আমেরিকা-কানাডার পথে

এম. সোহেল খান (টিপু) | রবিবার , ১০ জানুয়ারি, ২০২১ at ৫:১০ পূর্বাহ্ণ

(পুর্ব প্রকাশিতের পর)
পরের দিন উনার বাসায় সকালের নাস্তা সেরে লিটলরক শহর ঘোরার জন্য বের হলাম আমরা। বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে গেলাম, প্রাক্তন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ক্লিনটন প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরী এবং মিউজিয়াম দেখতে। এই মিউজিয়ামে ক্লিনটনের ব্যবহৃত বিভিন্ন আসবাবপত্র, গাড়ী ও হোয়াইট হাউজে থাকাকালীন অনেক ছবি দেখলাম। ঐ মিউজিয়ামে ৫০ ডলার দিয়ে আমেরিকান প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসে ছবি তোলারও ব্যবস্থা আছে। প্রেসিডেন্সিয়াল চেয়ার-টেবিলে বসে ছবি তোলার সুযোগটা হাত ছাড়া করলাম না। ওখান থেকে কিছু সুভেনিয়ার কিনে একটা চাইনিজ রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবারের জন্য গেলাম। ঐ রেস্টুরেন্টে জন প্রতি মাত্র ৫ ডলার দিয়ে তৃপ্তি সহকারে প্রায় ৬০ পদের বুফে খাবার খেলাম। আমাদের দেশের তুলনায় বেশ সস্তাই মনে হল। তারপর গেলাম গভর্নর হাউজ দেখতে। ওখানে কর্মরত একজন মহিলা আমার দাদার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। তাই উনি আমাদেরকে সব জায়গায় ভাল করে ঘুরে দেখালেন। পরের দিন লিটলরকে সকাল বেলা ঘুরে দুপুরের খাবারের পর এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে নর্থ-ওয়েস্ট আরকানসাসের দিকে রওনা দিলাম। আবার প্রায় ৪ ঘন্টা ড্রাইভ করে প্রফেসর হারুন সাহেব আমাকে নর্থ-ওয়েস্ট আরকানসাস এয়ারপোর্টে পৌছে দিলেন। নর্থ-ওয়েস্ট আরকানসাস্‌ এয়ারপোর্ট থেকে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সে টেঙাস হয়ে লস্‌ এঞ্জেলস্‌ (এল.এ) পৌঁছালাম। এল.এ এয়ারপোর্টে ঐসময় একসাথে অতিরিক্ত বিমান আসার কারণে এয়ার ট্রাফিক জ্যামের কারণে আমাদের প্লেন অবতরণ করতে এবং রানওয়ে থেকে টার্মিনাল পর্যন্ত আসতে অনেক সময় লাগল। টার্মিনাল থেকে বের হয়ে আসার পরে দেখলাম আমার এল.এ এর হোস্ট আমাদের এক পারিবারিক বন্ধু ও বাংলাদেশ মিশনের কর্মকর্তা সহকর্মী সহ আমার জন্য অপেক্ষা করছেন। তাই আর দেরী না করে গাড়ীতে উঠলাম। তিনি আমার এল.এ এর যাত্রা বিরতির সময় স্বল্পতার কারণে সরাসরি উনার বাসায় না নিয়ে আমাকে ইউনিভার্সেল স্টুডিওতে নামিয়ে দিয়ে অফিসে চলে গেলেন এবং ঘোরা শেষে বিকেলে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় আমাকে উনার জন্য অপেক্ষা করতে বললেন। টিকেট নিয়ে ইউনিভার্সেল স্টুডিওতে ঢুকে আমার চোখ ছানাবড়া।এ এক স্বপ্নের জগৎ। আমরা হলিউডের যেই ছবিগুলো দেখি ঐগুলি বেশিরভাগই ইউনিভার্সেল স্টুডিওতে তৈরি হয়। দূরের থেকে পাহাড়ের গায়ে বড় করে হলিউড লেখা চোখে পড়লো। আমরা ছবিতে যে বন্যা, ভূমিকম্প, বিমান-জাহাজ দুর্ঘটনা দেখি ঐগুলি স্পেশাল এফেক্টের মাধ্যমে স্টুডিওতেই বানানো হয়। যা দেখলে মনে হয় বাস্তব। ঐখানে একটা ৩উ ছবি দেখলাম। ইউনিভার্সেল স্টুডিও একদিনে পুরা ঘুরে দেখা সম্ভব নয়। তাই সময় স্বল্পতার কারণে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আকর্ষণীয় বিষয়গুলো দেখে বেরিয়ে আসলাম এবং নির্দিষ্ট স্থানে আমাদের ঐ পারিবারিক বন্ধুর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম এবং উনিও নির্দিষ্ট সময়ে গাড়ী নিয়ে উপস্থিত হলেন, আমাকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। ঐদিন উনার বাসায় থেকে পরের দিন লস্‌ এন্‌জেলস শহর ও প্রশান্ত মহাসাগর উপকূলের সমুদ্র সৈকত ঘুরলাম। লস্‌ এন্‌জেলস্‌ আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গ রাজ্যের একটি প্রসিদ্ধ শহর ও পর্যটন কেন্দ্র। যেখানে হলিউডের অনেক বিখ্যাত তারকার বসবাস। পরের দিন আমাদের ঐ পারিবারিক বন্ধু ও উনার সহকর্মীসহ আমেরিকার আর এক স্বপ্নের শহর লস্‌ ভেগাস এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম প্রায় ৪ ঘন্টা পর সড়কযোগে লস্‌ ভেগাস শহরের কাছে এসে পৌঁছালাম। আলো ঝলমল লস্‌ ভেগাস শহর অনেক দূর থেকে দেখা যাচ্ছিল। আমরা লস্‌ ভেগাসে পৌঁছালাম রাত নয়টার দিকে। ডিনার শেষে লস্‌ ভেগাস শহর ঘুরে দেখলাম। লস্‌ ভেগাস্‌ শহরটি মূলত ক্যাসিনো এবং নাইট ক্লাব এর জন্য প্রসিদ্ধ। আমাদের যেহেতু ঐগুলির প্রতি কোন আকর্ষণ নাই তাই শহরটি ঘুরে আবার লস্‌ এনজেল্‌স এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। পরের দিন এল.এ. থেকে ডেলটা এয়ারলাইন্স যোগে নর্থ ক্যারোলিনা হয়ে নায়াগ্রা জলপ্রপাত এর শহর বাফেলো এসে পৌঁছালাম। বাফেলোতে আমার পরিচিত কেউ নাই। শুধু নায়াগ্রা জলপ্রপাত দেখার জন্য বাফেলোতে আসা। তাই এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে আগে থেকে বুক করা হলিডে ইন নামক হোটেল থেকে আমাকে রিসিভ করার জন্য যে গাড়ি পাঠিয়েছে তাতে উঠলাম। গাড়ির ড্রাইভার কাম রিসিপশনিস্ট একজন সুন্দরী আমেরিকান তরুণী, পরে জানলাম ও একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী এবং পার্ট টাইম এই কাজ করে। হোটেল, এয়ারপোর্টের খুব কাছেই তাই তাড়াতাড়ি পৌঁছে গেলাম। বাফেলোতে মাত্র একদিন থাকব তাই তাড়াতাড়ি হোটেলে চেক ইন করে ব্যাগ রেখে টেঙি নিয়ে নায়াগ্রা জলপ্রপাতের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। নায়াগ্রা নদীর পাশ দিয়ে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে করতে ৩০ মিনিটের মধ্যে আমেরিকান প্রান্তে নায়াগ্রা জলপ্রপাত এর কাছে এসে পৌঁছালাম। প্রকৃতির কি অপরূপ সৃষ্টি যা না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। লক্ষ লক্ষ কিউসেক পানি এসে তা অপরূপ ছন্দে পাহাড়ের উপর থেকে অনেক নীচে পড়ছে। অনেক দূর থেকেও পানির কনা আকাশে উড়ে কুয়াশার মত সৃষ্টি হয় এবং কাছে গেলে শরীর ভিজে যায়। আমি কিছু ফটো তুলে এবং কাছাকাছি একটা গিফট সপ থেকে কিছু সুভেনিয়ার কিনে আশেপাশে ঘুরে হোটেলে ফিরে আসলাম। হোটেলে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে পুনরায় হোটেলের গাড়ি নিয়ে বাফেলো শহর ঘুরে দেখলাম। ছোট পরিচ্ছন্ন শহর, লোকজনও খুব কম এবং বেশির ভাগই পর্যটক মনে হল। আমি একবারেই বাহিরে রাতের খাবার সেরে হোটেলে ফিরে আসলাম। ভোরে নিউইয়র্ক এর ফ্লাইট ধরার জন্য উঠতে হবে, তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লাম। ভোরে উঠে হোটেলের গাড়িতে এয়ারপোর্ট পৌঁছে চেক ইন করে সকালের নাস্তা শেষে কিছুক্ষণ পর ফ্লাইটে উঠলাম। বাফেলো থেকে নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডী (ঔঋক) বিমান বন্দরে পৌঁছতে লাগল মাত্র ১ ঘন্টা। ঔঋক বিশ্বের ব্যস্ততম বিমান বন্দর গুলির মধ্যে একটি। প্রচুর বিমান যাত্রী। আমি একটা টেঙি নিয়ে ম্যানহাটন এলাকার একটি হোটেলে আসলাম। হোটেলে চেক ইন করে আমার ফুফাত বোন নিউইয়র্কে কর্মরত ড. শিউলি মাহমুদকে (বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ মাহমুদুল হক চৌধুরীর কন্যা) ফোন করলাম এবং ঘন্টা খানেকের মধ্যে ঘোরার জন্য হোটেলে এসে আমাকে নিয়ে বের হল। প্রথমে আমরা বাঙালি পাড়া হিসেবে পরিচিত জেকশন হাইটে একটা রেষ্টুরেন্টে দুপুরের খাবার জন্য গেলাম। শিউলি অনেক রকম খাবারের অর্ডার দিল। যা আমাদের দুইজনের পক্ষে খাওয়া প্রায় অসম্ভব। (চলবে)

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅনলাইনে কচিকাঁচারা
পরবর্তী নিবন্ধদেশ হতে দেশান্তরে