একবিংশ শতাব্দীতে কমলা হ্যারিস যখন আলোচনায়

রিতু পারভী | শনিবার , ২১ নভেম্বর, ২০২০ at ৮:১২ পূর্বাহ্ণ

দুই মেরুর শীতল যুদ্ধের অবসানের পর পুঁজিবাদী রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একক শক্তি হিসেবে বিশ্বে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে দীর্ঘসময় ধরে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নির্বাচন তাই সবসময় বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। ভিন্ন ভিন্ন ভাষা, সংস্কৃতির অভিবাসী মানুষের দেশ আমেরিকা গণতন্ত্র চর্চার অন্যতম দেশ হিসেবে পরিচিত হলেও এই একবিংশ শতাব্দিতেও সেখানে বর্ণবৈষম্য, শ্রেণিবৈষম্য, লিঙ্গবৈষম্য প্রকট। তাই স্বাভাবিকভাবেই সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে উপ-রাষ্ট্রপতি পদে একজন আফ্রিকীয় পিতা এবং দক্ষিণ এশীয় মাতার কন্যা কমলা হ্যারিস আলোচনায় উঠে আসেন।
কমলা হ্যারিস প্রথম কালো নারী হিসেবে উপরাষ্ট্রপতি পদে সরাসরি নির্বাচিত হন। তিনি একই সাথে প্রথম দক্ষিণ এশীয় এবং প্রথম আফ্রিকীয় আমেরিকান যিনি এই পদে নির্বাচিত হয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই প্রেসিডেন্ট পদে জো বাইডেনের বিজয়ী হওয়ার চেয়েও বেশি আলোচনায় আসেন কমলা হ্যারিস। প্রথম নারী হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপরাষ্ট্রপতি নামের দীর্ঘ তালিকায় যুক্ত হন তিনি। নারীর ক্ষমতায়নের এই যাত্রা বড়ই ধীর।
একজন কালো নাগরিক এবং একজন নারী হিসেবে কমলার যুদ্ধটা শুরু হয়েছিল আরো অনেক আগে থেকে। একক মাতা শ্যামলা গোপালন কন্যাদের যে মনোবল নিয়ে বড় করেছেন তাতে কমলার জন্য সামনে এগুনোর পথ সহজ হয়েছে। কমলা তাই তাঁর কৃতিত্বে মা’কে ভাগ দিয়েছেন সবার আগে। মা তাঁকে শিখিয়েছেন নিজের পছন্দের কাজের সাথে কোনরকম আপোষ না করতে এবং সবসময় নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখতে। মায়ের শিক্ষায় কমলা এগিয়ে গেছেন। ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রথম নারী এটর্নী জেনারেল পদে নির্বাচিত হন তিনি। সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ডেমোক্রেট হিসেবে আলোচিত হন তিনি।
বারাক ওবামার পছন্দের মানুষ হিসেবে কমলা হ্যারিস ২০১৬ সাল থেকে সিনেট সহ বিভিন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ নেন। আফ্রিকান ভারতীয় আমেরিকান নারী হিসেবে বারাক ওবামা কমলা হ্যারিসকে রাজনৈতিক পথ সুগম করতে পাশে থাকেন। বিপুল সংখ্যক কালো ভোটারের কথা মাথায় রেখে জো বাইডেন কমলা হ্যারিসকে তাঁর ‘রানিং মেট’ হিসেবে পছন্দ করেন। কমলা হ্যারিসের নারী হিসেবে উপরাষ্ট্রপতি পদে সরাসরি জয় এবং সাথে কালো আমেরিকান হিসেবে তাঁর এই বিজয় অনেকগুলো দিক ইঙ্গিত করে।
মানব অগ্রযাত্রার এই একবিংশ শতাব্দীতে নারীদের অবস্থান এবং তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত তথাকথিত সর্বাধিক গণতন্ত্র চর্চার দেশে। বৈষম্য এই শতাব্দিতেও কতখানি প্রকট হতে পারে তা এই নির্বাচন এবং তাতে কমলা হ্যারিসে জয়ের আলোচনা পরিষ্কার করে দেয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশে রাষ্ট্র ব্যবস্থার সর্বোচ্চ পর্যায়ে নারীর ক্ষমতায়ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় তবুও কিছুটা এগিয়ে যদিও তা সভ্যতা এবং সময়ের তুলনায় একেবারেই নগণ্য। কমলা ছিলেন গোটা আমেরিকায় কোনো বড় দলের টিকিট পাওয়া তৃতীয় নারী যিনি উপ-রাষ্ট্রপতি পদে দাঁড়িয়েছেন ও লড়াই করেছেন। এর আগে ২০০৮ সালে রিপাবলিকান দল থেকে আলাস্কার গভর্নর সারাহ পলিন নামে এক শ্বেতকায়া, রক্ষণশীল সুদর্শনা ও ১৯৮৪ সালে নিউইয়র্কের প্রতিনিধি জেরাল্ডিন ফেরারাওকে আমরা দেখেছি এই পদে লড়াই করতে।
এখানে কমলাকে উপরাষ্ট্রপতি পদে পছন্দের পেছনে তাঁর যোগ্যতার পাশাপাশি তাঁর নারী পরিচয় এবং কালো আফ্রিকান আমেরিকান পরিচয়কে কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হয়েছে। বর্ণ বৈষম্যের প্রকটতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সুস্পষ্ট। জর্জ ফ্লয়েড হত্যা পরবর্তী আন্দোলন এখনো মানুষের মনে দগদগে। একজন কালো আমেরিকান হিসেবে তাই কমলা হ্যারিসের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপরাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সভত্যার বিকাশের চর্চা হয় যে দেশে সবচেয়ে বেশি, মানবতার চর্চা হয় বলা হয় যে দেশে সে দেশে একজন কালো আমেরিকান নারীর ক্ষমতায় যাওয়া এখনো আলোচনার বিষয় হয়ে উঠে। বর্ণবৈষম্য, লিঙ্গবৈষম্য একবিংশ শতকেও এতোটাই প্রকট।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবুবু ওয়ার্ল্ডের প্রথম বর্ষপূর্তি উদযাপন শুরু
পরবর্তী নিবন্ধনারী চেতনা