একসঙ্গে চাকরি গেল ১২৮ জনের

তারা অস্থায়ীভাবে কর্মরত ছিলেন

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৩ নভেম্বর, ২০২২ at ৫:২৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ১২৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে একসঙ্গে চাকরি থেকে অব্যহতি দেয়া হয়েছে। তারা সবাই অস্থায়ীভাবে কর্মরত ছিলেন। বয়স ৫৯ বছর পূর্ণ হওয়ায় তাদের অব্যহতি দেয়া হয়। তবে এদের কারো কারো বয়স ৬০ বছরের বেশি। ৬৫ বছরও হয়েছে অনেকের।
অব্যহতি পাওয়া অনেকে গত ২০ বছরের বেশি সময় ধরে কর্মরত। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় তারা স্থায়ী হতে পারেনি। সর্বশেষ অস্থায়ীদের আন্দোলন ও দাবির প্রেক্ষিতে স্থায়ীকরণের উদ্যোগ নেন সিটি মেয়র। এ লক্ষ্যে গত মাসে দুটি কমিটিও গঠন করা হয়। পাশাপাশি স্থায়ীকরণের অংশ হিসেবে কর্মরতদের তথ্য হালনাগাদ করা হয়। একইসঙ্গে ৫৯ বছরের বেশি বয়স হলেও যারা কর্মরত আছেন তাদের তালিকা করা হয়। পরে প্রশাসনিক শৃঙ্খলার স্বার্থে তাদের চাকরি থেকে অব্যহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সর্বশেষ ১ নভেম্বর থেকে তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়। অব্যাহতি দিয়ে জারিকৃত অফিসে আদেশে বলা হয়, ৫৯ বছর বা তারও বেশি হওয়ায় মেয়রের অনুমোদনক্রমে নিয়োগ বাতিল করে সিটি কর্পোরেশনের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হল। এ বিষয়ে চসিকের সচিব খালেদ মাহমুদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ৫৯ বছর বয়স হলে অবসরে যেতে হয়। তাই যাদের বয়স ৫৯ বছর পূর্ণ হয়েছে তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এদিকে অব্যহতি পাওয়াদের মধ্যে পরিচ্ছন্ন বিভাগের ৪৭ জন, প্রকৌশল বিভাগের ৪৫ জন, সচিবালয় বিভাগের সাতজন, স্বাস্থ্য বিভাগের ১৪ জন, রাজস্ব বিভাগের নয়জন এবং শিক্ষা বিভাগের রয়েছেন ছয়জন। পরিচ্ছন্ন বিভাগ থেকে যাদের অব্যহতি দেয়া হয় তাদের মধ্যে ৪১ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী এবং ছয়জন হচ্ছেন ডোর টু ডোর প্রকল্পের পরিচ্ছন্ন কর্মী।
প্রকৌশল বিভাগের মধ্যে শ্রমিক রয়েছেন ১৪ জন। এছাড়া সাতজন ড্রাইভার, একজন মেকানিক, তিনজন ট্রাক হেলপার, চারজন ভ্যান চালক, দুইজন বৈদ্যুতিক হেলপার, পাঁচজন মালী, একজন বৈদ্যুতিক মিস্ত্রী, একজন সুপারভাইজার, দুইজন ফিটার, একজন সার্ভেয়ার, দুইজন পাম্প অপারেটর, একজন লাইন সারিবদ্ধকারী ও একজন রাজমিস্ত্রী হেলপার আছেন।
সচিবালয় বিভাগের মধ্যে রয়েছেন তিনজন নিরাপত্তা প্রহরী, দুইজন প্রহরী (শ্রমিক), একজন সহকারী ও একজন অফিস সহায়ক। রাজস্ব বিভাগের মধ্যে রয়েছেন তিনজন মার্কেট তত্ত্বাবধায়ক, দুইজন হিসাব সহকারী ও চারজন নিরাপত্তা প্রহরী। শিক্ষা বিভাগের মধ্যে রয়েছেন একজন করে শিক্ষক, আয়া, নৈশ প্রহরী, নৃত্য শিক্ষক, দারেয়ান ও শ্রমিক।
স্বাস্থ্য বিভাগের মধ্যে রয়েছেন একজন স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা, দুইজন নার্সিং সুপারভাইজার, একজন মুর্দা গোসলকারী, একজন পরিচ্ছন্নকর্মী, চারজন আয়া, দুইজন নিরাপত্তা প্রহরী, দুইজন স্বাস্থ্য সহকারী ও একজন ওয়াশিং অপারেটর।
অব্যহতি পাওয়া একাধিক কর্মচারী দৈনিক আজাদীকে বলেন, ১৫-২০ বছর ধরে চাকরি করলাম। কর্পোরেশন আমাদের স্থায়ী করেনি সেটা তো আমাদের দোষ না। এরপরও অস্থায়ীভাবে কাজ করে সীমিত বেতন পেতাম। সেটা দিয়ে সংসার চলত। এখন চাকরিও চলে গেছে। খাব কী। স্থায়ী হলে আনুতোষিক হিসেবে মোটা অংকের টাকা পেতাম। এখন সেটাও পাব না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চসিকের এক কর্মকর্তা দৈনিক আজাদীকে বলেন, নানা জটিলতার কারণে স্থায়ী করা সম্ভব হয়নি। তাই মানবিক কারণে ৫৯ বছর পূর্ণ হলেও এতদিন তাদের চাকরি থেকে অব্যহতি দেয়া হয়নি। এখন যেহেতু স্থায়ীকরণ প্রক্রিয়া চলছে তাই শৃঙ্খলার স্বার্থে অব্যহতি দেয়া হল। অস্থায়ীদের কেউ অবসরে গেলে কর্পোরেশন থেকে তাদের এককালীন দুই লাখ টাকা করে দেয়া হয় বলেও জানান তিনি। এবার মানবিক বিবেচনায় তিন লাখ টাকা করে দেয়ার আলোচনা চলছে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, চসিকে অনুমোদিত জনবল কাঠামো অনুযায়ী পদ আছে ৪ হাজার ২২৬টি। কিন্তু কর্মরত আছেন ৮ হাজার ৮০৩ জন। এর মধ্যে স্থায়ী আছেন ২ হাজার ৭৭০ জন। অর্থাৎ অস্থায়ী আছেন ৬ হাজার ৩৩ জন। অনুমোদিত জনবল কাঠামোর বিপরীতে বর্তমানে শূন্য পদ আছে এক হাজার ৪৫৭টি। প্রসঙ্গত, সংস্থাটির ১৯৮৮ সালে অনুমোদিত সাংগঠনিক কাঠামোতে ৩ হাজার ১৮০টি পদ আছে। এছাড়া ২০১৯ সালে আরো ১০৪৬টি পদ সৃজন করা হয়।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ এবং মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার প্রায় ছয় মাস পর গত মাসে অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্থায়ী করার লক্ষ্যে পৃথক দুটি কমিটি গঠন করেছে চসিক। এর মধ্যে একটি কমিটি অস্থায়ী কর্মচারীদের প্রস্তুতকৃত জ্যেষ্ঠতার তালিকা যাচাই-বাছাই করবে। অপর কমিটি আইনগত দিক খতিয়ে দেখবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচলন্ত শাটলে পাথর নিক্ষেপ, চবি শিক্ষার্থী রক্তাক্ত
পরবর্তী নিবন্ধখালেদা জিয়া ভোটে দাঁড়াতে পারবেন?