আশালতা সেন : অগ্নিযুগের নারী বিপ্লবী

| সোমবার , ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ

আশালতা সেন (১৮৯৪১৯৮৬)। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সক্রিয় কর্মী, স্বাধীনতা সংগ্রামী, কবি ও সমাজসেবক। তৎকালীন পূর্ববাংলার নারীদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা জাগিয়ে তুলতে তিনি অগ্রগণ্য ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি ১৮৯৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালিতে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা বগলামোহন দাশগুপ্ত ছিলেন নোয়াখালী জজ কোর্টের আইনজীবী। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল বিক্রমপুরের বিদগাঁও গ্রামে। অনুকূল পারিবারিক পরিবেশ ও সমকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি তাঁকে কাব্যপ্রেমী করে তোলে, করে তোলে স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন কার্যকররূপ নিলে বিক্রমপুর অঞ্চলে স্বদেশী প্রচারের জন্য নবশশী দেবী, সুশীলা সেন, কমলকামিনী গুপ্তা প্রমুখ ‘মহিলা সমিতি’, ‘স্বদেশী ভাণ্ডার’ ইত্যাদি গঠন করেন। এ সময় নবশশী দেবী বিলাতি কাপড় বর্জনের সংকল্পপত্রে দৌহিত্রী আশালতাকে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে স্বদেশীব্রতে দীক্ষিত করেন। মাত্র এগারো বছর বয়সে আশালতা গ্রাম্য মহিলাদের স্বাক্ষর সংগ্রহকাজ অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন। এভাবেই শুরু হয় তাঁর সংগ্রামী জীবন। আশালতার বয়স যখন মাত্র দশ তখন তাঁর লেখা জাতীয়তামূলক একটি কবিতা ছাপা হয় মাসিক ‘অন্তপুর’ পত্রিকায়। নানারকম বইপত্র পড়ে আর গান্ধীজীর স্বদেশী আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ হয়ে আশালতা নিজেও তাতে অংশ নেন। তাঁর বিভিন্ন রচনাকর্মের মধ্যে রয়েছে বাল্মীকির মূল রামায়ণ থেকে ‘যুদ্ধকাণ্ড’ অংশটি বাংলা কবিতার মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত আকারে অনুবাদ, ‘জনৈকা গৃহবধূর ডায়েরী’, ‘বিদ্যুৎ’, ‘আত্মজীবনী’ এবং ‘ছড়া’। এছাড়া আজীবন তিনি যুক্ত ছিলেন সমাজসেবামূলক কাজে। শিল্পাশ্রম, গেণ্ডারিয়া মহিলা সমিতি, কল্যাণ কুটির আশ্রম, জুড়ান শিক্ষা মন্দির, সত্যাগ্রহী সেবাদল, নশঙ্কর মহিলা সমিতি, কংগ্রেস মহিলা সংঘ, নারীকর্মী শিক্ষাকেন্দ্র প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান স্থাপনের মাধ্যমে আশালতা সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে নারীর অবস্থান সুদৃঢ় করতে সচেষ্ট ছিলেন। বিভিন্নধর্মী এইসব সংগঠনের কর্মীরা নানা পন্থায় নিজেদের নিবেদন করেছিলেন সমাজসেবামূলক কাজে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে। এরা কখনো গ্রামে গ্রামে নিজ হাতে খদ্দরের কাপড় বিক্রি করেছেন, কখনো গ্রামের পর গ্রাম শত শত সমবেত জনতার মধ্যে বক্তৃতা দিয়েছেন। এর ফলে তাঁদেরকে ব্রিটিশ সরকারের রোষাণলে পড়তে হয়েছে। ‘ভারতছাড়ো’ আন্দোলনে যোগ দিয়ে আশালতা সেন কয়েক মাস কারাভোগও করেন। সামপ্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় হিন্দুমুসলমান ঐক্যের জন্যেও কাজ করেছেন তিনি। ১৯৭২ সালে আশালতা সেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের আমন্ত্রণে বাংলাদেশে এসেছিলেন। অগ্নিযুগের এই বিপ্লবী নারী ১৯৮৬ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধইটভাটার কালো ধোঁয়া থেকে মুক্তি চাই