নতুন অণু আবিষ্কার, মানবদেহে দ্রুত বাড়াবে শ্বেতকণিকা

| মঙ্গলবার , ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৭:২২ পূর্বাহ্ণ

মানবদেহে ইমিউনিটি সিস্টেমের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল শ্বেত রক্তকণিকা। তবে স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা বা কেমোথেরাপির মতো চিকিৎসার কারণে কমে যেতে পারে এর সংখ্যা। সমপ্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইয়েল ইউনিভার্সিটি’র বিজ্ঞানীরা এমন এক নতুন অণু আবিষ্কার করেছেন, যা শ্বেত রক্তকণিকার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধিতে সহায়ক। আর অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়াই যে কোনো সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম এগুলো।

মানবদেহে ‘নিউট্রোফিলস’ নামে এক ধরনের শ্বেত রক্তকণিকা রয়েছে, যা শরীরে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাকের মতো বহিরাগত ঝুঁকি ঠেকাতে অগ্রগামী ভূমিকা রাখে। তবে দুর্ভাগ্যবশত, ‘নিউট্রোপেনিয়া’ রোগে আক্রান্ত হলে দেহে নিউট্রোফিলসের মাত্রা কমে যেতে পারে, যা হতে পারে কিছু জেনেটিক বা কেমোথেরাপির মতো চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে। উভয়ক্ষেত্রেই, রক্তে নিউট্রোফিলের মাত্রা কমে গেলে তা মানবদেহে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। তবে, এদের মাত্রা বাড়ানোর মতো বেশ কিছু বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে এখন। খবর বিডিনিউজের।

নতুন গবেষণায় ইয়েল ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা একটি অণু শনাক্ত করেছেন, যা মানবদেহকে এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণে সাহায্য করতে পারে। এর আনুষ্ঠানিক নাম ‘এ৪৮৫’ হলেও একে ডাকা হচ্ছে ‘প্রোহিবেরিন’ বলে। অণুটি রক্তের কিছু প্রোটিন অণুর উৎপাদন বন্ধ করে দেয়, যা মূলত মানবদেহের জিনের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করে বা অস্থি মজ্জা থেকে নিউট্রোফিল ও অন্যান্য শ্বেত রক্তকণিকা নিঃসরণ বাড়াতে সাহায্য করে।

ইঁদুরের ওপর চালানো এ পরীক্ষায় অণুটি (এ৪৮৫) খুব দ্রুত ও স্বল্প সময়ের জন্য কাজ করেছে, যেখানে ইঁদুরের দেহে শ্বেত রক্তকণিকার মাত্রা ১২ ঘণ্টার মধ্যেই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। ব্যবস্থাটি সুবিধাজনক না শোনালেও এটি একটি ইতিবাচক বিষয় হতে পারে বলে দাবি করেছে এ গবেষণার গবেষক দলটি। এ গবেষণার প্রধান লেখক নিকোলাই জাসকি বলেছেন, বর্তমানে মানবদেহের রক্ত কোষের শ্বেত রক্তকণিকার মাত্রা কমে গেলে মূলত যে চিকিৎসা দেওয়া হয়, তা হল ‘গ্রানুলোসাইট কলোনি স্টিমুলেটিং ফ্যাক্টর’ বা জিসিএসএফ। খোদ মানবদেহ উৎপাদিত এ ব্যবস্থাকে ওষুধ হিসাবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এর একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব রয়েছে, যা কিছু পরিস্থিতিতে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। ফলে চিকিৎসা খাতে এর ব্যবহার সীমিত করা হয়েছে। নতুন আবিষ্কৃত অণুটি (এ৪৮৫) জিসিএসএফ চিকিৎসা ব্যবস্থার মত কার্যকরী হলেও এটি সময় নেয় কম।

গবেষণার ফলাফল থেকে ইঙ্গিত মেলে, অ্যান্টিবায়োটিকের ওপর মানুষের নির্ভরতা কমিয়ে আনতে সহায়ক হতে পারে এ৪৮৫এর মতো অণুগুলো। জাসকি বলেন, কেমোথেরাপির পর মানবদেহে শ্বেত রক্তকণিকার মাত্রা কমে এলে যে রোগ হয়, তা ‘নিউট্রোপেনিক’ জ্বর নামে পরিচিত। আর এটি ঠেকানোর একমাত্র অনুমোদিত থেরাপি হল অ্যান্টিবায়োটিক। তবে অ্যান্টিবায়োটিকের আরেকটি বিকল্প হতে পারে নতুন আবিষ্কৃত অণুটি।

গবেষকরা বলছেন, অণুটি ঠিক কীভাবে কাজ করে, সে বিষয়টি এখনও প্রকাশ না পেলেও এ বিষয়ে আরও কাজ বাকি। আর অন্যান্য সংক্রামকের ওপরও এর প্রভাব পরীক্ষা করা প্রয়োজন। গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে চিকিৎসা বিষয়ক জার্নাল ‘ইমিউনিটি’তে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকাদায় চাপা কৃষকের আশা
পরবর্তী নিবন্ধরাজা চার্লস ক্যান্সারে আক্রান্ত