নতুন প্রজাতির তারার সন্ধান মিল্কিওয়েতে, নাম ‘বুড়ো ধূমপায়ী’

| সোমবার , ২৯ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৮:৪৪ পূর্বাহ্ণ

পৃথিবীর আশ্রয়স্থল অর্থাৎ মিল্কি ওয়ে’র কেন্দ্রে খুঁজে পাওয়া গেছে নতুন এক ধরনের তারাএমনই দাবি বিজ্ঞানীদের। বিজ্ঞানীরা এ তারাগুলোর ডাকনাম দিয়েছেন ‘ওল্ড স্মোকার্স’। এর কারণ হল, তারাগুলো থেকে ‘গ্যাসের মেঘ’ বেরোতে দেখা গেছে। মহাবিশ্বে বিভিন্ন এমন লাল রঙের বিশাল নক্ষত্র রয়েছে, যেগুলো আকারে মাঝারি। কোনো তারা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার মূহূর্তে এমন চেহারা পায়। তবে, এর আগে নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রক্রিয়ার কারণে সেইসব মৃত তারায় হাইড্রোজেন ফুরিয়ে যায়। খবর বিডিনিউজের। ‘ওল্ড স্মোকার্স’ তারাগুলো খুঁজে পেয়েছেন আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের একটি দল, যার নেতৃত্বে ছিলেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ হার্টফোর্ডশায়ার’এর অধ্যাপক ফিলিপ লুকাস। যুগান্তকারী এ অনুসন্ধানের আগে ১০ বছর রাতের আকাশে জরিপ চালিয়ে প্রায় একশ কোটি তারার ইনফ্রারেড আলো পর্যবেক্ষণ করেছেন গবেষকরা। ‘ভিস্তা ভ্যারিয়েবলস ইন দ্য ভায়া ল্যাকটি’ বা ‘ট্রিপল ভি’ নামে পরিচিত এক দীর্ঘ মেয়াদী জরিপের অংশ ছিল এ প্রকল্প। এ গবেষণার অংশ হিসেবে গবেষকরা মিল্কিওয়ের কেন্দ্রের কাছাকাছি এমন ২১টি লাল রঙের তারা খুঁজে পেয়েছেন, যাদের উজ্জ্বলতায় রহস্যময় তফাৎ দেখা গেছে।

অধ্যাপল লুকাস ব্যাখ্যা করেছেন, এই ২১টি তারা অগ্ন্যুৎপাত সৃষ্টিকারী কোনো ‘প্রোটোস্টার’ অথবা নবজাতক তারার ঝাঁকুনিতে গঠিত হয়েছে কিনা বা তারার সামনে কোনো ডিস্ক বা ধুলোর খোসার আবরণ তৈরি হয়েছে কিনা, সে বিষয়গুলো আমরা নিশ্চিত ছিলাম না। আর তৃতীয় ধারণা হল, এগুলো এমন পুরোনো বিশাল নক্ষত্র ছিল, যেগুলো নিজের জীবনকালের শেষ দিকে তামাকখোর বুড়োদের মতো গ্যাস ছাড়ছে।

তবে, তারাগুলোর ওপর বিশ্লেষণ চালিয়ে গবেষকরা বলছেন, এগুলো নতুন এক ধরনের ‘রেড জায়ান্ট’। ট্রিপল ভি জরিপের প্রতিষ্ঠাতা ও চিলির আন্দ্রেস বেলো ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক দান্তে মিনিটি বলেন, বেশ কয়েক বছর বা দশক ধরে এইসব পুরোনো তারা নিরবে অবস্থান করে পরবর্তীতে একেবারে নতুন উপায়ে ধোয়ার মেঘ ‘ফুঁকে থাকে’। অনেক বছর ধরেই এরা দেখতে খুবই অনুজ্জ্বল ও লালচে হওয়ায় আমরা অনেক সময় এদের একেবারেই দেখতে পাই না।

তারাগুলো মিল্কিওয়ে’র সবচেয়ে গভীর এলাকায় ঘনীভূত অবস্থায় ছিল, যেটি ‘নিউক্লিয়ার ডিস্ক’ নামেও পরিচিত। এটি এমন এক এলাকা, যেগুলোর তারায় অন্যান্য জায়গার তুলনায় ভারী উপাদানে সমৃদ্ধ হতে থাকে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর ফলে বিভিন্ন লাল দৈত্যাকার নক্ষত্রের অপেক্ষাকৃত শীতল বাইরের স্তরগুলোতে গ্যাস থেকে ধূলিকণা ঘনীভূত করার প্রক্রিয়া সহজ হয়ে ওঠে। তারাগুলো কীভাবে ঘন ধোয়া ছাড়ার অবস্থায় যায়, তা এখনও গবেষণা দলটির কাছে রহস্য। গবেষকদের বিশ্বাস, নিউক্লিয়ার ডিস্ক ও অন্যান্য ছায়াপথের ধাতুসমৃদ্ধ এলাকাগুলোয় বিভিন্ন উপাদান ঠিক কী উপায়ে ছড়িয়ে পড়ে, সে বিষয়ে প্রচলিত ধারণায় পরিবর্তন আনতে পারে নতুন এ অনুসন্ধান।

এ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন যুক্তরাজ্য, চিলি, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রাজিল, জার্মানি ও ইতালির জোতির্বিদরা, যেখানে তারা গবেষণা চালাতে ব্যবহার করেছেন যুক্তরাজ্যে তৈরি ‘ভিজিবল অ্যান্ড ইনফ্রারেড সার্ভে টেলিস্কোপ (ভিসতা)’ নামের টেলিস্কোপ। আর এর অবস্থান চিলির আন্দিজ পর্বতমালায় অবস্থিত ‘সেরো প্যারানাল অবজার্ভেটরি’তে। ওল্ড স্মোকার্সের পাশাপাশি ‘প্রোটোস্টার’ নামে পরিচিত ডজনখানেক বিরল নতুন তারা খুঁজে পেয়েছে গবেষণা দলটি, যেগুলো নতুন কোনো সৌরজগৎ গঠনের অংশ হিসেবে কয়েক মাস, বছর এমনকি দশক ধরে ভারী বিস্ফোরণ সহ্য করে থাকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকারখানায় যাওয়ার পথে বাস চাপায় টেকনিশিয়ানের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধখাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল