আমাদের শেকড়

মুসলেহ্‌উদ্দিন মুহম্মদ বদরুল | বুধবার , ২৭ জানুয়ারি, ২০২১ at ৭:১১ পূর্বাহ্ণ

আমরা গ্রামে বড় হয়েছি। গ্রামের স্কুলে পড়ালেখা করে মাধ্যমিক পাঠ চুকিয়েছি। পাক আমলে এদেশের শতকরা ৯০ জন মানুষের বসবাস ছিল গ্রামে। স্বনামধন্য কবি-সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক, রাজনীতিবিদ সকলেই গ্রামের মাটির কাদা-ধূলি গায়ে মেখেই স্ব স্ব স্থানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। টুঙ্গীপাড়া গাঁয়ের ছেলে বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে হয়তো বাংলাদেশের মানুষ আজীবন পরাধীনতার গ্লানি বয়ে বেড়াত। আমাদের সময়ে স্কুলে বাংলা ২য় পত্রের পরীক্ষায় একটি রচনা কমন থাকত ‘আমাদের গ্রাম’। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে প্রায় সব কবি-সাহিত্যিকের কবিতা ও রচনার একটি বিরাট অংশ জুড়ে স্থান পেয়েছে এই গ্রাম। গ্রাম-বাংলার রূপ এদেশের প্রকৃত রূপ । এদেশের মাঠে মাঠে সোনার ফসল ফলে। গ্রামে গ্রামে আম-কাঁঠাল তাল-নারকেল সুপারি গাছের সারি। যেদিকে চোখ যায় কেবল অন্তহীন সবুজের সমারোহ। শ্যামল বৃক্ষের শোভা আর ছায়াস্নিগ্ধ পল্লীর কুটিরগুলো যেন শীতল পরশ দিয়ে ভালবেসে সবাইকে আপন করে নেয়। রাখালের গরু চরানো আর মোহন বাঁশির সুর উদাস দুপুরকে ভরিয়ে দেয়। দিঘির বিস্তীর্ণ জলরাশি আর আকাশের নীলে যেন বন্ধুত্বের মেলা বসে। তবে, গ্রাম সম্পর্কে কবি-সাহিত্যিকের বর্ণিত রূপ এখন আর নেই। গ্রামেও এখন শহরের ছোঁয়া লেগেছে। এরপরেও গ্রাম গ্রামই থাকবে। গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করে বাংলার কবি, লেখক, বাউল ও চিত্রকরদের। কবি নজরুল গান লিখেছেন, এ কি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লী-জননী/ ফুলে ও ফসলে কাদা মাটি জলে ঝলমল করে লাবনি। কবি বন্দে আলী মিয়া তাঁর ‘আমাদের গ্রাম’ কবিতায় খুব সুন্দরভাবে গ্রামকে চিত্রায়িত করেছেন, ‘আমাদের ছোট গাঁয়ে ছোট ছোট ঘর, /থাকি সেথা সবে মিলে নাহি কেহ পর, /পাড়ার সকল ছেলে মোরা ভাই ভাই /এক সাথে খেলি আর পাঠশালে যাই / আমাদের ছোট গ্রাম মায়ের সমান, / আলো দিয়ে, বায়ু দিয়ে বাঁচাইছে প্রাণ / মাঠ ভরা ধান তার জল ভরা দিঘি, / চাঁদের কিরণ লেগে করে ঝিকিমিকি / আম গাছ, জাম গাছ, বাঁশ ঝাড় যেন, / মিলে মিশে আছে ওরা আত্মীয় হেন / সকালে সোনার রবি পুব দিকে উঠে, / পাখি ডাকে, বায়ু বয়, নানা ফুল ফুটে।” গ্রাম হচ্ছে আমাদের শেকড়, আমাদের অস্তিত্ব। শেকড়-অস্তিত্বকে অস্বীকার করা যাবে না। যে যেখানেই থাকি না কেন শেষ ঠিকানা গ্রামের মাটি। এ মাটিতেই চির নিদ্রায় শায়িত হতে হবে। তাই, গ্রাম ও গ্রামের মানুষকে ভালবাসতে হবে। তাঁদের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নায় নিজেকেও সম্পৃক্ত রাখতে হবে। সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশ নিয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতা পালন করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশূন্যতাপ্রাপ্তি
পরবর্তী নিবন্ধখোলসের আবরণে