ সংস্কৃতির প্রধান উপাদান হিসেবে সর্বজনস্বীকৃত। সমাজবিজ্ঞানী হারসকোভিটস্ এর ভাষায় সংস্কৃতি হল “সামগ্রিক পরিবেশের মানব-সৃষ্ট অধ্যায়”। আমরা এও জানি যে, অর্থের ভিন্নতা সত্ত্বেও সভ্যতা ও সংস্কৃতি সমার্থক হিসেবে বিবেচিত। কবিগুরু রবিঠাকুরের ভাষায়: ‘সভ্যতা হলো একটি হীরের টুকরো, আর তা থেকে বিচ্ছুরিত আলো হলো সংস্কৃতি।’ সভ্য সমাজের উদগাতা হিসেবে সংস্কৃতির মৌল বৈশিষ্ট্যগুলোর আলোচনা ব্যতিরেকে চট্টগ্রামের পরিপ্রেক্ষিতে ভাষা আন্দোলনের সাংস্কৃতিক স্বরূপ উন্মোচন অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি গণতান্ত্রিক, অসামপ্রদায়িক, শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার যৌক্তিক লক্ষ্যে যে দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম তথা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূলে কার্যকর প্রেরণা, সাহস ও শক্তির উৎস ছিল মহান একুশে ফেব্রয়ারি। ফেব্রয়ারি মাস তাই বাঙালি জাতির জন্য শোককে শক্তিতে রূপান্তর, অন্যায়-অবিচার, নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার মাস। এ মাস থেকেই জাতি শিক্ষা নিয়েছে সকল অন্ধত্ব, জঙ্গীবাদ, মৌলবাদ, ধর্মান্ধতাকে রুখে দিয়ে সর্বজনিন মানবতাবাদ প্রতিষ্ঠায় আত্নত্যাগের মহিমায় উদ্বুদ্ধ হওয়া। জাতির দীর্ঘ মুক্তির সংগ্রামের বিভিন্ন অধ্যায়ে শুধু উপমহাদেশে নয়, বিশ্ব ইতিহাসেও চট্টগ্রাম সমাদৃত হয়েছে অনন্য উজ্জ্বল ও প্রত্যয়ী ভূমিকার জন্যে। চট্টগ্রামের রয়েছে একদিকে আত্নত্যাগের মহান গৌরবগাঁথা এবং অন্যদিকে মুক্তি অর্জনের ক্ষেত্র তৈরী ও প্রাপ্তির সৌরভদীপ্ততা। এই ফেব্রুয়ারি মাস চট্টগ্রামের জন্য আরো শোক-স্মরণীয় এজন্য যে, ধিকৃত এক কাপুরুষ নেত্রসেনের বিশ্বাসঘাতকতায় উপমহাদেশের মহান বিপ্লবী চট্টগ্রামের সন্তান মাস্টারদা সূর্যসেন পটিয়ার গৈড়লা গ্রামে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন ১৯৩৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি।
ভাষা আন্দোলনের দীর্ঘ পটভূমি রচনার পিছনে রয়েছে চট্টগ্রামের এক সমুজ্জ্বল সামাজিক- সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট। ১৯৪৬ সালে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশদের প্রত্যক্ষ মদদে কলকাতা, বিহার ও নোয়াখালীসহ অন্যান্য অঞ্চলে যখন ঘৃন্য সামপ্রদায়িক দাঙ্গার বিষবাষ্প পুরো অঞ্চলকে আতংকিত ও কলুষিত করেছিল, তার বিস্তার প্রতিরোধে চট্টগ্রামের প্রবীণ ও তরুণ ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে সংঘটিত অসামপ্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলন বিশেষ প্রণিধানযোগ্য। এই সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিপ্লবের প্রথম সফল উদ্যোগ ছিল চট্টগ্রামে অস্ত্রাগার লুন্ঠন ও অন্যান্য মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ১৬জন দ্বীপান্তরিত রাজবন্দীর সম্বর্ধনা। এ সম্বর্ধিত অতিথিদের নৈশভোজে আপ্যায়ন করে বিখ্যাত হয়েছিলেন কীর্তিমান পুরুষ জনাব আবদুল হক দোভাষ। সে সময় সকল সাংস্কৃতিক শক্তিসমূহগুলোকে একত্রিত করে আন্দোলনকে অধিকতর জোরালো করার প্রক্রিয়ায় সার্থক প্রয়াস অধ্যাপক আবুল ফজলকে সভাপতি ও মাহবুব উল আলম চৌধুরীকে সম্পাদক করে নজরুল জয়ন্তী উদযাপন।
আন্দামান রাজবন্দীদের সম্মানিত করার উদ্যোগের জন্য শুধু নয়, বহুধা প্রতিভার সমন্বিত সময়ের সাহসী নেতৃত্বের পুরুধা ছিলেন জনাব মাহবুব উল আলম চৌধুরী। চট্টগ্রামের মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক আহমদ ছগীর চৌধুরী, চট্টগ্রামের প্রথম মুসলিম গ্র্যাজুয়েট মৌলভী রিয়াজউদ্দিন সিদ্দিকীর পুত্র রফিউদ্দিন সিদ্দিকী এবং আবদুল হক দোভাষদের মত প্রগতিশীল ও অসামপ্রদায়িক ব্যক্তির কারণেই চট্টগ্রামে ছিল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের এক ব্যতিক্রম পরিবেশ অর্থাৎ অমানবিক অসভ্য সামপ্রদায়িক দাঙ্গার ভয়াবহতা থেকে এ অঞ্চল ছিল বহুলাংশে মুক্ত ও নিরাপদ। এজন্য অনেকের মতে, ১৯৪৭ এর ১৪ই আগস্ট পূর্ব পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর অন্যান্য জেলায় সংখ্যালঘু হিন্দুরা যে সংখ্যায় দেশ ত্যাগ করেছিলেন, চট্টগ্রামে তার কোন প্রভাব পরিলক্ষিত হয়নি। এ ধরনের উদার-অসামপ্রদায়িক-মননশীল ও সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল চট্টগ্রামে ভাষা আন্দোলনের বহুমাত্রিক প্রেক্ষাপট তৈরী করেছিল। ইতিমধ্যেই পাকিস্তান আন্দোলনের অনেক ছাত্র কর্মী চট্টগ্রামে তাদের দল ও মতাদর্শ পরিবর্তন করে অন্যান্য গণতান্ত্রিক-অসামপ্রদায়িক ও প্রগতিশীল আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মফিজুল ইসলাম, শামসুল হক, চৌধুরী হারুনুর রশীদ, নুরুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ।
“পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু” – ১৯৪৭ এর ১৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ভাষা আন্দোলনের আলোড়ন সৃষ্টিকারী প্রথম পুস্তিকাটি প্রকাশের উদ্যোক্তা ছিলেন চট্টগ্রামের আরেক খ্যাতিমান পুরুষ অধ্যাপক আবুল কাশেম। এ বইয়ের মুখবন্ধে অধ্যাপক আবুল কাশেম লিখেছিলেন, “বাংলাভাষাই হবে পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষার বাহন, আদালত ও অফিসের ভাষা”। পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক প্রথম যে গণহত্যাটি সংঘটিত হয়, সেটিও ছিল চট্টগ্রামের হালদা নদীর কাছে মাদার্শার টেকে।
১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দ শহর বা শহর উপকূলে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বাধার কারণে ভাষা আন্দোলন স্থিমিত হওয়ার উপক্রম হলে, গ্রামে গঞ্জে তা ছড়িয়ে দেওয়ার অর্থবহ উদ্যোগ গ্রহণ করে চট্টগ্রামের জনগণ। সে বছর ১১ মার্চ কানুনগোপাড়া, ধলঘাট, কেলিশহর, নোয়াপাড়া, মহামুনিসহ ইত্যাদি অঞ্চলের হাজার হাজার স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী বাংলাভাষাকে কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা এবং পূর্ব বাংলায় সরকারী ভাষা করার দাবিতে ধর্মঘট পালন করে। ১৯৫০ সালে দেশজুড়ে পুনরায় সামপ্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়লে চট্টগ্রামের রফিউদ্দিন সিদ্দিকী, আবদুল হক দোভাষ, অধ্যক্ষ আবু হেনা, অধ্যাপক আবুল ফজল, মোতাহের হোসেন চৌধুরীসহ অনেক গুণী ব্যক্তির নেতৃত্বে শান্তি মিছিলের আয়োজন এবং পরবর্তীতে রফিউদ্দিন সিদ্দিকীকে সভাপতি ও মাহবুব উল আলম চৌধুরীকে সম্পাদক করে সর্বদলীয় সামপ্রদায়িক সমপ্রতি কমিটি গঠিত হয়।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিন রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দু ঘোষণার পর পরই আওয়ামী মুসলীম লীগ প্রধান মৌলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের প্রাথমিক কর্মসূচী হিসেবে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি দেশজুড়ে যে সর্বাত্নক হরতালের ডাক দেন তারই অংশ হিসেবে ৪ ফেব্রুয়ারি আন্দরকিল্লাস্থ আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে প্রথম সর্বদলীয় সভা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। জনাব মফিজুল ইসলামকে আহবায়ক করা হলেও পরদিন তিনি দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করলে তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব এম এ আজিজকে আহবায়ক নির্বাচিত করে জেলা আওয়ামী লীগের অফিসেই রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের দপ্তর খোলা হয়। এ আন্দোলনের প্রচার কাজে প্রথম অংশগ্রহণ করেন সাংবাদিক ওবাইদুল হক এবং চকবাজার নিবাসী জনাব সালেহ আহম্মদ। এটিও সত্য যে, চট্টগ্রামে গঠিত প্রকৌশলী আজিজুর রহমানের নেতৃত্বে তমদ্দুন মজলিশের কর্মসূচী ভাষা আন্দোলনকে বেগবান করতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। সে সময়ে যেসব নেতৃবৃন্দ এ আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন তাদের মধ্যে জনাব জহুর আহম্দ চৌধুরী, রফিক উল্লাহ চৌধুরী, চৌধুরী হারুনুর রশিদ, মাওলানা আহমেদুর রহমান আজমী, ডাঃ সৈয়দুর রহমান ও আবদুল্লাহ আল হারুনসহ প্রমুখের ভূমিকা প্রশংসার দাবিদার।
চট্টগ্রামে একুশের হরতাল অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়। ঐদিন কলকারখানাসহ চট্টগ্রামে ট্রেন চলাচলও বন্ধ ছিল। বেলা আড়াইটা নাগাদ ঢাকায় গুলিবর্ষণ ও ছাত্র হত্যার সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওয়াজিউল্লাহ ইন্সটিটিউটে বিপুল সংখ্যক মিছিল এসে জড়ো হয়। এসব মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন জহুর আহমেদ চৌধুরী, অধ্যাপক আবুল ফজল, এম এ আজিজসহ অনেক খ্যাতিমান নেতৃবৃন্দ। এম এ আজিজ ও জহুর আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে সম্মিলিতভাবে এই বিশাল মিছিল ওয়াজিউল্লাহ ইন্সটিটিউট থেকে লালদিঘীর মাঠের দিকে অগ্রসর হয়ে সমাবেশের আয়োজন করে। লালদিঘীর জনসভা থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি হরতাল এবং লালদিঘী ময়দানে জনসভা কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়। অসুস্থ মাহাবুল আলম চৌধুরীকে ছাত্রনেতা ননী ধর ঢাকায় ছাত্র হত্যার সংবাদ পরিবেশনের পরপরই মাহবুব-উল আলম রচনা করেছেন তার সেই বিখ্যাত একুশের সাড়া জাগানো প্রথম কবিতা ‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’। এই মহান ব্যক্তির বিভিন্ন অবদান মূল্যায়ন না করা হলে তাঁর প্রতি জাতির অবিচার করা হবে।
১৯২৭ সালের ৭ নভেম্বর চট্টগ্রাম জেলার গহিরা গ্রামে জন্ম নেওয়া সেই সন্তান সম্পাদনা করেছেন পূর্ব পকিস্থানের প্রথম প্রকাশিত মর্যাদাবান মাসিক পত্র ‘সীমান্ত’। সত্তর দশকে সম্পাদনা করেন চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক স্বাধীনতা’। এই কৃতি পুরুষ মাহাবুল আলম চৌধুরী রচিত একুশের এই পুস্তিকাটি ছিল বাংলাদেশের প্রথম একুশের সংকলন। চট্টগ্রামের আরেক কালজয়ী পুরুষ, কোহিনুর ইলেক্ট্রিক প্রেসের মালিক ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেকের অনুমতি নিয়ে তাঁর প্রেস ম্যানেজার দবির আহমদ চৌধুরী অসীম সাহসিকতায় এই কবিতা ছাপানোর দায়িত্ব নেয়। ফলশ্রুতিতে পাকিস্তান সরকার দবির আহমদ চৌধুরীকে গ্রেফতার এবং পুস্তিকাটি বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি প্রেসটি বন্ধের আদেশ দেয়। প্রকাশনার দায়িত্ব দবির চৌধুরী সাহেব গ্রহণ করায় বিচারে তার ছয় বছর সশ্রম কারাদন্ডের বিপরীতে ছয় মাস কারাবাসের পর তিনি মুক্তি পান। ২৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের প্রথম অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মিত হয়। ২৪ তারিখ স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল পালন এবং লালদিঘীতে জনসভা অনুষ্ঠানের প্রাক্কালে কুখ্যাত ফজলুল কাদের চৌধুরী সভা পন্ড করার এক অপচেষ্টার আশ্রয় নেয়। সেদিনের জনসভায় চৌধুরী হারুনুর রশিদ প্রথম বারের মত জনসম্মুখে মাহবুল আলম চৌধুরী রচিত কবিতাটি পাঠ করেন এবং কবিতা পাঠের অপরাধে গ্রেফতার হন।
১৯৫২ সালের ৫ মার্চ সারা পূর্ব বাংলায় শহীদ দিবস পালনের ঘোষণা আসলে দেশের সর্ব বৃহৎ জনসভাটি হয় চট্টগ্রামে এবং এই সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মোজাফ্ফর আহমদ। জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক এম এ আজিজ সহ শ্রমিক নেতা জহুর আহম্মদ চৌধুরী, ব্যবসায়ী নবী চৌধুরী এবং আজিজুর রহমান প্রমুখ এই সভায় বক্তব্য রাখেন এবং শোভাযাত্রীরা লালদিঘী পার্কটিকে ‘রাষ্ট্রভাষা শহীদ পার্ক’, লয়াল রোডকে ‘শহীদ সালাউদ্দিন রোড’, টেরিবাজার রোডটিকে ‘শহীদ বরকত রোড’, লাভলেনকে ‘শহীদ জব্বর রোড’, এবং এমেপ্রস রোডকে ‘রাষ্ট্রভাষা শহীদ রোড’ নামে অভিহিত করে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দেয়। এই ভাবেই বিভিন্ন প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, অসামপ্রদায়িক সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সমাহার চট্টগ্রামকে মহান ভাষা আন্দোলন ও পরবর্তীতে সুদীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অসাধারণ মর্যাদার আসনে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে।
লেখক: শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।