আড়াই হাজার কোটি টাকার তৈরি পোশাক আটকা

ক্রেতারা অর্ডার দিয়েও নিচ্ছেন না অর্ডার কমেছে ৩০ শতাংশ ।। সংকটে চট্টগ্রামের ৫০ গার্মেন্টস কারখানা নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুতের দাবি

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৩১ অক্টোবর, ২০২২ at ৬:০৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের ৫০টির বেশি গার্মেন্টস কারখানার প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার তৈরি পোশাক স্টকলট হয়েছে। প্রায় প্রতিটি কারখানার গুদামে আটকা পড়েছে বিপুল পরিমাণ তৈরি পোশাক। বিদেশি ক্রেতারা অর্ডার দেওয়ার পরও অভ্যন্তরীণ বাজারে ধস নামায় নিচ্ছেন না এসব পণ্য। একই সাথে বিদেশে পোশাকের বিক্রি কমে যাওয়ায় প্রতিটি কারখানায় কোটি কোটি টাকার অর্ডার কমে গেছে। এতে করে চট্টগ্রামের গার্মেন্টস মালিকরা সংকটে পড়েছেন।

সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানের উদ্ধৃতি দিয়ে একাধিক গার্মেন্টস মালিক বলেন, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অন্তত ত্রিশ শতাংশ অর্ডার কমে গেছে। শত শত কোটি টাকার পণ্য স্টকলট হওয়া কিংবা অর্ডার বাতিল হওয়ার অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মাঝে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট কারখানাগুলোকে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। বিজিএমইএর দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, দেশের গার্মেন্টস সেক্টরে দুর্দিন দেখা দিয়েছে। করোনাকালের ভয়াবহ পরিস্থিতির চেয়ে বর্তমান সংকট প্রকট মন্তব্য করে একাধিক গার্মেন্টস মালিক বলেছেন, পোশাক তৈরি করে রপ্তানি করা যাচ্ছে না। শিপমেন্টের আগে বায়ার বলছেন পোশাক নিতে পারবেন না। বাজারে ক্রেতা নেই। এতে করে শত শত কোটি টাকার পোশাক তৈরি করেও ক্রেতার অনাগ্রহে রপ্তানি করা যাচ্ছে না। চট্টগ্রামে রপ্তানির সাথে জড়িত গার্মেন্টসগুলোতে প্রচুর পণ্য স্টকলট হয়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার তৈরি পোশাক স্টকলট হয়েছে বলে বিজিএমইএ সূত্র জানিয়েছে।

ঢাকার অবস্থাও শোচনীয়। একাধিক গার্মেন্টস মালিক নিজেদের দুরবস্থার কথা বলতে গিয়ে গতকাল আজাদীকে বলেন, প্রতিটি গার্মেন্টসের গুদামে প্রচুর রপ্তানিযোগ্য পণ্য আটকা পড়েছে। ক্রেতারা এসব পণ্য নিচ্ছেন না। কবে নেবেন তা-ও ঠিক নেই। বাজার ঠিক হলে নেবেন বলে আশ্বাস দিলেও কবে বাজার ঠিক হবে বা আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। দেশের ছয় হাজারেরও বেশি গার্মেন্টসের মধ্যে নানা কারণে ইতোমধ্যে তিন হাজারের মতো বন্ধ হয়ে গেছে। যে তিন হাজার চালু রয়েছে সেগুলোও বর্তমানে অর্ডার বাতিল এবং স্টকলটের সমস্যায় পড়েছে। সারা দেশের এক হাজারের বেশি কারখানায় স্টকলটের ধাক্কা লেগেছে বলে বিজিএমইএর নিকট জানানো হয়েছে।

চট্টগ্রামের অবস্থা খারাপ মন্তব্য করে একজন গার্মেন্টস মালিক গতকাল আজাদীকে জানান, চট্টগ্রামে মোট গার্মেন্টসের সংখ্যা ছিল ৬৮৯টি। কিন্তু দীর্ঘদিনের নানা সংকটে অধিকাংশ গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে ৪শর মতো গার্মেন্টস চললেও রপ্তানির সাথে জড়িত গার্মেন্টসের সংখ্যা দেড়শর মতো। বাকিগুলো সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ করে। বর্তমানে যে দেড়শ গার্মেন্টস রপ্তানির সাথে জড়িত তার প্রায় প্রতিটির গুদামেই স্টকলটের পণ্য আটকা পড়েছে।

বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম নিজের কারখানায় অন্তত ৫০ লাখ ডলারের পণ্য স্টকলট হওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, পরিস্থিতি খুবই খারাপ। বায়াররা পণ্য নিচ্ছেন না। ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে ক্রেতার সংখ্যা কমে গেছে। খুব প্রয়োজন না হলে মানুষ পোশাক কিনছে না। এতে করে বিক্রি সাংঘাতিকভাবে কমে গেছে। ফলে ক্রেতারা পোশাক নিতে রাজি হচ্ছেন না। তাছাড়া এখন যেসব পোশাক তৈরি করা হয়েছিল সেগুলো সামারের পোশাক। শীত চলে আসছে। সামারের এসব পোশাকের বাজার এমনিতেই কমে যাবে। ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামের পঞ্চাশটির বেশি কারখানায় অন্তত আড়াই হাজার কোটি টাকার পণ্য স্টকলট হয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, একই সাথে হাজার হাজার কোটি টাকার অর্ডার কমে গেছে। মাস দুয়েক আগেও যেভাবে অর্ডার আসছিল এখন তার ত্রিশ থেকে চল্লিশ শতাংশ কমে গেছে। গার্মেন্টস সেক্টর দুর্দিন অতিক্রম করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ করে তুলেছে গ্যাস এবং বিদ্যুৎ সংকট। বর্তমানে যা অর্ডার আছে সেসব পণ্যও ঠিকভাবে তৈরি করা যাচ্ছে না। বিদেশে যদি এই ম্যাসেজ যায় তাহলে তা সংকট সৃষ্টি করবে। বাড়তি দামে হলেও গার্মেন্টস সেক্টরে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুতের সংস্থান করার জন্য সরকারের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।

অপরদিকে রাজনৈতিক কারণে নতুন শঙ্কা তৈরি হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গার্মেন্টস খাত রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার শিকার হলে তা দেশের জন্য ক্ষতিকর হবে। বৈদেশিক মুদ্রার আকাল ঘুচাতে এই খাতে নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন জরুরি। দেশের কর্মসংস্থান এবং রপ্তানিখাতের বিকাশে গার্মেন্টস সেক্টরকে সম্মিলিতভাবে লালন করার জন্য সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজোট সরকারের নির্যাতন অনেকে ভুলে গেছে : শেখ হাসিনা
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬