আরো ২৩০টি আসন বাড়ল নগরীর ৬ সরকারি কলেজে

একাদশে ভর্তি আবেদন শুরু কাল

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৭ জানুয়ারি, ২০২২ at ৪:৫৪ পূর্বাহ্ণ

একাদশে ভর্তিতে নগরীর ৬টি সরকারি কলেজে এবার আরো ২৩০টি আসন বাড়ানো হয়েছে। একাদশে আসন সমন্বয়ের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে এসব আসন বাড়িয়েছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড। বোর্ডের এ সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে গতবছরের তুলনায় এবছর অতিরিক্ত ২৩০ জন শিক্ষার্থী প্রথম সারির কলেজ হিসেবে পরিচিত এসব সরকারি কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবে। শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হক আসন বাড়ানোর এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। কলেজ পরিদর্শক বলছেন- গতবারের তুলনায় এবার বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী পাস করেছে। তাই সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে বেশ কিছু কলেজে আসন সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অবকাঠামোগত সুবিধা বিদ্যমান থাকা নগরীর ৬টি সরকারি কলেজে আসন সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এরপরও সরকারি কলেজগুলোতে চাপ পড়বে বলে মনে করেন তিনি।
শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা যায়, আসন বৃদ্ধি পাওয়া কলেজগুলোর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি কলেজ, সরকারি সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ, বাকলিয়া সরকারি কলেজ ও চট্টগ্রাম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। কলেজগুলোর তিনটি শাখায় মোট ২৩০টি আসন বেড়েছে এবার। এর মধ্যে বিজ্ঞানে ১১৫টি, মানবিকে ৭৫টি এবং ব্যবসায় শিক্ষায় ৪০টি আসন বেড়েছে।
কোন কলেজে কত আসন বাড়ল
চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ : চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের বিজ্ঞান শাখায় ৬৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পায় গতবছর। এবার আরো ১০টি আসন বাড়ানো হয়েছে। এতে করে ঐতিহ্যবাহী এই কলেজটির বিজ্ঞান শাখায় এবছর থেকে মোট ৬৬০ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবে। অবশ্য কলেজটির মানবিক শাখায় গতবারের ন্যায় এবারও ৩৮০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবে।
হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ : সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের বিজ্ঞান শাখায় গতবার আসন ছিল ৬৫০টি। এবার আরো ১০টি আসন যোগ হয়েছে। সে সুবাদে এবছর থেকে ৬৬০ জন শিক্ষার্থী কলেজটির বিজ্ঞান শাখায় ভর্তির সুযোগ পাবে। তবে কলেজটির মানবিক শাখায় গতবারের ৪৬০টি এবং ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ৬১৫টি আসন এবারও অপরিবর্তিত থাকছে।
সরকারি সিটি কলেজ : সরকারি সিটি কলেজের বিজ্ঞান শাখায় গতবছর আসন সংখ্যা ছিল ৬৫০টি। এবার এ শাখায় আরো ১০টি আসন বাড়িয়ে ৬৬০টি করা হয়েছে। আর মানবিকের বৈকালিক শাখায় ৩৩০টি আসনের সাথে আরো ২০টি যুক্ত করা হয়েছে এবার। যদিও মানবিকের দিবা শাখায় গতবারের ৩৮০টি আসন অপরিবর্তিত থাকছে। সবমিলিয়ে মানবিকে ৭৩০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবে এবছর। অন্যদিকে, কলেজটির ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় গতবছরের ৭৬০টি আসন (দিবায় ৩৮০ ও বৈকালিকে ৩৮০টি করে) অপরিবর্তিত রয়েছে।
চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ : চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজের তিন শাখাতেই আসন বাড়ানো হয়েছে এবার। তিন শাখাতে মোট ৬৫টি আসন বেড়েছে। কলেজটির বিজ্ঞান শাখায় গতবারের ৪৯০ আসনের সাথে আরো ১০টি যুক্ত করে এবার ৫০০টি করা হয়েছে। মানবিক শাখায় গতবার আসন ছিল ৩৭৫টি। এবার ২৫টি বৃদ্ধি করে ৪০০টি আসনে ছাত্রী ভর্তির সুযোগ পাবে। এছাড়া ব্যবসায় শিক্ষায় গতবারের ৪৭০টি আসনের সাথে আরো ৩০টি আসন যুক্ত করা হয়েছে এবার। বাড়ানোর পর কলেজটির আসন সংখ্যা দাঁড়িয়েছে বিজ্ঞানে ৫০০, ব্যবসায় শিক্ষায় ৫০০ এবং মানবিকে ৪০০টি। সবমিলিয়ে কলেজটিতে ১ হাজার ৪০০ জন ছাত্রী ভর্তির সুযোগ পাবে এবছর।
বাকলিয়া সরকারি কলেজ : চট্টগ্রাম গভর্মেন্ট কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউটকে বাকলিয়া সরকারি কলেজে রূপান্তর করা হয় ২০১৬ সালে। এর মাধ্যমে নগরীতে সরকারি কলেজের সংখ্যা আরো একটি বৃদ্ধি পায়। সরকারি কলেজ হিসেবে রূপান্তরের পর কলেজটির তিন শাখায় ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। গতবছর (২০২০ সালে) কলেজটির বিজ্ঞান শাখায় ভর্তির সুযোগ পায় ৩৮০ জন। তবে এবার আরো ৭০টি আসন বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে এবছর থেকে কলেজটির বিজ্ঞান শাখায় ৪৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবে। যদিও গতবার কলেজটির মানবিক শাখায় ৩৮০টি ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার ৫২৫টি আসন এবারও অপরিবর্তিত থাকছে।
চট্টগ্রাম মডেল স্কুল এন্ড কলেজ : সম্প্রতি সরকারিকরণকৃত চট্টগ্রাম মডেল স্কুল এন্ড কলেজের একাদশ শ্রেণিতে মোট ৪৫টি আসন বাড়ানো হয়েছে এবার। এর মধ্যে বিজ্ঞানে ৫টি, মানবিকে ৩০টি এবং ব্যবসায় শিক্ষায় আরো ১০টি আসন বাড়ানো হয়েছে। গতবছর কলেজটির তিন শাখায় আসন ছিল ৭৭৫টি। এবার ৪৫টি বেড়ে মোট আসন সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮২০টি। গতবার কলেজটির বিজ্ঞানে ৩৭৫ আসনের সাথে এবার আরো ৫টি যুক্ত করা হয়েছে। ব্যবসায় শিক্ষায় গতবারের ২৫০ আসনের সাথে যুক্ত করা হয়েছে ১০টি। আর মানবিক শাখায় গতবারের ১৫০ আসনের সাথে ৩০টি আসন যুক্ত করা হয়েছে এবার।
তবে সরকারি কমার্স কলেজ এবং সরকারি কলজিয়েট স্কুল এন্ড কলেজে এবার কোনো আসন বাড়েনি। কলজিয়েট স্কুল এন্ড কলেজে বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির এ দুটি শাখায় ৯০ জন করে মোট ১৮০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ রয়েছে। আর ব্যবসায় শিক্ষায় বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত সরকারি কমার্স কলেজে গতবারের ন্যায় এবারও ৮৫০টি আসনে শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবে।
সবমিলিয়ে মহানগরীর ৮টি সরকারি কলেজে গতবার মোট আসন ছিল ৯ হাজার ৩০০টি। এর মধ্যে বিজ্ঞান শাখায় ৩ হাজার ২৮৫, মানবিক শাখায় ২ হাজার ৪৫৫ এবং ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ৩ হাজার ৫৬০ আসনে শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পেয়েছিল। তবে ৬ সরকারি কলেজে ২৩০টি আসন বাড়ায় নগরের সরকারি কলেজগুলোতে এবার মোট আসন সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৫৩০টি। এর মধ্যে বিজ্ঞানে ৩ হাজার ৪০০, মানবিকে ২ হাজার ৫৩০ এবং ব্যবসায় শিক্ষায় ৩ হাজার ৬০০ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে এবার।
এদিকে, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে শুধু জিপিএ-৫ ধারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১২ হাজার ৭৯১ জন। এর মধ্যে বিজ্ঞানে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১ হাজার ২৯১ জন (সবচেয়ে বেশি)। মানবিকে ১৫৬ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ১ হাজার ৩৪৪ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। বিশেষ করে বিজ্ঞান শাখায় আসনের তুলনায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা তিনগুনেরও বেশি। এতে করে ভালো ফল করেও ‘ভালো’ কলেজে ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের।
উল্লেখ্য, আগামীকাল ৮ জানুয়ারি থেকে একাদশে ভর্তিতে অনলাইন আবেদন শুরু হচ্ছে। চলবে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। এবার কেবল অনলাইনেই আবেদন করা যাবে। একাদশে ভর্তি সংক্রান্ত ওয়েবসাইট (িি.িীরপষধংংধফসরংংরড়হ.মড়া.নফ) এ আবেদন করতে হবে শিক্ষার্থীদের। অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৫টি এবং সর্বোচ্চ ১০টি কলেজের পছন্দক্রম দিয়ে আবেদন করা যাবে। আবেদন ফি বাবদ ১৫০ টাকা দিতে হবে প্রতি শিক্ষার্থীকে।
নীতিমালা অনুযায়ী, ৮ জানুয়ারি থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন নেওয়া হবে। এসএসসির ফল পুনঃনিরীক্ষণে আবেদনকারী শিক্ষার্থীদেরও এই সময়ে আবেদন করতে হবে। কেবল পুনঃনিরীক্ষায় ফল পরিবর্তন হওয়া শিক্ষার্থীরা নতুন করে আবেদনের সুযোগ পাবে ২২ ও ২৩ জানুয়ারি। তবে আবেদনের পর থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত আবেদনে পছন্দক্রম পরিবর্তনের সুযোগ পাবে শিক্ষার্থীরা। আর প্রথম দফায় নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে ২৯ জানুয়ারি। ৩০ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিশ্চায়ন করতে হবে। ভর্তি প্রক্রিয়া শেষে ২ মার্চ থেকে একাদশে ক্লাস শুরু হবে।
তবে আবেদনের ক্ষেত্রে কলেজের পড়ালেখার মান-পরিবেশ, বাসা থেকে দূরত্ব এবং মাসিক বেতনসহ যাবতীয় খরচের বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে কলেজের পছন্দক্রম ঠিক করার পরামর্শ দিয়েছেন বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হক। দোকানের কম্পিউটার অপাটেরদের ইচ্ছে অনুযায়ী কলেজের পছন্দক্রম না দিতেও শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এছাড়াও কোটার স্বপক্ষে যথাযথ কাগজপত্র থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হলেই কেবল কোটায় আবেদন করার পরামর্শ দিয়ে কলেজ পরিদর্শক বলেন, দেখা গেলো, কেউ একজন কোটায় আবেদন করেছে। আবেদন করায় কোটায় ভর্তির জন্য ওই শিক্ষার্থী মনোনীত হলেও যথাযথ কাগজপত্র দেখাতে না পারলে কলেজ কর্তৃপক্ষ ভর্তি করাবে না। আবার কোটায় আবেদন করায় মেধা তালিকায়ও তার নাম আসবে না। এতে করে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর ভর্তি ঘিরে সংশয় দেখা দিবে। তাই আবেদনের ক্ষেত্রে যাবতীয় বিষয় যাচাই-বাছাই করে তবেই আবেদন করতে হবে। এছাড়া সুযোগ থাকায় সর্বোচ্চ দশটি কলেজ পছন্দক্রম দিয়ে আবেদন করার পরামর্শ দিয়েছেন কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হক। অনেক শিক্ষার্থী অতি আত্মবিশ্বাসের জোরে মাত্র কয়েকটি বা ৫টি কলেজ পছন্দক্রম দিয়ে আবেদন করে। কিন্তু দেখা গেল, তার প্রাপ্ত নম্বরে ওই ৫টি কলেজের কোনটিতেই সে ভর্তির সুযোগ পেল না। আর পছন্দক্রমে আর কলেজ না থাকায় পরবর্তী তালিকাতেও তার আসার সুযোগ থাকে না। এতে করে জিপিএ-৫ পেয়েও কিছু শিক্ষার্থীর ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। তবে সুযোগ থাকায় সর্বোচ্চ দশটি কলেজ পছন্দক্রম দিয়ে আবেদন করলে ভর্তি ঘিরে এ ধরনের অনিশ্চয়তা কমে যায়। তাই সব শিক্ষার্থীরই সর্বোচ্চ দশটি কলেজে পছন্দক্রম দিয়ে আবেদন করার জোরালো পরামর্শ দিয়েছেন চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্ত্রীকে হত্যার পর অপহরণ নাটক!
পরবর্তী নিবন্ধস্ত্রী ও দুই ভাইসহ আসলাম চৌধুরীর বিচার শুরু