ইক্বামতে দ্বীন প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব- এটি আল্লাহর ফরজ বিধান

ডা. মোহাম্মদ ওমর ফারুক | শুক্রবার , ১ জুলাই, ২০২২ at ৫:১৭ পূর্বাহ্ণ

(পর্ব – ০৩)

ইক্বামতে দ্বীন প্রতিষ্ঠা যে আল্লাহর অন্যতম ফরজ বিধান-তা গত দু’পর্বে আমি আল্লাহ তায়ালার কোরআন ও রাসূল (সাঃ) এর হাদীস দিয়ে সম্মানিত পাঠকদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। সমাপনী পর্বে বাকী অংশটুকু আপনাদের সামনে পেশ করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। রাষ্ট্রব্যবস্থায় ইসলামকে অস্বীকার করা শিরিক পর্যায়ের অপরাধ। পবিত্র কোরআনে যখন বলা হয়, ‘এ লোকেরা আল্লাহ তায়ালাকে বাদ দিয়ে তাদের ধর্মীয় পণ্ডিত, তাদের পীর-দরবেশদের মাবুদ বানিয়ে নিয়েছে এবং (মাবুদ বানিয়ে রেখেছে) মারইয়াম পুত্র মাসীহকেও, অথচ এক ইলাহ ছাড়া এদের অন্য কারোই বন্দেগী করতে আদেশ দেয়া হয়নি, তিনি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই; তারা যাদের তাঁর সাথে শরীক করে, তিনি এসব থেকে অনেক পবিত্র’- সূরা আত তাওবা-৩১। সাহাবী আদী বিন হাতিম (রাঃ) এর কাছে আমাদের মহানবী (সাঃ) এর দ্বীন যখন পৌঁছে, তখন তিনি সিরিয়ার দিকে পালিয়ে যান। অজ্ঞতার যুগে তিনি খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।

এখানে তাঁর বোন ও তাঁর দলের লোকেরা বন্দী হয়ে যায়। রাসূল (সাঃ) দয়াপরবশ হয়ে তাঁর বোনকে মুক্তি দেন এবং তাকে কিছু অর্থও প্রদান করেন। সে তখন সরাসরি তাঁর ভাইয়ের কাছে চলে যায় এবং তাঁকে ইসলাম গ্রহণে উৎসাহিত করেন এবং মদিনায় গমনের অনুরোধ করেন। সুতরাং আদী (রাঃ) মদিনায় চলে আসেন। তিনি তাঁর তাঈ গোত্রের নেতা ছিলেন। তাঁর পিতার দানশীলতা দুনিয়াব্যাপী প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল। জনগণ রাসূল (সাঃ) কে তাঁর আগমনের সংবাদ অবহিত করেন। তিনি স্বয়ং রাসূল (সাঃ) এর কাছে আসেন। ঐ সময় আদী (রাঃ) এর গলায় রৌপ্য নির্মিত ক্রুশ লটকানো ছিল। রাসূল (সাঃ) এর পবিত্র মুখে উপরোক্ত আয়াতটি যখন উচ্চারিত হচ্ছিল, তখন আদী (রাঃ) বলেন, ‘ইহুদি খ্রিস্ট্রানরাতো তাদের আলেম ও দরবেশদের উপাসনা করেননি’।

তখন রাসূল (সাঃ) বলেন, ‘তাহলে শুনো! তারা তাদের আলেম ও দরবেশদের হারামকৃত বিষয়কে হারাম বলে মেনে নেয় এবং হালালকৃত বিষয়কে হালাল বলে স্বীকার করে নেয়। এটাই তাদেরকে তাদের উপাসনা করার মতন’-তিরমিজি ৩০৯৫ অতএব তিনি বলেনঃ ‘হে আদী! আল্লাহ সবচেয়ে বড় এটা তুমি মেনে নিতে পারনি বলেই কি সিরিয়া পালিয়ে গিয়েছিলে? তোমার ধারণা আল্লাহর চেয়ে বড় কেহ আছে কি? আল্লাহ ছাড়া উপাসনার যোগ্য আর কেহ নেই’ এটা কি তুমি অস্বীকার করছ? তোমার মতে কি তিনি ছাড়া অন্য কেহ ইবাদাতের যোাগ্য আছে? অতঃপর তিনি তাঁকে ইসলামের দা’ওয়াত দেন। আদী (রাঃ) তা কবূল করেন এবং আল্লাহর একাত্নবাদ ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রিসালাতের সাক্ষ্য প্রদান করেন। তা দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুখমন্ডল খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠে। তিনি বলেনঃ ‘ইয়াহুদীদের উপর আল্লাহর ক্রোধ পতিত হয়েছে এবং খৃষ্টানরা পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে।

যারা আল্লাহর দ্বীন/শরীয়তের বিপরীত আইন করে এবং যারা তা মেনে নেয় তাদের ব্যপারে আল্লাহতায়ালা বলছেন, ‘এদের কি এমন কিছু শরিক আছে, যারা এদের জন্য এমন জীবন বিধান প্রণয়ন করে নিয়েছে, যার অনুমতি আল্লাহতায়ালা কখনো দান করেন নাই’- সূরা আশ শূরা-২১। বিশ্বনবী মোহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হচ্ছেন আমাদের আদর্শ। আমরা তাঁর উম্মত। তাঁর জীবনধারা হলো বাস্তব ইসলাম। রাসূল (সাঃ) এর সুন্নত তথা জীবনধারা অস্বীকারকারীদের দ্বারা ইক্বামতে দ্বীন হবে না। কারণ সেখানে তো দ্বীনই থাকবে না। আর একথা স্বতঃসিদ্ধ যে, রাসূল (সাঃ) ১০ বছর একটি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন। তিনি আল্লাহর কোরআন দিয়ে মদিনা রাষ্ট্র পরিচালনা করেছিলেন। তাহলে কি তিনি ইক্বামতে দ্বীন করেননি? শরীয়তের নীতি হলো-ওয়াজিব পালন করতে যা অপরিহার্য তা ওয়াজিব।

আর আমরা জানি কোরআনের মধ্যে এমন অনেক বিধান রয়েছে যা একমাত্র রাষ্ট্রই বাস্তবায়ন করতে পারে। যেমন: হুদুদ, কেসাস, বেনামাজির শাস্তি, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি। তাছাড়া যাকাত ব্যবস্থা হলো রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। ইসলামী আদর্শে অবিশ্বাসীরা অবশ্যই যিনার শাস্তি, কতলের কেসাস বাস্তবায়ন করবে না। সিংহাসন, রাষ্ট্র ক্ষমতা, মসনদে বসার জন্য নয় বরং আল কোরআনকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য ইক্বামতে দ্বীন। এর অর্থ হলো: শুধুমাত্র রাজনীতিই যে ইক্বামতে দ্বীন তা নয়। বরং ব্যক্তিপর্যায়ে, পারিবারিক পর্যায়ে, সামাজিক পর্যায়ে, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠাই হচ্ছে ইক্বামতে দ্বীন। এভাবেই ইসলামকে চূড়ান্ত বিজয়ী করাই হলো ইক্বামতে দ্বীন। আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন, ‘তিনি মহান আল্লাহ তায়ালা, যিনি (তোমাদের কাছে) সুষ্পষ্ট হেদায়াত ও সঠিক জীবন বিধান সহকারে তাঁর রাসূল (সাঃ) কে পাঠিয়েছেন, যেন তিনি এই (বিধান)কে (দুনিয়ার) সব কয়টি বিধানের উপর বিজয়ী করে দিতে পারেন, মোশরেকরা এ (বিজয়কে) যত খারাপই মনে করুক না কেনো’- সূরা আত তাওবা-৩১। অতএব রাষ্ট্রযন্ত্রের ইসলামায়ন ছাড়া কোন ইক্বামতে দ্বীন হয় না, হতে পারে না।

লেখক: সভাপতি-রাউজান ক্লাব, সিনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতাল

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাম্প্রদায়িক বর্বরতার অবসান চাই
পরবর্তী নিবন্ধজুম্‌’আর খুতবা