উড়ন্ত গাড়ি বাজারে আসছে, যানজটের শহরগুলোর জন্য স্বস্তির বার্তা

| রবিবার , ২০ ডিসেম্বর, ২০২০ at ১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ

ভবিষ্যতে বিজ্ঞান আমাদের জীবন কীভাবে বদলে দিতে পারে তা নিয়ে চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে হলিউডে। যেমন ১৯৮২ সালের ছবি ব্লেড রানারে দেখানো হয়েছিল ভবিষ্যতের লস এঞ্জেলস শহরে আকাশের মহাসড়ক দিয়ে ছুটে চলেছে উড়ন্ত যানবাহন। আসলেই তার পর থেকে প্রযুক্তি যেভাবে দ্রুতগতিতে ছুটে চলেছে হয়ত হলিউডের ছবি নির্মাতারা তা তখন কল্পনাও করতে পারেননি যে আকাশে উড়তে পারে তাদের কল্পনার এমন অনেক যানবাহন। উড়ন্ত ট্যাক্সি এখন বাস্তবতায় রূপ পেয়েছে। এটা আগামী দশকগুলোতে আমাদের যাতায়াত, কর্মজীবন এবং জীবনযাত্রায় একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে চলেছে।
ব্যাটারি প্রযুক্তি, কম্পিউটার এবং বিজ্ঞানের নানা ক্ষেত্রে এতটাই অগ্রগতি হয়েছে যে উদ্ভাবকরা এখন ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন ধরনের উড়ন্ত গাড়ি তৈরি করছেন – সেইসঙ্গে এসব গাড়ি আকাশে কোন পথ ধরে চলবে তার পথ নির্দেশনা পদ্ধতিও তারা উদ্ভাবন করেছেন।
কেমন দেখতে হবে এসব উড়ন্ত যান? এগুলো হবে বাণিজ্যিক বিমানের চেয়ে আকারে অনেক ছোট। বেশিরভাগই ডিজাইন করা হয়েছে ডানার বদলে হেলিকপ্টারের মত ঘূর্ণায়মান পাখা বা রোটার দিয়ে, যাতে গাড়িগুলো খাড়াভাবে আকাশে উঠতে বা নামতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা হল এই উড়ন্ত গাড়িগুলোর নক্সা তৈরি করা হয়েছে এমনভাবে যাতে তারা দ্রুত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারে, বিশেষ করে যানজটের শহরগুলোতে মানুষ যাতে দ্রুত তার গন্তব্যে পৌঁছতে পারে। তবে এই মুহূর্তে আকাশ যানের বাজার কতটা আশাব্যঞ্জক তা বলা মুশকিল। যদিও বেশ কয়েকটি নতুন প্রতিষ্ঠান পাল্লা দিয়ে বাণিজ্যিক আকাশ-যান, উড়ন্ত মোটরবাইক এবং ব্যক্তিগত উড়ন্ত ট্যাক্সি তৈরির কাজে নেমে পড়েছে। পাশাপাশি গাড়ি ও বিমান সংস্থাগুলো এই সম্ভাবনাময় শিল্পে লগ্নি করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের ধারণা ২০৪০ সাল নাগাদ এটা ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলারের শিল্প হয়ে উঠতে পারে। এমনকি উবার কোম্পানিও এই উড়ন্ত ট্যাক্সি সেবায় তাদের ভূমিকা কী হবে তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছে। আকাশ পথে ‘উবার এলিভেট’ নাম দিয়ে তারা ব্যবসা করার ছক কাটছে।
ইতোমধ্যে, বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ আকাশ পথে পরিবহন ব্যবস্থার নতুন নিয়মনীতি ও নিরাপত্তার মান কী হবে তার রূপরেখা তৈরির কাজও শুরু করেছে। জার্মান ভিত্তিক কোম্পানি ভলোকপ্টার তাদের ভলোসিটি মডেলের বিদ্যুতশক্তি চালিত উড়ন্ত ট্যাক্সিকে প্রথম বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য লাইসেন্স দিয়েছে। সংস্থাটির পরিকল্পনা অনুযায়ী এই যান আগামীতে পাইলট ছাড়াই উড়তে পারবে। শুরুর দিকে ভলোসিটির পাইলট চালিত উড়ন্ত ট্যাক্সিতে বসতে পারবেন মাত্র একজন যাত্রী। ফলে এই রাইডের জন্য ভাা পড়বে একটু বেশি। কিন্তু তারা আশা করছে যাত্রীদের মধ্যে আস্থা তৈরি হলে তারা স্বয়ং-চালিত মডেল বের করবে, যেখানে চালকের প্রয়োজন হবে না। এই যান চলবে বিদ্যুতশক্তিতে, গাড়ির কোনো ডানা থাকবে না। নয়টি ব্যাটারি থেকে সরবরাহ করা বিদ্যুতশক্তি দিয়ে চলবে এ গাড়ি।
বিমান ওঠানামার জন্য যেমন বিমানবন্দর বা এয়ারপোর্ট থাকে, এইসব উড়ন্ত ট্যাক্সি ওঠানামার জন্য বড় বড় শহরের বিভিন্ন জায়গায় বসানো হবে ভার্টিপোর্ট। এই ট্যাক্সি যেহেতু খাড়াভাবে (ভার্টিকালি) আকাশে উঠবে, সে কারণেই এই ওঠানামার বন্দরগুলোর নাম তারা দিতে চাইছেন ভার্টিপোর্ট। ভলোসিটি বাণিজ্যিকভাবে তাদের উড়ান শুরু করবে ২০২২ সালে। এ কোম্পানি জানিয়েছে, ‘এটা ধনীদের জন্য একটা শখের খেলনা হোক সেটা আমরা চাই না। আমরা চাই এটা বড় শহরের সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থার অংশ হবে। প্রত্যেকের যেমন হেঁটে, গাড়ি করে বা সাইকেলে চড়ে যাতায়াতের সুযোগ আছে, তেমনি আকাশপথে যাতায়াতেরও সুযোগ তাদের থাকবে।’
প্রাথমিক পর্যায়ে একটা উড়ানে একটা টিকেটের দাম পড়বে ৩৫০ ডলার (২৭০ পাউন্ড)। কিন্তু ভলোকপ্টার কোম্পানি বলছে, তাদের লক্ষ্য হল ক্রমশ এই খরচ প্রতিযোগিতামূলক করে তোলা। উবার কোম্পানিতে যেমন উবার ব্ল্যাক নামে বেশি অর্থের বিনিময়ে উন্নত সেবার ব্যবস্থা আছে, তারা সেই মডেলের পরিষেবার কথা ভাবছেন।
অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও তাদের আকাশ যান তৈরির জন্য বর্তমান গাড়ি নির্মাতাদের সাথে অংশীদার হিসাবে কাজ শুরু করেছে। যেমন জাপানে স্কাই-ড্রাইভ নামে নতুন একটি স্টার্টআপ কোম্পানি তাদের পূর্ণ বিদ্যুত-চালিত উড়ন্ত ট্যাক্সির পরীক্ষামূলক উড়ানের জন্য টয়োটা কোম্পানির সাথে একজোটে কাজ করছে। বলা হচ্ছে তাদের উড়ন্ত ট্যাক্সি বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্র বিদ্যুত-চালিত যান যা সোজাসুজি খাড়াভাবে আকাশে উঠতে ও নামতে পারবে। সংস্থাটি এই গ্রীষ্ম মৌসুমে বিমান চলাচল ক্ষেত্রের আশেপাশে তাদের একটি যান সফলভাবে কয়েক মিনিটের জন্য উড়িয়েছে। সেটিতে চালক ছিল। একটা বিষয়ে সব বিশেষজ্ঞই একমত যে নিউ ইয়র্ক, বেইজিং, হংকংএর মত বড় শহরগুলোয় গাড়ির সংখ্যা যেভাবে বেড়েছে, এবং তার ফলে যে ধরনের যানজট তৈরি হচ্ছে তাতে এসব দেশের জন্য তাদের ব্যবসা ও অর্থনীতি সচল রাখতে আকাশেও সড়ক ব্যবস্থা গড়ে তোলার কোন বিকল্প আগামীতে নেই। হয়ত ২০৪০ পরবর্তী বিশ্বে মাটিতে চলাফেরার পাশাপাশি, আকাশে চলাফেরার নতুন একটি দুনিয়া তৈরি হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘রূপসা নদীর বাঁকে’ এবার অন্তর্জালে
পরবর্তী নিবন্ধডিএসইর লেনদেন কমেছে বেড়েছে সিএসইর