একুশের চেতনা হোক অসামপ্রদায়িক বাংলাদেশ

শ্যামল কান্তি দে | সোমবার , ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৬:৪৫ পূর্বাহ্ণ

১৯৪৭ সালের দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে গড়ে উঠা পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্য ব্যবস্থা পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ জনগণের মাঝে প্রতিবাদ প্রতিরোধে এগিয়ে যাওয়ার সংগ্রামের ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় মহান ভাষা আন্দোলন। ভাষার জন্য জীবন দিতে হয়েছে এমন ইতিহাস পৃথিবীতে খুব বিরল। সালাম, রফিক,

 

জব্বারের আত্মত্যাগ আমাদের জাতীয় জীবনে এক গৌরবদ্বীপ্ত ইতিহাস। মায়ের জটরে জন্ম নেয়া ভূমিষ্ট শিশু মনের ভাব প্রকাশ করতে না পারা বা ভিন্ন ভাষা তাঁর উপর চাপিয়ে দেওয়ার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে প্রাণের উচ্ছ্বাসে মনের মাধুরি মিশিয়ে নিজের মতো করে মায়ের ভাষা বাংলা ভাষা বলার অধিকার

আদায়ের সংগ্রামে নিবেদিত প্রাণ শহীদরা আজ আমাদের প্রেরণার উৎস। হাজার বছরের ঐতিহ্যে লালিত স্বপ্নে গড়া প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ আজ স্বমহিমায় উড্ডীন। ৫২, ৫৪, ৬২, ৬৯, ৭০ এবং সর্বশেষ ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ ছিল ভাষা আন্দোলনের ফল। রাষ্ট্র ভাষা বাংলা আজ আন্তর্জাতিকতা রূপ লাভ করে আমাদের

নতুন প্রজন্মের জন্য ইতিহাস রচনা করে গেল। কিন্তু কষ্টের বিষয় এখনো সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন হয়নি। রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে এখনো বাংলা ভাষাকে প্রধান এবং নিয়ামক ভাষা হিসাবে ব্যবহার করা হয় না। এর থেকে আমাদের বের হতে হবে। প্রিয় মাতৃভাষার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে

রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে এই ভাষার ব্যবহার করতে হবে। তা না হলে শহীদের আত্মত্যাগ বৃথা হয়ে যাবে। ৫২ এবং ৭১ এর মূল চেতনা ছিল অসামপ্রদায়িক প্রিয় বাংলাদেশ। আমরা এখনো সেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি। স্বাধীনতার ৫০বছর এবং ভাষা আন্দোলনের ৭১ বছর পরও সামপ্রদায়িকতার করালগ্রাসে

আমাদের সমস্ত অর্জন ভুলুণ্ঠিত হয়ে যাচ্ছে। কথায় কথায় সামপ্রদায়িক উসকানি, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যা লঘু সমপ্রদায়ের উপর হামলা এবং প্রগতিশীল উদার মানবিক মূল্যবোধ সমৃদ্ধ মুক্তচিন্তার মানুষদের উপর নির্মম নির্যাতন বলে দেয় সামপ্রদায়িক অপশক্তি কতটুকু বিস্তৃত লাভ করেছে সমাজে। এরা এখন

রাষ্টের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, অফিস, আদালতে একশ্রেণির সামপ্রদায়িক অপশক্তি ঘাপটি মেরে বসে আছে নানা ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তৃত করে। এদের বিরুদ্ধে ৫২ ও ৭১ এর চেতনায় বিশ্বাসী সকল অসামপ্রদায়িক চেতনার মানুষদের ঐক্যবদ্ধ গণজাগরণের মাধ্যমে লাখো শহীদের রক্তের ঋণের

সুন্দর সোনালী বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে শত বাধা অতিক্রম করে। তবেই সার্থকতা লাভ করবে সালাম, রফিক, জব্বারের আত্মত্যাগ। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আগামী প্রজন্মের জন্য সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণে রাষ্ট্র ভাষা বাংলা ভাষাকে গুরুত্ব দিয়ে রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে এই ভাষার

প্রচলন করা এবং সামপ্রদায়িক অপশক্তির অবসান ঘটিয়ে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারলেই সকল শহীদের স্বপ্ন সফল হবে বলে মনে করি। আসুনযে যেখানে আছি প্রিয় মাতৃভাষা ও মাতৃভূমির প্রতি দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে অসামপ্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলি এই হোক অঙ্গীকার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখুনে রাঙা গল্প আমার বর্ণমালার
পরবর্তী নিবন্ধভাষার দাবিতে