ঈদে কক্সবাজারে লাখো পর্যটক

চাপ নেই আগের মতো

কক্সবাজার প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ১৪ জুলাই, ২০২২ at ৬:৩৭ পূর্বাহ্ণ

পবিত্র ঈদুল আযহার ছুটিতে দেশের বৃহত্তম অবকাশযাপন কেন্দ্র কক্সবাজারে বসেছে লাখো পর্যটকের মিলনমেলা। তবে এবারের ঈদে চাপ নেই আগের মতো। পদ্মাসেতুর কারণে অনেক পর্যটক কুয়াকাটামুখী হওয়ায় এবারের ঈদে কক্সবাজারে পর্যটকদের চাপ কমেছে বলে মনে করেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণেও অনেকে তাদের ভ্রমণ বাজেট কাটছাঁট করছে বলে মনে করছেন তারা।
গতকাল রাত ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কক্সবাজারের হোটেল-মোটেলসমূহের প্রায় ৯০% কক্ষ অতিথিপূর্ণ হয়েছে বলে জানিয়েছে হোটেল মালিক সমিতি। এছাড়া তারকা মানের হোটেলগুলোতে ঈদের পরদিন থেকেই হাউসফুল যাচ্ছে।
প্রতিবছর দুই ঈদ এবং থার্টিফার্স্টের ছুটিতে কক্সবাজারে সর্বোচ্চ সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটে। এ সময় হোটেল-মোটেলে শতভাগ রুম বুকিং থাকে। গত ঈদের ছুটিতেও প্রত্যাশিত সংখ্যক পর্যটক এসেছেন কক্সবাজারে। সেসময় হোটেল-মোটেলে ছিল উপচে পড়া ভিড়। তবে ঈদুল আযহার ছুটিতে সেই ভিড় নেই বলে জানান বাংলাদেশ ট্যুরিজম সার্ভিসেস এসোসিয়েশন কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার। গতকাল বুধবার রাত ৮টার সময় তিনি জানান, কক্সবাজারের প্রায় ৫ শত হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউসে প্রায় দেড় লাখ পর্যটকের রাত যাপনের সুবিধা রয়েছে। তবে শহরের তারকা হোটেল ছাড়া বাকী হোটেলগুলোতে আগের ঈদের মতো শতভাগ বুকিং হয়নি।
কলাতলী-মেরিন ড্রাইভ হোটেল-রিসোর্টস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান জানান, এবারের ঈদের ছুটিতে প্রত্যাশিত সংখ্যক পর্যটক না এলেও ঈদের পরদিন থেকে শহরের তারকা হোটেলগুলোর প্রায় শতভাগ কক্ষ বুকিং যাচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য হোটেলগুলোতেও প্রায় ৯০ ভাগ কক্ষ ভাড়া হয়েছে।
সাগরপাড়ের তারকা হোটেল সী-গালের প্রধান নির্বাহী ইমরুল কায়েস ছিদ্দিকী রুমী জানান, ঈদের ছুটিতে আগামী কয়েকদিন পর্যটকদের বুকিং ভাল আছে। কিন্তু এরপর কোনো চাপ নেই।
অবশ্য কক্সবাজারে অন্য ঈদের মতো পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় না থাকায় অসাধু হোটেল ব্যবসায়ীরাও আর পর্যটকদের কাছ থেকে ‘গলাকাটা’ ভাড়া আদায় করতে পারছে না। শহরের রাস্তাঘাটে আগের মতো দীর্ঘ যানজটও নেই। ফলে পর্যটকরা সস্তায় হোটেল কক্ষ, যানবাহনসহ অন্যান্য সেবা সহজেই পাচ্ছেন। স্থানীয়দেরও যানবাহন সংকট নিয়ে বিরক্তি নেই। ফলে এবারের ঈদের ছুটিতে পর্যটকেরা স্বাচ্ছন্দে কক্সবাজারের পর্যটন কেন্দ্রসমূহ উপভোগ করতে পারছেন বলে মনে করেন কক্সবাজার সিটি কলেজের ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মঈনুল হাসান।
তিনি বলেন, একদিনে লাখ পর্যটক এলে শহরের রাস্তাঘাটে যানবাহনের চাপে অচলাবস্থা তৈরি হয়। এ সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট তৈরি হয় এবং বাজারে দাম বেড়ে যায়। তাতে একদিকে শহরবাসীর কষ্ট হয়, অন্যদিকে পর্যটকরাও স্বাচ্ছন্দে কক্সবাজার উপভোগ করতে পারেন না।
ঢাকা থেকে কক্সবাজারে সপরিবারে বেড়াতে আসা পর্যটক মাহফুজ কামাল ও সাদিয়া ফারহানও তাদের সন্তুষ্টির কথা প্রকাশ করে বলেন, এবারের ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারের রাস্তাঘাটে দীর্ঘ যানজট নেই। এ কারণে সময় মতো ঘোরাঘুরি করা সম্ভব হয়েছে। অনেক সময় যানজটের বিরক্তির কারণে বেড়ানোর আনন্দই মাটি হয়ে যায়। কিন্তু এবারের ঈদের দৃশ্যই আলাদা। তারা বলেন, কক্সবাজারে এখন বৃষ্টি নেই, বেশি গরমও নেই। রাতের বেলায় সৈকতে মেঘের সাথে জোৎস্নার লুকোচুরি খেলার দৃশ্য উপভোগ করতে বেশ অসাধারণ লেগেছে। তাই ভাবছি কক্সবাজারে কয়েকদিন বেশিই থাকবো। কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, ঈদের ছুটিতে অবকাশ যাপনের জন্য ভ্রমণ পিপাসু হাজার হাজার মানুষ কক্সবাজারে এসেছেন। তাদের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখেই টুরিস্ট পুলিশ সদস্যরা পর্যটন কেন্দ্র ও সড়ক মহাসড়কগুলোতে টহল জোরদারের পাশাপাশি সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করছে।
জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, লাখো পর্যটকের ভীড়ের মাঝে কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য জেলা প্রশাসনের সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির পর্যটন সেলের সদস্যরাও ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সৈকতে দায়িত্ব পালন করছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখাগড়াছড়ির পাহাড়ি বনে এশীয় তেল শালিক
পরবর্তী নিবন্ধবাঁশখালীতে অবৈধভাবে পাহাড় কাটায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা